মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর : নিঃশব্দ বেদনার আনন্দ
স্বাধীনতা দিবস ২০২৪

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে সংরক্ষিত আলোকচিত্র
আনোয়ার শাহাদাত
প্রকাশ: ২৫ মার্চ ২০২৪ | ২৩:২৭
ঢাকা ভ্রমণ– সে আমার কাছে বিলাসিতা নয় বা বিলাসিতাও; ঠিক কোনো সংজ্ঞায়ই হয়তো বা নিশ্চিত করে দাঁড় করানো যাবে না। আমি অবশ্য আমার নিজস্ব মফস্বল শহর ও নিজস্ব অজপাড়াগাঁ গ্রামখানিও বড় নিষ্ঠায় ঘুরে থাকি। যেন আসলে গ্রাম হতে, মফস্বল হয়ে যেন এই ঢাকায়। সে যেভাবেই বর্ণিত হোক এর অগণিত টানা উত্তেজনা আছে, সে মজা অর্থেই। সকলেরই কাজ থাকে। অতএব, কাজের ফাঁকে কার্যকর ছুটি না হলে কে-ই বা এমন আগ্রহী হবে এখানে সেখানে যেতে। আমার কাজ থাকা-না থাকা কোনো ব্যাপার ছিল না! যেন অফুরন্ত অবসর, যেন দীর্ঘ ছুটি ছিল; যেন তাই যাওয়া ওখানে– ক’দিন আগে এক সকালে আমি ঢাকা মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর দেখতে গেলাম। আমি ঢাকার মধ্য শহর, ইস্কাটন হতে যাত্রা শুরু করি।
আগারগাঁও মেট্রোঘাট থেকে রিকশাওয়ালা উচ্ছ্বাসে সম্মত হয় তার এই খদ্দেরকে বয়ে নিয়ে যেতে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে। পায়ের ও গায়ে রক্তঘামে চালিত এই যানে চড়ে যেতে আমার খারাপ লাগে কিনা সে প্রশ্ন আর প্রশ্ন নয়, এই ভূমিতে অন্তত যখন আমি মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর যাচ্ছি। রিকশাওয়ালার উচ্ছ্বাসের কারণ অবশ্য পরে বুঝতে পারি। কেননা রিকশাওয়ালা তার কাল্পনিক (ফ্যান্টাসি) জগতে এই প্রথমবারের মতন একজন ‘মুক্তিযোদ্ধা’কে বহন করছেন তার রিকশায়– এমন ভাবছেন! অবশ্য অবশ্যই ভালো হতো যদি আমি সত্যি রিকশাওয়ালার ওই কাল্পনিক জগতের অংশীদার হতে পারতাম। কিংবা কেমন হতো যদি আমি সত্যি তার কাল্পনিক জগতেরই কেউ, অর্থাৎ একজন মুক্তিযোদ্ধা, যুদ্ধাহত কিংবা সাধারণ অক্ষত যোদ্ধা। অর্থাৎ একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা। রিকশায় চড়ার পর খেয়াল করলাম, তিনি, রিকশাওয়ালা দেখি আমাকে নিয়ে চলার শুরুর পরেই একাধিকবার ঘুরে আমার দিকে তাকাচ্ছেন, যা কিনা ছিল অসম্ভব অস্বস্তির কারণ। এরপর তার কথা হতে বুঝতে পারি আমার দিকে তাকানোর কারণ। তিনি কোনো রাখঢাক না করেই বললেন, আপনি তো দেশের জন্য যুদ্ধ করেছেন, আপনারাই তো এই দেশটা স্বাধীন করেছেন। এটা প্রশ্ন হতে পারত। তিনি তা করেননি, সে ছিল একেবারে সিদ্ধান্ত তার যে আমি নিশ্চিত একজন মুক্তিযোদ্ধা। আমি তার দিকে তাকাই না। বলতে পারতাম যে না আমি নিজে মুক্তিযোদ্ধা নই। আমি সিদ্ধান্ত নিলাম, আমি তার কোনো কথায় কোনো প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করব না; বরং শুনে যাই, দেখি– এমন একজন লোক কীভাবে কী ‘ভাবে’। তিনি বলে যেতে থাকলেন। আমি কোনো কথা বলব না এমন ভাব-এ আমি হাতের ডান দিকের উঁচু ভবনগুলো দেখতে থাকি, যা আমার স্মৃতিতে ছিল না। আমি যখন ঢাকা ছেড়েছি তখন এসব ভূমি ঝিল-বিলের অংশ ছিল। তিনি বলে যান, যেই দেশ আপনারা চেয়েছিলেন, সেই দেশ কি আপনারা