ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

সাক্ষাৎকার

সব পর্যায়ে সচেতনতা একটি বড় প্রাপ্তি

সব পর্যায়ে সচেতনতা একটি বড় প্রাপ্তি

মোহাম্মদ জিয়াউল হাসান মোল্লা, ডিএমডি, ব্যাংক এশিয়া, চেয়ারম্যান, অ্যাসোসিয়েশন অব এন্টি-মানি লন্ডারিং কমপ্লায়েন্স অফিসার্স অব ব্যাংকস ইন বাংলাদেশ

ওবায়দুল্লাহ রনি

প্রকাশ: ১৭ জুন ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ১৭ জুন ২০২২ | ২৩:১৫

সমকাল :মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ কার্যক্রমে বাংলাদেশে অগ্রগতি সন্তোষজনক মনে করেন কি?
জিয়াউল হাসান :২০০২ সালে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ বিষয়ক কার্যক্রম শুরুর দিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আয়োজনে ব্যাংকারদের প্রশিক্ষণ দিতে আমি বিভিন্ন জায়গায় যেতাম। সেখানে ব্যাংকারদের যখন টাকার উৎস সম্পর্কে জানার বিষয়ে বলা হতো, তখন তাঁরা বিস্ময় প্রকাশ করতেন। তাঁরা পাল্টা প্রশ্ন করতেন, আমরা কি পুলিশ না কাস্টমস? সেই অবস্থা থেকে আজকের এ পর্যায়ে এসেছে। এখন ব্যাংকার, গ্রাহক সবাই মনে করেন, টাকার উৎস জানাতে হবে। এটি বড় অগ্রগতি। এখন সব ব্যাংকের প্রতিটি শাখায় মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ কর্মকর্তা রয়েছেন। মানি লন্ডারিংয়ের ঝুঁকি নিয়ে যত বেশি সভা, সেমিনার হয়; ঋণ ঝুঁকি, বৈদেশিক বাণিজ্য কিংবা সম্পদ-দায় ব্যবস্থাপনার ঝুঁকি নিয়ে এত আলোচনা হয় না। সব পর্যায়ের এই সচেতনতা একটা বড় প্রাপ্তি। সব মিলিয়েই কিন্তু এফটিএফের ধূসর তালিকা থেকে আমরা কমপ্লায়েন্ট কান্ট্রি হয়েছি। আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নে যা ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে। নন-কমপ্লায়েন্ট থাকলে আমরা অন্য দেশের ব্যাংকের সঙ্গে এত সহজে বাণিজ্য করতে পারতাম না। আমাদের এলসি কনফারমেশন চার্জসহ ব্যবসায়িক খরচ অনেক বেশি হতো। বাংলাদেশে নিয়ন্ত্রক সংস্থা, রিপোর্টিং এজেন্সিসহ বিভিন্ন পর্যায়ে যোগ্য লোক তৈরি হয়ে গেছে। মানি লন্ডারিং প্রতিরোধের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখন নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালন করছে।

সমকাল :এবারের বাজেটে পাচার করা টাকা নির্ধারিত হারে কর দিয়ে ফেরত আনার সুযোগের বিষয়টি আপনি কীভাবে দেখেন?
জিয়াউল হাসান :অর্থ পাচারের বিষয়টি একটি বৈশ্বিক সমস্যা। এখন আমরা শপথ নিতে পারি, টাকা যা গেছে ফেরত আনব। কোনো অবস্থায় আর যেতে দেব না। এ জন্য সবাইকে চেষ্টা করতে হবে। এ ক্ষেত্রে দু'দিকেই খেয়াল করতে হবে। সবার আগে সচেতন ও দায়িত্বশীল হতে হবে। একই সঙ্গে এর নেতিবাচক দিক নিয়ে প্রচারণা চালাতে হবে। আবার নিয়ন্ত্রক সংস্থার পক্ষ থেকে উদাহরণ দেওয়ার মতো শক্ত শাস্তি দিতে হবে। সম্মিলিতভাবে আইন প্রয়োগ করতে হবে। তখন নতুন করে আর পাচার হবে না। তবে হ্যাঁ, অর্থ পাচারের শীর্ষ ১০টি দেশের তালিকায় কিন্তু বাংলাদেশ নেই।

