ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

আমি বঞ্চিত হলেও অন্যকে ঠকাতে চাইনি: জয় শাহরিয়ার

আমি বঞ্চিত হলেও অন্যকে ঠকাতে চাইনি: জয় শাহরিয়ার

জয় শাহরিয়ার। ছবি: সংগৃহীত

রাসেল আজাদ বিদ্যুৎ

প্রকাশ: ১৫ অক্টোবর ২০২৪ | ১৩:২০ | আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০২৪ | ১৩:২০

জয় শাহরিয়ার এ সময়ের আলোচিত কণ্ঠশিল্পীদের একজন। একই সঙ্গে গীতিকবি, সুরকার, প্রযোজক, প্রকাশক, উপস্থাপকসহ আরও বেশ কয়েকটি পরিচয় রয়েছে তাঁর। সৃজনশীল কাজের নানা শাখায় তাঁর বিচরণ। সম্প্রতি ‘গানওয়ালাদের গান’ শিরোনামে একটি সংগীত প্রকল্পের সমন্বয় করে যাচ্ছেন। এ আয়োজন ও অন্যান্য বিষয়ে কথা হয় তাঁর সঙ্গে

‘গানওয়ালাদের গান’ কনসার্টের শিল্পী তালিকায় নেই বড় কোনো বড় তারকা। কোন ভাবনা থেকে এমন একটি আয়োজনের উদ্যোগ নিলেন?

বড় তারকাদের নিয়ে কনসার্ট তো নিয়মিতই হচ্ছে। কিন্তু তাদের বাইরেও যে অনেকে ভালো করছেন, সেটা দর্শক-শ্রোতার নজরে আনা উচিত। সেই ভাবনা থেকেই ‘গানওয়ালাদের গান’ কনসার্টের পরিকল্পনা। যারা গান লিখে, সুর করে, নিজেরাই গাইছেন এমন কয়েকজন শিল্পীকে নিয়েই পুরো আয়োজনটি সাজানো হচ্ছে। খেয়াল করলে দেখবেন, লিমন, আহমেদ হাসান সানী, সভ্যতা, শুভ্র, ব্যান্ড কাকতালসহ এই কনসার্টের প্রতিটি শিল্পী যখনই যতটুকু সুযোগ পেয়েছেন, সেখানে নিজের সেরাটা তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। শ্রোতা-মনে ছাপ ফেলেছেন ভিন্ন আঙ্গিকের পরিবেশনা আর সৃষ্টিতে নিজস্ব দর্শন ও নতুনত্ব তুলে ধরার মধ্য দিয়ে।

এর আগেও ‘কবিতা কনসার্ট’ শিরোনামে ব্যতিক্রমী আয়োজন করতে দেখা গেছে। এই ধরনের আয়োজন আদৌ দশর্ক-শ্রোতার মাঝে সাড়া ফেলবে কিনা– তা ভেবেছেন? 

আপনি যখন সৃজনশীল কিছু করতে চাইবেন, তখন কিন্তু লাভ-লোকসান, প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির হিসাবনিকাশ থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখতে হবে। আমিও সেটাই করেছি। কবিতা-কনসার্টের মাধ্যমে চেয়েছি, কবিতা ও পাঠকের একটি মেলবন্ধন তৈরি করতে। আজব প্রকাশনী নামে আমার একটি প্রকাশনী সংস্থা আছে, যেখান থেকে নতুন কবিদের বেশ কিছু কবিতার বই প্রকাশ করা হয়েছে। সেগুলো কবিতা-কনসার্টের পাঠকের কাছে যতটা পেরেছি পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করেছি। 

এ সময়ের জনপ্রিয় শিল্পী ও সংগীতায়োজকদের একজন আপনি। তারপরও কি কখনও মনে হয় না, ‘আজব প্রকাশনী’, ‘আজব রেকর্ড’, ‘আজব কারখানা’ এই প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে ব্যবসায়িক পরিচয়কেই বড় করে তুলছেন? 

