ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

বিন্দু বিন্দু

সেই ঘর লব আমি যুঝিয়া

সেই ঘর লব আমি যুঝিয়া

অমর্ত্য সেন

সেলিম জাহান

প্রকাশ: ১৫ জুন ২০২৩ | ১৮:০০

১৯৯৮ সালের কথা। সে বছরই তিনি অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার পান। পুরস্কার প্রাপ্তির দিন তিনি নিউইয়র্কে ছিলেন। মনে আছে সেখানে এক সংবাদ সম্মেলনে বাঙালি এক সাংবাদিক তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘আপনি নানান দেশে বাস করেছেন, কোনটি আপনার দেশ?’ স্মিতহাস্যে অধ্যাপক সেন উত্তর দিয়েছিলেন–
‘সব ঠাঁই মোর ঘর আছে, আমি
      সেই ঘর মরি খুঁজিয়া।
দেশে দেশে মোর দেশ আছে, আমি
      সেই দেশ লব যুঝিয়া।’
একদা শান্তিনিকেতনের আশ্রম বালক এবং যাঁর নামকরণ করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ, তিনি যে কবিগুরুর উদ্ধৃতি দিয়ে জবাব দেবেন, তা বলাই বাহুল্য। কিন্তু আজ তাঁকে ঘর খুঁজতে নয়, বরং ঘরের জন্য যুঝতে হচ্ছে।
বাড়িটির নাম প্রতীচী– হলুদ রঙের একতলা বাড়ি। বাড়ির নকশাটি অনেকটাই রবীন্দ্রনাথের নানান বাড়ির মতন। প্রতীচীর সামনে অনেকখানি জায়গা নিয়ে নানান গাছগাছালি। ঢোকার মুখেই প্রবেশদ্বারের একটি স্তম্ভে লেখা ‘প্রতীচী’, অন্যটিতে খোদাই করা ‘A.T.Sen’– অধ্যাপক অমর্ত্য সেনের স্বর্গীয় পিতৃদেব আশুতোষ সেনের নামাঙ্কিত। ‘প্রতীচী’ অধ্যাপক অমর্ত্য সেনের পৈতৃক বাড়ি। বছরের বেশির ভাগ সময়েই অধ্যাপক সেন বাইরে বাইরে থাকেন, তবু শীতে একবার তিনি ‘প্রতীচী’তে আসেন। আর এলেই তাঁর একবার অন্তত যাওয়া চাই কালোর চা-দোকানে। ‘জানো, যখন পারতাম, তখন শান্তিনিকেতনে এলেই টই টই পাক দিতাম সারা শান্তিনিকেতন সাইকেলে চড়ে।’
সম্প্রতি বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ তাঁকে উচ্ছেদ করতে চাইছে তাঁর পৈতৃক নিবাস থেকে। তাঁদের অভিযোগ– অধ্যাপক সেনের পৈতৃক বাড়ির  ১.৩৮ একর জমির মধ্যে ১৩ শতাংশ অবৈধভাবে দখলীকৃত। বিশ্বভারতী কিন্তু ঐ ১৩ শতাংশ ফেরত চাচ্ছেন না, তাঁরা পুরো বাড়ির দখল চাচ্ছেন। এটা খোলাসা করে বলেছেন গীতিকণ্ঠ মজুমদার, যিনি ‘প্রতীচীর’ দেখভাল করেন। মামলা করা হয়েছে– কলকাতা হাইকোর্ট উচ্ছেদ নোটিশ স্থগিত রাখতে আদেশ নিয়েছেন বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষকে। প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে দেশে-বিদেশে। বিশ্বের ৩০০ খ্যাতনামা ব্যক্তিত্ব ভারতের রাষ্ট্রপতির কাছে চিঠি লিখেছেন বিশ্বভারতীর এ পদক্ষেপের সমালোচনা করে।
বহু মানুষই বলছেন, বিষয়টি ‘আইনগত’ নয়, বিষয়টি ‘রাজনৈতিক’। উদারপন্থি এবং মানবতাবাদী অধ্যাপক অমর্ত্য সেনের সঙ্গে ভারতীয় জনতা পার্টির বিশাল ‘মতাদর্শের পার্থক্য’ রয়েছে এবং অধ্যাপক সেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নীতিমালার কট্টর সমালোচক। এর আগেও নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদ থেকে অধ্যাপক সেনকে অপসারণ করেছে মোদি সরকার। বাড়ি থেকে উচ্ছেদের প্রয়াসটিও সেই ধারাবাহিকতার অংশ।
অধ্যাপক অমর্ত্য সেনের ‘যুঝবার’ সংগ্রামে আমরাও তাঁর সঙ্গে আছি। কারণ ‘এ লড়াই নীতির লড়াই, এ লড়াই জিততে হবে’।

আরও পড়ুন

×