পেয়েছেন? আমি বিরত থাকি। কারও অভিমত কি রাজনৈতিক অভিমতের সঙ্গে দ্বিমত কি একমত প্রকাশ করবার ‘তেজ’ আমি হারিয়েছি অনেক আগে, সে সচেতনেই। তিনি দেশের যাবতীয় বিষয়েই কথা বলে যাচ্ছিলেন। আমার অবস্থান ছিল তার কোনো অভিমতে আমি অনভিমতী! জাদুঘর রাস্তার কোনায় নামালেই চলবে বললে তিনি তার কল্পিত যোদ্ধাকে আরও কাছে নিয়ে যেতে চান, ঠিক জাদুঘরের সামনে; না হলে যেন– যদি তার মুক্তিযোদ্ধাকে যথার্থ খাতির করা না হয়! অতএব, তিনি জাদুঘরের সামনে আমাকে নামিয়ে আমার দিকে সামরিক মতন করে একটা সালাম-স্যালুট দেন; দেহটাকে যথাসম্ভব বিনীত ভঙ্গি করে। জাদুঘরের সামনে একটি সবুজাভ উপচানো কৃত্রিম জলাশয়, যার মাঝখানে প্রজ্বলিত শিখা হাতের ডানে রেখে আমি যথাযথ নিয়মে, টিকিট কেটে ব্যাগ রেখে ভেতরে যাই। কখন শুরু হবে– এমন চাপা উত্তেজনা লয়ে নির্দেশনা মেনে গ্যালারি এক হতে শুরু করি। ভিড় নেই, দূরে মাত্র দু-একজন দর্শনার্থী ছাড়া প্রহরা পরিচর্যাকারীদের উপস্থিতি। আমার আগে না দেখা জয়নুলের চিত্র দিয়ে শুরু হয়। দ্রুত নয়, আবার খুব ধীরেও নয়। চেনা প্রতিস্থাপনের সামনে দাঁড়াই। একটা পাতলা সুতির সাদা রঙের পাঞ্জাবি, তার ওপরে কালো রঙের পাঁচ বোতাম, আধা-গলা বন্ধের সেই হাতাহীন কিংবদন্তির আচ্ছাদন। অনুভব করি এ শুধু একটি পরিধেয় নয়, এ একটি জাতির মূর্ত। এই পরিধেয়র সামনে আসলে আর দাঁড়ানো যায় না; একটি অদ্ভুত বেদনা আচ্ছন্ন করতে থাকে। আমি অগ্রসর হই, যেন সে নীলাভ বেদনা হতে পালাতে গিয়ে আমি দাঁড়াই অপর প্রতিস্থাপনের সামনে– ইতালিয়ান রবার্টও গ্যাস্পারিনি মিলানোর তামাক সেবনের পাইপ, ‘১৯১২ ব্রায়ার’ কথাটা লেখা খাপের উপরি অংশে, অন্য খাপ অংশে লাল ভেলভেটের কাপড়ের ওপর শোয়ানো সেই বিখ্যাত তামাক সেবনের পাইপ। যে পাইপের চেম্বার বলের প্রান্ত ঢেউ কাটা নকশা। ভিন্ন স্মোক চ্যানেল, পাইপ স্টেম, লিপ বাটন। যেন অনন্ত অপেক্ষায় এই ‘জড়প্রাণ’, যদি সেই হাত তুলে নেয় তাকে আবার কোনোদিন। কী এক অসম্ভবের সম্ভব হয়ে রয়েছে এই পাইপ এখানে। এর প্রকৃত ব্যবহারকারীর দুই কন্যাদ্বয় শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা এটা দান করেছেন জাদুঘরে।
উপরোক্ত দুটো ইনস্টলেশন দিকে কেন চোখ গেল, সে ব্যাখ্যা হয়তো দেওয়া যায় না আর। এরপর কোথাও দেশি তাঁতের শাড়ি দেখে দাঁড়াই গিয়ে প্রীতিলতার (ওয়াদ্দেদার) সামনে। কেমন অবিচল তার সেই পৃথিবী সেরা ববকাট চুলে, নির্ভীক দাঁড়ানো সাদা অপ্রশস্ত পাড়ের শাড়িতে। হেঁটে যেতে থাকি যেন ধীরগতিসম্পন্ন ঠেলাগাড়ির নিঃশব্দে, আরও নিঃশব্দে সূর্য সেনকে ছাড়িয়ে সেই ছবিখানি ১৯৩৮/৩৯-এ এ কে ফজলুল হক ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের। দু’জন পাশাপাশি বসা, সেই প্রতিকৃতি যা বাংলার মানুষের স্মৃতিতে গেঁথে রয়ে গেছে যুগোত্তীর্ণ কাল। জাদুঘরে কেউ দাঁড়িয়ে থাকে না, যেহেতু যে কোনো প্রতিস্থাপনের পরেই থাকবে অপরটি যার গুরুত্ব কোনো দর্শনার্থীর কাছেই কম নয়। বুঝতে পারি প্রামাণ্যগুলো সময়কাল ধরে এগোচ্ছে। অতএব, ’৪৩-এর দুর্ভিক্ষের জয়নুল