ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে নিয়ে প্রামাণ্যচিত্র

বিনোদন প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৯ ডিসেম্বর ২০২০ | ০২:১৮ | আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০২০ | ০৬:১৫
মা, মাটি ও মানুষ–জীবনে এই তিন নিয়ে চলেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী। দশ ভাইবোনের মধ্যে সবার বড় তিনি। পরিবারে তাই 'বড়ভাই' নামে পরিচিত। পরিবারের গন্ডি ছাড়িয়ে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রেও 'বড়ভাই' নামে পরিচিত। দেশের সেবায় ট্রাস্টি বোর্ড করে ১৯৭২ সালে সাভারে গড়ে তুলেছিলেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র। এই জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে নিয়ে নির্মিত হয়েছে প্রামাণ্যচিত্র। নাম 'মু্ক্তিযোদ্ধা জাফরুল্লাহ চৌধুরী'।
দীপ্ত টিভিতে ২০ ডিসেম্বর রাত ১১টায় প্রচার হবে প্রামাণ্যচিত্রটি।
ঢাকা মেডিকেল কলেজে পড়ার সময় জাফরুল্লাহ চৌধুরী ছাত্র ইউনিয়নের নেতা ছিলেন। তখনকার জনপ্রিয় এই ছাত্রনেতা মেডিকেলের সাধারণ শিক্ষার্থীদের অধিকার নিয়ে বরাবরই সোচ্চার ছিলেন। যে কারণে কলেজ কর্তৃপক্ষ এবং পূর্ব পাকিস্তানের প্রশাসন নানাবিধ মামলায় জড়ায় তাকে। একসময় আইয়ুব খানের সামরিক শাসন তার জীবনকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলে। তাই সামরিক শাসকের চোখে ধূলো দিয়ে তিনি লন্ডনে চলে যান। সেখানে শুরু হয় আরেক সংগ্রামী জীবন। লন্ডনে অল্পদিনের মধ্যেই দক্ষ তরুণ সার্জন হিসেবে নাম করেন।
বাংলাদেশে এরই মধ্যে শুরু হয়ে যায় মুক্তিযুদ্ধ। তখন ব্রিটিশ সরকার রাষ্ট্রহীন নাগরিক হিসেবে তাকে একটি ছাড়পত্র দিলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে বন্ধু ডা. মুবিনকে নিয়ে ভারতে যান। ভারতে আগরতলার বিশ্রামগঞ্জ এলাকায় যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বাংলাদেশ ফিল্ড হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা হয়েছিল ক্যাপ্টেন আখতার ও দুই নম্বর সেক্টর কমান্ডার মেজর খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে। মুক্তিযুদ্ধের সময় এটি ছিলো বাংলাদেশ সরকারের একমাত্র ফিল্ড হাসপাতাল।
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী ও ডা. মুবিন ভারতের কলকাতা থেকে সরাসরি চলে যান আগরতলার বিশ্রামগঞ্জ হাসপাতালে।মুক্তিযুদ্ধের সময় এই বিশ্রামগঞ্জ হাসপাতালে সেবিকা হিসেবে রেশমা, আসমা, ইরা কর, সুলতানা কামাল, খুকু সহ অনেকেই ডাক্তার জাফরুল্লাহ চৌধুরী ও ডা. মুবিনের সাথে কাজ করেছেন।
মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী বাংলাদেশে জাফরুল্লাহ চৌধুরী সাভারে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ চালিয়ে যান। তিনি এ সময় লক্ষ্য করেন, গরীব মানুষ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসা নিতে এলেও ওষুধ কেনার সামর্থ থাকে না। তাই স্বল্পমূল্যে ওষুধ বিক্রির জন্য তিনি প্রতিষ্ঠা করেন গণস্বাস্থ্য ফার্মাসিউটিক্যাল ল্যাব। দেশে তখন কোন ওষুধনীতি ছিল না। ফলে কোম্পানিগুলো ইচ্ছেমত দাম নির্ধারণ করতো। তখন একটি নীতি প্রণয়নের জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে আলোচনাও করেন তিনি। কিন্তু ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হলে ওষুধ নীতি প্রণয়নের কাজটি বন্ধ হয়ে যায়। পরে ১৯৮২ সালে ওষুধনীতি প্রণয়নে তৎকালীন এরশাদ সরকারকে বাধ্য করেছিলেন তিনি।
বর্তমানে তার প্রতিষ্ঠিত গণবিশ্ববিদ্যালয়ে আধুনিক বিজ্ঞান চর্চা ও গবেষণার বিষয়সহ ৩৫টি বিষয়ে উচ্চশিক্ষা দেওয়া হচ্ছে।সর্বশেষ ২০২০ সালে বাংলাদেশ যখন মরণব্যাধি কভিড-১৯ এ আক্রান্ত, তখন দেশের মানুষকে রক্ষা করতে করোনা ভাইরাস সনাক্ত করণের জন্য স্বল্পমূল্যে কিট আবিস্কার করে তার প্রতিষ্ঠান।
তথ্যচিত্রটিতে তার এই দীর্ঘ কর্মময় জীবনই তোলে আনা হয়েছে বলে মেইল বার্তায় জানিয়েছে দীপ্ত টিভি।
কাজী মিডিয়া লিমিটেডের প্রযোজনায় প্রমাণ্যচিত্রটির গবেষণা, পান্ডুলিপি রচনা ও পরিচালনা করেছেন রঞ্জন মল্লিক। প্রযোজক ও নির্বাহী প্রযোজক হিসেবে আছেন ব্রাত্য আমিন ও আবু রেজওয়ান ইউরেকা।