ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

যেভাবে ‘একটি ফুলকে বাঁচাব বলে’ গানের জন্ম

যেভাবে ‘একটি ফুলকে বাঁচাব বলে’ গানের জন্ম

আপেল মাহমুদ

আপেল মাহমুদ

প্রকাশ: ১২ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১৫:২৩ | আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১৫:৪৩

একাত্তরের জুন মাসের কথা। তখন আমাদের ঘরবাড়ি-ঠিকানা বলতে একটাই, স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র। থাকা-খাওয়া-ঘুমানো-গান বাঁধা-গান গাওয়া, এই ছিল নিয়মিত রুটিন। মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের মধ্য দিয়ে স্বাধীন দেশের পতাকাতলে দাঁড়ানোর স্বপ্নে বিভোর ছিলাম আমরা। হঠাৎ একদিন গোবিন্দ হালদার নামে মানুষটি সামনে এসে দাঁড়ালেন।

সেদিনই প্রথম পরিচয়। তাঁর কথা থেকেই জানতে পারি, লেখালেখি রক্তে মিশে আছে। গোবিন্দ হালদার আমার হাতে তুলে দিয়েছিলেন তাঁর লেখা গানের একটি পাণ্ডুলিপি। যে পাণ্ডুলিপির একেকটি গীতিকবিতায় চোখ বুলিয়ে কোনোভাবেই মেলাতে পারিনি, গোবিন্দ হালদারের সাদাসিধে অবয়বের সঙ্গে। কারণ, তাঁর পাণ্ডুলিপিতে গান নয়, সে ছিল বারুদ। তাই বিস্ময় নিয়ে নিজেকে প্রশ্ন করেছি, একজন মানুষের মনে কতটা আগুন লুকিয়ে থাকলে এমন সব গান লেখা যায়? তাঁর অন্যান্য গানের মতো ‘মোরা একটি ফুলকে বাঁচাব বলে যুদ্ধ করি’ গানের কথাগুলো পড়েও অবাক হয়েছিলাম। মুগ্ধ হয়েছিলাম, গানের কথায় বিশ্বশান্তি, নারী, ফুল, মাটি আর মানুষের কথা কী চমৎকারভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, তা দেখে!

শব্দ মানুষকে কাঁদাতে পারে, হাসাতে পারে, ভাসাতে পারে, মনের মাঝে জন্ম দিতে পারে রাগ-ক্ষোভ-জ্বালা; করে তুলতে পারে বিদ্রোহী– গণসংগীত গাওয়ার অভিজ্ঞতা থেকে এটি জেনেছি। আরও একবার শব্দের শক্তির সম্পর্কে নতুন করে ধারণা জন্মে গোবিন্দ হালদারের ‘মোরা একটি ফুলকে বাঁচাব বলে যুদ্ধ করি’ গানের কথা পড়ে। একই গানে এত অভিব্যক্তি প্রকাশ করা সহজ কথা নয়। এখানেই গোবিন্দ হালদার অন্য আট-দশজন গীতিকারের চেয়ে আলাদা। যা হোক, গানটি হাতে আসার পর খুব একটা সময় নিইনি। বসে গেছি সুর করতে।

সুর করতে গিয়ে নিজেই এক ঘোরের মধ্যে চলে গিয়েছিলাম। জুন মাসেই গানটি স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে রেকর্ড করা হয়। গানটি মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে প্রাসঙ্গিক ছিল– সে কথা পরে অনেকেই স্বীকার করেছেন। সম্মুখসমর থেকে এসেছিলাম স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে। উদ্দেশ্য ছিল, মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তী ধাপে শব্দসৈনিক হয়ে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার। তাই গানই হয়ে উঠেছিল মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম হাতিয়ার। মুক্ত স্বাধীন দেশের পতাকাতলে দাঁড়ানোর আগ পর্যন্ত গানে গানে যুদ্ধ চালিয়ে গেছি।

আরও পড়ুন

×