আমি শিল্পী এবং আমার প্রতিটি কাজই শিল্প-সাহিত্য ঘিরে। এ কারণেই মনে করি না, যা কিছু করছি সেখানে ব্যবসায়ী পরিচয় প্রাধান্য পাচ্ছে। আজব প্রকাশনী সবসময় সৃজন ও মননশীল লেখা পাঠকের কাছে পৌঁছে দিতে চায়। যেখানে যতটা না ব্যবসায়িক চিন্তাধারার প্রকাশ, তার চেয়ে বেশির ভাগ থাকে শিল্প-সাহিত্যের নান্দনিকতা তুলে ধরা। ‘আজব রেকর্ড’ও নিয়মিত গানের প্রকাশনা ধরে রেখেছে ভালো এবং সময়োপযোগী কিছু গান শ্রোতাদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে। সে কারণে গানের ¯্রষ্ঠা তারকা নাকি নবীন তা নিয়ে কখনও মাথা ঘামাইনি। আজব কারখানা যা করছে, তার একটি নমুনা হলো ‘গানওয়ালাদের গান’ কনসার্ট।       

প্রযোজক, প্রকাশক কিংবা সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করা কতটা চ্যালেঞ্জিং বলে মনে করেন? 

প্রত্যাশার ডালা সাজিয়ে বসলে, যে কোনো কাজেই চ্যালেঞ্জটা বড় হয়ে দাঁড়ায়। আমার বেলায় সেটা হয়নি। শিল্পী হিসেবে আত্মপ্রকাশের পর হতাশ হয়েছি অডিও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের কাছে প্রাপ্য বঞ্চিত হওয়ায়। প্রকাশকরা ঠকিয়েছে বলেই বাধ্য হয়ে নিজস্ব রেকর্ড লেবেল তৈরি করেছি। আজব রেকর্ডের জন্ম নিজের অ্যালবাম প্রকাশের জন্য। সেই সময়ে বন্ধুবান্ধব থেকে শুরু করে অগ্রজ শিল্পীদের অনেকের সহযোগিতা পেয়েছি। বলতে পারেন তাদের ঋণ শোধ করতেই নতুন নতুন অ্যালবাম আয়োজন শুরু করা। সাফল্যের দেখা পাওয়ায় প্রযোজক হিসেবে কিছু দায় অনুভব করেছি। সেই দায় মেটাতেই নতুনদের সুযোগ করে দেওয়া। তবে শিল্পী হিসেবে নিজে বঞ্চিত হলে অন্যকে ঠকাতে চাইনি। প্রযোজক হিসেবে স্বচ্ছ থাকব– নিজের কাছে এই ছিল প্রতিশ্রুতি। 

গায়কীতে নিজস্ব একটা ধরন তৈরি হয়ে গেছে। এটা কী সময়ের পাল্লা দিয়ে নতুনভাবে নিজেকে উপস্থাপনের চেষ্টায় নাকি ভিন্ন ঘরানায় গাইতে চান না বলে? 

নিজের যেভাবে গাইতে ভালো লেগেছে, সেভাবেই গেয়েছি। যে ধরনের গান গাওয়ার ইচ্ছে হয়, সেসব গানেই কণ্ঠ দেই। এভাবেই হয়তো নিজস্ব একটা গায়কী তৈরি হয়ে গেছে। এটা সত্যি যে, চাইলে টাকার জন্য অনেক রকম গানই গাইতে পারতাম, প্রস্তাবও পেয়েছি অনেক। কিন্তু মন সায় দেয়নি। যে গান নিজেরই ভালো লাগেনি, তা অন্যের ভালো লাগবে– এমন আশা করা ঠিক? আমার তা মনে হয় না। তাই যা লিখি, যে সুরে কণ্ঠ দেই, সেখানে নিজের ভালো লাগাকেই প্রাধান্য দেই।  
 


 

আরও পড়ুন

×