ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের গানের রিমেক নেই, করা যাবেও না: কবীর সুমন

প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের গানের রিমেক নেই, করা যাবেও না: কবীর সুমন

প্রতুল মুখোপাধ্যায় ও কবীর সুমন

কলকাতা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ | ২০:২২ | আপডেট: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ | ২০:২৭

বরেণ্য গীতিকার, সুরকার ও সংগীতশিল্পী প্রতুল মুখোপাধ্যায় বেশ কিছুদিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর মারা গেছেন। ৮৩ বছর বয়সী এই সংগীতশিল্পীর প্রয়াণে শোক নেমে এসেছে পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ তথা বাংলা ভাষাভাষী দুই দেশের মানুষের মাঝে। তার চলে যাওয়া নিয়ে শোকে মুহ্যমান সংগীতাঙ্গনের সবাই।

তার সৃষ্টিকর্মকে স্মরণ করে আবেগতাড়িত হচ্ছেন পশ্চিমবঙ্গের জনপ্রিয় সংগীত শিল্পী লোপামুদ্রা মিত্র, কবীর সুমন, নাট্যকার ও চিত্রসাংবাদিক অশোক মজুমদারসহ অনেকেই।

প্রতুল মুখোপাধ্যায় স্মরণে নাট্যকার ও পশ্চিমবঙ্গের উচ্চ শিক্ষা ও বিদ্যালয় শিক্ষা বিভাগের মন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেন, প্রতুলদা বাংলা গানের কাছে, বাঙালির কাছে অমর। প্রতুলদার থিওরি ছিল, কোনো মিউজিক্যাল বাদ্যযন্ত্র ছাড়াই তিনি দিব্যি গান গাইতেন। প্রতুলদাকে এর কারণ জিজ্ঞেস করায়, তিনি বলেছিলেন- পাখি তো গান গায়, তার কি কোনো বাদ্যযন্ত্র লাগে? কোনো মিউজিশিয়ান লাগে? তবে বড় আক্ষেপ, একুশে ফেব্রুয়ারিতে আর তার কণ্ঠ শোনা যাবে না।

নাট্যকার ও চিত্রসাংবাদিক অশোক মজুমদার প্রিয় শিল্পীর প্রয়াণে বাকরুদ্ধ। তিনি বলেন, প্রতুল মুখোপাধ্যায়কে যারা চেনেন তারা জানেন যে উনি আদতে একজন গানভোলা মানুষ। গানই তার জীবন। তাই হাসপাতালে ভর্তি হয়েও চিকিৎসা নিয়ে কোনোই মাথাব্যথা নেই। শুধু গান গাইতে পারলেই খুশি। জুনিয়র ডাক্তার, নার্স এমনকি সিনিয়র ডাক্তার, স্পেশালিস্ট সবাই প্রতুলদার কাছে গান শোনার আবদার করতেন। আমরাও অন্যসময় তাই করতাম। সবসময় তিনি বলতেন, আমি তো গানটা নিয়েই বাঁচি। আর কিছু পারি না। গাইতে পারলেই আমার চলে যাবে।

সোশাল মিডিয়ায় লোপামুদ্রা মিত্র লিখেছেন, যাদের জন্য আমি বাংলায় গান গাই, তাদের মধ্যে প্রতুলদা একজন। গান তার নেশা ছিল। নিজের মতো গান গেয়ে যেতেন। প্রচার নিয়ে ভাবতেন না। প্রচারবিমুখ ছিলেন বরাবরই। এজন্য তাকে হিংসা হতো।

তিনি আরও বলেন, প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে ১৯৯৩ সাল থেকে পরিচয় লোপামুদ্রার। ১৯৯৩ সালের বইমেলায় তার সঙ্গে প্রথম কথা হয়েছিল। বইমেলায় খালি গলায় গানের আসর বসত। সেই অনুষ্ঠানে সুমন-নচিকেতা-অঞ্জনও ছিলেন। তিনি নিজে কবিতায় সুর দিয়ে গান তৈরি করতেন। সব মিলিয়ে আমার কাছে বড় অনুপ্রেরণা ছিলেন তিনি।

তার খালি গলার গান প্রসঙ্গে জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী কবীর সুমন বলেন, খুব ভুগছিলেন প্রতুলদা। তিনি শান্তি পেলেন। তিনি ছিলেন একজন আনপ্যারালাল পারফর্মার। এমন কিছু কবিতায় তিনি সুর দিয়েছেন যেমন বাবরের প্রার্থনা, যেগুলো প্রতুলদা ছাড়া অন্য কেউ ভাবতে পারবেন না। তার সঙ্গে একটি দুটি অনুষ্ঠানে আমি কিবোর্ডও বাজিয়েছি। সে বহুদিন আগের কথা। অনেকে হয়ত জানেনও না। তিনি খালি গলাতেও সুরে গাইতেন। প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের গানের কোনও রিমেক নেই। করা যাবেও না। ‘ছোকরা চাঁদ’ গানটার কথা মনে করে গায়ে কাঁটা দিচ্ছে। ওটাও কবিতা থেকেই করা।

প্রসঙ্গত, ১৯৪২ সালের ২৫ জুন অবিভক্ত বাংলার বরিশালে জন্ম প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের। বাবা প্রভাতচন্দ্র মুখোপাধ্যায় ছিলেন সরকারি স্কুলের শিক্ষক। মা বাণী মুখোপাধ্যায় ও প্রতুলকে নিয়ে দেশভাগের পর তিনি ওপার বাংলায় চলে যান। থাকতে শুরু করে চুঁচুড়ায়। অল্প বয়স থেকে কবিতায় সুর দিতেন প্রতুল। কবি মঙ্গলচরণ চট্টোপাধ্যায়ের ‘আমি ধান কাটার গান গাই’ কবিতা দিয়ে শুরু।

প্রতুল নিজেও গান লিখতেন, অথচ প্রথাগত সংগীতশিক্ষা ছিল না। হাসপাতালের বিছানায় শুয়েও চিকিৎসকদের ‘আমি বাংলায় গান গাই’ শোনান তিনি। তবে এই একটিই  নয়, প্রতুল অনেক জনপ্রিয় গানের স্রষ্টা।

তার প্রথম অ্যালবাম ‘পাথরে পাথরে নাচে আগুন’ (১৯৮৮)। তবে সেটি একক অ্যালবাম নয়। ১৯৯৪ সালে প্রকাশিত ‘যেতে হবে’ প্রতুলের প্রথম একক অ্যালবাম, আর শেষ অ্যালবাম ‘ভোর’ (২০২২)। এই অ্যালবামে সংকলিত হয়েছে তাঁর অপ্রকাশিত গানগুলো।

‘আমি বাংলায় গান গাই’ ছাড়াও তার জনপ্রিয় গানের মধ্যে রয়েছে ‘আলু বেচো’, ‘ছোকরা চাঁদ’, ‘তোমার কি কোনো তুলনা হয়’, ‘সেই মেয়েটি’, ‘ফেব্রুয়ারির একুশ তারিখ’ ইত্যাদি। নিজের গানে বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার কখনোই পছন্দ করেননি তিনি। কিন্তু তাঁর গাওয়া গান মগ্ন করে রাখত শ্রোতাকে।

আরও পড়ুন

×