সমকাল :মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে আপনাদের অ্যাসোসিয়েশনের বিশেষ কোনো উদ্যোগ রয়েছে কি?
জিয়াউল হাসান :ব্যাংকগুলোর প্রধান মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ কর্মকর্তাদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব এন্টি-মানি লন্ডারিং কমপ্লায়েন্স অফিসার্স অব ব্যাংকস ইন বাংলাদেশ (এএসিওবিবি) গ্লোবাল এজেন্সির সঙ্গে যোগাযোগ রাখে। তাদের উত্তম চর্চা আমাদের এখানে কার্যকরের চেষ্টা করা হয়। কর্মকর্তাদের নিয়ে প্রশিক্ষণ, সেমিনার হয়। প্রতি বছর ক্যামেলকো সম্মেলন হয়। যেখানে বিএফআইইউ ছাড়াও দুদক, সিআইডি, কাস্টমসসহ বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন।
সমকাল :পুরোপুরি মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ কি সম্ভব?
জিয়াউল হাসান :মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ বিষয়টি একটি জটিল ইস্যু। এটি কিছুটা উন্নয়ন ও শিক্ষার সঙ্গে সম্পৃক্ত। আজ যেভাবে ঘটছে, কাল ঘটছে আরেকভাবে। ফলে প্রতিনিয়ত আমাদের আপডেট থাকতে হয়। আমাদের ভৌগোলিক অবস্থান, সামাজিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় বলা যায়, গত ২০ বছরে আমরা জাদু দেখিয়েছি। মানি লন্ডারিং প্রতিরোধের আন্দোলনটা জোরদার হচ্ছে। এখন ব্যাংকার, গ্রাহক সবাই অভ্যস্ত। বড় অঙ্কের টাকা জমা দিতে গিয়ে গ্রাহক তাঁর সপক্ষে ডকুমেন্ট নিয়ে যাচ্ছেন। আরেকটি বিষয় হলো- বাণিজ্যের আড়ালে অর্থ পাচার প্রতিরোধের সঙ্গে অনেক বিষয় জড়িত। একটি পণ্যের দামের সঙ্গে অনেক বিষয় জড়িত থাকে। এক দেশের সঙ্গে আরেক দেশের দামে পার্থক্য থাকে। অবশ্য ওভার ইনভয়েসিং, আন্ডার ইনভয়েসিং হচ্ছে কিনা, তা দেখার জন্য সব ব্যাংক একটি কমন ড্যাশবোর্ডে তথ্য দিচ্ছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে সিআইবির মতো একটি 'প্রাইস ভেরিফিকেশন মডিউল' হবে। সঙ্গে সঙ্গে সব পর্যায়ে অটোমেশনে জোর দিতে হবে। কেননা, একটি শাখায় দৈনিক ৫ হাজার লেনদেনের সব তো আর দেখা সম্ভব নয়। তবে ঝুঁকি বিবেচনায় দৈনিক পাঁচটি লেনদেন দেখা কিন্তু সহজ। ওই পাঁচটি লেনদেনের তথ্য বের করতে হবে ডিজিটাল সুপারভিশনের মাধ্যমে। যত দ্রুত এটি করা যাবে, তত ভালো।

সমকাল :ব্যাংক এশিয়ার কার্যক্রম নিয়ে কিছু বলুন?
জিয়াউল হাসান :বেশ আগ থেকে সব পত্রিকা তদারক করা হয়। দৈনিককার রিপোর্ট প্রতিটি শাখায় পাঠানো হয়। সংশ্নিষ্ট শাখা তথ্য যাচাই করে লেনদেন হয় কিনা, তা দেখে। আবার শাখাভিত্তিক লেনদেনের তথ্য প্রতিদিন স্বয়ংক্রিয়ভাবে দেখা হচ্ছে। সব ক্ষেত্রে যে সন্দেহজনক লেনদেন হচ্ছে, তা নয়। তারপরও বড় লেনদেন প্রয়োজন মনে করলে শাখার ম্যানেজার মিলিয়ে নিচ্ছেন। অটোমেশন ছাড়া দৈনিক এসব তথ্য যাচাই করতে গেলে অনেক সময় লোকবল দরকার হয়। ফলে ডিজিটাল রূপান্তর খুব জরুরি। যে কারণে শেষ ক্যামেলকো সম্মেলনে ব্যাংকের আইটি অফিসারদেরও ডাকা হয়েছিল।
সাক্ষাৎকারগুলো নিয়েছেন ওবায়দুল্লাহ রনি

আরও পড়ুন

×