শাফিন আহমেদের মৃত্যু, যা বললেন শোকস্তব্ধ বন্ধু-সহকর্মীরা

ছবি: সংগৃহীত
বিনোদন প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৫ জুলাই ২০২৪ | ১৭:১৮ | আপডেট: ২৫ জুলাই ২০২৪ | ১৯:৫৮
‘চাঁদ তারা সূর্য’, ‘জ্বালা জ্বালা’, ‘ফিরিয়ে দাও’, ‘ফিরে এলে না’, ‘আজ জন্মদিন তোমার’সহ অসংখ্য জনপ্রিয় গানের শিল্পী ও ব্যান্ড তারকা শাফিন আহমেদ আর নেই। আজ বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) বাংলাদেশ সময় সকাল ৬টা ৫০ মিনিটে যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ার সেন্তরা হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তার বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর। তার মৃত্যুর খবরে বাংলাদেশের সংগীত অঙ্গনে নেমে আসে শোকের ছায়া। নন্দিত এই শিল্পীর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন তার বন্ধু-সহকর্মীরা।
নগরবাউল জেমস
সকালে নিজের ভ্যারিফাইড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে শাফিন আহমেদের গানের কয়েকটি লাইন ব্যবহার করে তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন জেমস। লিখেছেন, ‘চাঁদ তারা সূর্য নও তুমি, নও পাহাড়ি ঝর্না/যদি বলি ফুল তবুও হবে ভুল, তোমার তুলনা হয় না।’
সদ্য প্রয়াত শাফিন আহমেদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি আরও লিখেছেন, ‘বিনম্র শ্রদ্ধা বাংলাদেশের মাইলস ব্যান্ড তারকা শাফিন আহমেদের প্রতি। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজিউন। শোকস্তব্ধ দর্শক-শ্রোতাদের প্রতি রইল গভীর সমবেদনা। আসুন আমরা সকলে তার আত্মার চিরশান্তি কামনা করি।’
সোলসের পার্থ বড়ুয়া
খবর শুনে কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে ছিলাম। আমাদের সম্পর্কটা ছিল আত্মিক। এই মুহূর্তে আর কিছু বলার ভাষা নেই।
রেনেসাঁ ব্যান্ডের শিল্পী, গীতিকার, সুরকার নকীব খান
‘সকালে ঘুম থেকে উঠে এরকম একটা খবর পাব কখনো কল্পনাও করিনি। আমরা কখনো শুনিনি শাফিন অসুস্থ। আমাদের জন্য তার মৃত্যুর খবর মেনে নেওয়া কঠিন। কিছু বলার ভাষা নেই ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। শাফিনের অনেক কনট্রিবিউশন আছে ব্যান্ড মিউজিকে। সে নিজে গান লিখত, সুর করত, নিজেই গাইত। তিনি কেমন মিউজিশিয়ান ছিলেন তার সবারই জানা। ভালো গিটার বাজানো থেকে শুরু করে সে নিজেই একটা ব্যান্ড ছিল। আমাদের মাঝ থেকে থেকে এ ধরনের প্রতিভা চলে যাওয়া এটা আসলে ভাবতে পারছি না। শাফিন আহমেদের মৃত্যু দেশের ব্যান্ড মিউজিক ও ব্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির জন্য এক বিরাট ক্ষতি। আমরা তার আত্মার শান্তি কামনা করছি। আমরা একসঙ্গে ব্যান্ড মিউজিক করতাম, এক স্টেজে গান থেকে অনেক স্মৃতি। তার মৃত্যু আমাদের জন্য বিশাল ক্ষতি।
জন কবির
শাফিন ভাইকে নিয়ে যে কিছু বলব, সেই ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। তাঁর এভাবে চলে যাওয়া কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছি না। চার দশক ধরে শ্রোতার হৃদয় আন্দোলিত করে আসছে, তাঁকে তো আমরা এভাবে বিদায় জানাতে পারি না। দেশসেরা এই রকস্টারের প্রতি একটাই অভিযোগ, কেন নিজের শরীরের খেয়াল রাখেননি। শিল্পীজীবন বেছে নিয়েছেন বলে শ্রোতাদের জন্য নিজেকে বিলীন করে দিতে হবে– এটাও মানতে পারি না। জানি, শাফিন আহমেদ তাঁর কালজয়ী গানের মধ্য দিয়ে বেঁচে থাকবেন যুগের পর যুগ। তারপরও তাঁর শূন্যতা কখনও পূরণ হবে না।
সংগীত ব্যক্তিত্ব ও ব্যান্ডদল ফিডব্যাক’র প্রধান সদস্য ফুয়াদ নাসের বাবু
‘সকাল সকাল এমন একটা খবর পাব, যেটা খুবই মর্মাহত করেছে আমাদের। প্রথম শোনায় বিশ্বাস হয়নি, এখনো মনে হচ্ছে খবরটা হয়ত ভুল হতে পারে। শ্রোতাদের হৃদয় ছুঁয়েছিল তার গান। তার আকস্মিক মৃত্যুতে ভীষণ শোকাহত।’
গীতিকবি লতিফুল ইসলাম শিবলী
নব্বইয়ের শুরুর দিক থেকেই শাফিন ভাইয়ের সঙ্গে আমার কাজ। ‘প্রত্যায়’ অ্যালবামে গান করেছি। এছাড়া শাফিন ভাইয়ের ছলো অ্যালবামে আমার লেখা অনেক গানে তিনি কণ্ঠ দিয়েছেন। সত্যি কথা বলতে তিনি খুব মজার মানুষ ছিলেন। তার উপস্থিতি সবাইকে মজিয়ে রাখতো। এই মানুষটার মৃত্যুর খবর শোনার পর থেকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে আছি। তার জন্য সব সময়ই দোয়া থাকবে। তিনি যেখানেই থাকবেন সৃষ্টিকর্তা তাকে ভালো রাখুক।
লাবু রহমান
শাফিনের চলে যাওয়ার খবর শুনে মনটা বিষাদে ভরে গেছে। মনের পর্দায় বারবার ভেসে উঠছে অসংখ্য স্মৃতি। ছোটবেলা থেকেই শাফিনকে চিনতাম। এরপর আশির দশক থেকে আমাদের দু’জনের ব্যান্ড মাইলস ও ফিডব্যাক বহু আয়োজনে অংশ নিয়েছে। মিউজিক নিয়েও আমাদের ভালো বোঝাপড়া ছিল। সেই সুবাদে ব্যান্ডের বাইরেও আলাদাভাবে পারফর্মও করেছি। অবাক হতাম ওর অনবদ্য বেইজ গিটার বাজানো সেই সঙ্গে গান গাওয়া দেখে। সত্যিকারের প্রতিভাবান শিল্পী বলতে যা বুঝায়, শাফিন ছিল তাদেরই একজন। সংগীতের দুই কিংবদন্তি কমল দাশগুপ্ত ও ফিরোজা বেগমের যোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে সে নিজেকে প্রমাণ করেছে। অনবদ্য সৃষ্টির মধ্য দিয়ে জয় করে গেছে তার সময়কে। তাই শাফিনের চলে যাওয়া এক ক্ষত হয়ে থেকে যাবে।
- বিষয় :
- শাফিন আহমেদ
- সংগীতশিল্পী
- জেমস
- পার্থ বড়ুয়া