‘তার জন্যই আমি সুবর্ণা থেকে ববিতা’

বিনোদন প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৯ আগস্ট ২০২০ | ০৫:৩৮ | আপডেট: ১৯ আগস্ট ২০২০ | ০৯:১৬
প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা, উপন্যাসিক, গল্পকার জহির রায়হানের জন্মের ৮৫ বছর পূর্ণ হলো আজ। ১৯৩৫ সালের এই দিনে নোয়াখালীর ফেনীতে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। জন্মদিনে জহির রায়হানকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেছেন চিত্রনায়িকা ববিতা।
জহির রায়হান নামটির সঙ্গে মিশে আছে অপার বিস্ময়। এক জাদুকরী ক্ষমতায় সমাজের চেনাজানা মানুষের কথা সহজ সাধারণভাবে সেলুলয়েডের পর্দায় ফুটিয়ে তুলতেন তিনি। উপন্যাসিক ও গল্পকার হিসেবে রেখেছেন বাংলা সাহিত্যে অসামান্য অবদান। কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ পেয়েছেন অনেক সম্মাননা। তিনি কত বড়মাপের নির্মাতা তা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে ভাবতে ভালো লাগে, তার হাত ধরে চলচ্চিত্রে এসেছি। আমার মেন্টর ছিলেন। সত্যি, মানুষ হিসেবে তিনি বড় অদ্ভুত। শিল্পী-নির্মাতা পরিচয়ের বাইরেও তিনি ছিলেন আমাদের পরিবারের একজন অভিভাবক।
বড় বোন সুচন্দার স্বামী হিসেবে তার কদর ছিল অন্যরকম। নানা কারণে জহির ভাই [জহির রায়হান] আমার জীবনে স্মরণীয় হয়ে আছেন। তার পরিচালনায় 'জ্বলতে সুরুজ কি নিচে' চলচ্চিত্রে অভিনয় করতে গিয়ে সুবর্ণা থেকে 'ববিতা' হয়ে যাই। পুতুল খেলার বয়স থেকে জহির রায়হানকে চিনি। তিনি আমার শিক্ষক ছিলেন। আমাকে পড়াতেন। আমি তখন অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। তখন আমরা গেণ্ডারিয়ায় থাকি। জহির ভাই দুষ্টুমি করে প্রায়ই আমাকে নায়িকা বানানোর কথা বলতেন। লজ্জায় সবসময়ই আমি আমার অনিচ্ছার কথা তাকে বলতাম। আমার কথা শুনে জহির ভাই বলতেন, আমি তোমাকে নায়িকা বানিয়ে ছাড়বই। একদিন সত্যি যেন তাই হলো। তিনি আমাকে অভিনয় করিয়ে ছাড়লেন। নায়িকা বানালেন। তার সঙ্গে রয়েছে অসংখ্য স্মৃতি।
একদিন সবাই মিলে বাসায় বসে আড্ডা দিচ্ছিলাম। এ সময় হঠাৎ তিনি বলে উঠলেন, 'সুচন্দা আমাকে এক কাপ চা এনে দাও।' আপা তার জন্য চা নিয়ে আসেন। চায়ে চুমুক শেষ করে বলে উঠলেন, একটা কম্বল ও কাগজ-কলম নিয়ে আসো। আপা কম্বল এগিয়ে দিলেন। আমরা সবাই হাঁ করে তাকিয়ে আছি। একটা সময় দেখি, চা শেষ করে তিনি কম্বল মুড়ি দিলেন। কিছুক্ষণ পর কম্বল থেকে বেরিয়ে সুন্দর একটা গল্প আমাদের পড়ে শোনালেন। পরে আপার কাছে শুনলাম, যখনই তার মনের মধ্যে কোনো পরিকল্পনা বা গল্প আসে তা তিনি এভাবেই লিখে রাখেন। বাসায় থাকলে, কম্বল ও চা ছিল তার নিত্যসঙ্গী। তার সঙ্গে আমাদের এমন আরও অসংখ্য স্মৃতি আছে। যা বলে শেষ করা যাবে না। উনি সব সময়ই বলতেন আমার 'লেট দেয়ার বি লাইট' হবে শেষ ছবি। কেন এমন বলতেন জানি না; কিন্তু এটি আর শেষ করা হলো না। তার আগেই চলে গেলেন জহির ভাই। এটি মুক্তি পেলে তিনি সারা পৃথিবীতে বিখ্যাত হতেন। 'লেট দেয়ার বি লাইট' ছিল বাংলা, ইংরেজি, উর্দু, রুশ ভাষার ছবি। অনেক স্বপ্ন দেখেছিলেন ছবিটি নিয়ে।
'বেহুলা', 'জীবন থেকে নেওয়া', 'টাকা আনা পাই', 'কাঁচের দেয়াল', 'সঙ্গম', 'ধীরে বহে মেঘনা' ও প্রামাণ্যচিত্র 'স্টপ জোনেসাইড'সহ অনেক অনবদ্য সৃষ্টি তাকে এনে দিয়েছে অমরত্ব। গুণী মানুষটির জন্য রইল অতল শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।
- বিষয় :
- ববিতা
- জহির রায়হান
- বিনোদন