আবেদিনের চিত্রের পর প্রকৃত আলোকচিত্রের দেখা পাই। সেই দুর্ভিক্ষের নির্মম সাক্ষী নমুনা– ক্ষুধার্ত মানবদেহ পড়ে থাকতে দেখা যায় রাস্তায়, ক্ষুধার্ত পথচারীর দাঁড়াবার বা সহযোগিতায়ও সামর্থ্যহীন। সময় এগোতে থাকে; পাকিস্তানের অধীনে রাষ্ট্রভাষা অধিকারের সংগ্রাম। নিশ্চয়ই এরপর মুক্তিযুদ্ধতেই যাবে ধরে নেই। সেই এক আশ্চর্য বিষয়– জাদুঘরে যে কত দ্রুত আমরা সময়ের অভিজ্ঞতা দিতে পারি। রশিদ তালুকদারের সেই খ্যাতিমান টোকাইয়ের প্রতিবাদী ছবি হয়ে অগ্রসর হতে থাকি। অথচ আমি জানি, ওই ছবির সামনেই তো দাঁড়িয়ে থাকা যায় অনন্তকাল। এরপর গ্যালারিতে যেখানে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের পোশাক, তৈজসপত্র ও অন্যান্য উপাদান খুব নিষ্ঠুর অথচ সুন্দর সত্যকে ঘোষণা করে যায়, তাদের সম্পর্কে যারা ছিল বলেই আজ এই জাদুঘর, তাদের জন্য যারা আছে এবং যারা থাকবে। এই যে আমিও এখানে।
জাদুঘরের এ যাত্রা পর্ব অনুভবের ও বেদনার। এ এক ভিন্ন জগৎ। সমষ্টিগত ধারণাকে উতরিয়ে এখানে ব্যক্তি ত্যাগের নমুনাগুলো কেবলই বেদনার বয়ান। লে. কমান্ডার মোয়াজ্জাম হোসেনের বাইনোকুলার আর তার পরিধানের ইউনিফর্ম, হয়তো সেখানে তারই সানগ্লাস, তার পরে কোনো কর্মকর্তার ব্যবহৃত সোয়াগার স্টিক (দম্ভ লাঠি)। সেই সোয়াগার স্টিক অনন্তকাল দম্ভে তার প্রভুর অবদান দেশ স্বাধীনে জানিয়ে যাবে। পাশে মস্তক আবরণের টুপিটি ঘোষণা দিয়ে যায় যে, একদিন অতীতে ছিল বলে এর পেছনের লোকগুলো এমন একটা দেশ আজ আমাদের দিয়ে গেছে।
এরপর রণদা প্রসাদ সাহার হুঁকার সামনে দাঁড়িয়ে মনে হয়, এ শুধু সেই মানুষটির শহীদ হয়ে যাওয়ার কথাই না, এ এক ঐতিহ্য ছিল একদা এখানে। হুঁকার পর সেই টাইপ রাইটারটা, যাতে টাইপ করা হয়েছিল পঁয়ত্রিশ জনপ্রতিনিধি জাতিসংঘের মহাসচিব উথান্টকে চিঠি। সময়ের ক্ষরণের চিহ্ন, মলিন ধুলো পড়া এই টাইপ রাইটার।
এরপর আসে আমাদের শৈশব হতে অতি চেনা শরণার্থীদের যাত্রা হতে তাদের বেঁচে থাকার লড়াই পর্ব। আবারও দেখলাম, এত যুগ পরেও আমি এসব দৃশ্য এখনও ঠিক সইতে পারি না। লাঠি হাতে কাঁধ জোয়ালে বৃদ্ধ তৈজসপত্রের শিকা বয়ে যাচ্ছেন হাজারো শরণার্থীর একজন। উদোম পড়ে থাকা রাস্তার পাশে নারী এলোকেশীর মরদেহ। শেষ সম্বলটুকু আঁকড়ে ধরে জীবন বাঁচাতে লাখ মানুষের অজানায় গন্তব্য। মুমূর্ষু স্ত্রীকে (ধারণা) কোলে লয়ে কোথায় যে যাত্রা যেন, সে কে-ই বা জানবে এই ভুবনে; বেহুঁশি সে নারীর স্থবির অর্থহীন চোখ, কোল হতে ঝুলে পড়া তার ঘন চুল কাদা ঘসে এক অজ্ঞাত যাত্রা : কোথায় কে জানে। ড্রেনের জন্য প্রস্তুত বড় গোলাকার নল, যখন সেইসব উদ্বাস্তু মানুষের বসতবাড়ি। নলের মুখে উদোম শিশু যেন ছোট্ট নীড়ে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে। নলগুলোর সামনে দাঁড়িয়ে বা বসে থাকা শক্তি নিষ্পেষিত শিশুর আছড়ে পড়ে থাকা। যে ছবি সাক্ষ্য দেয় কেমন করে সেই সব নল-নীড় বস্তির সামনে যেন ঘর হতে আঙিনায় : জটলা করে সময়ক্ষেপণ। যেন দরজার আড়ে তেমন করে প্রতিটি নলের মুখ আগলে বসে থাকা মানুষ। সেসব নল আশ্রয়ী মানুষদের সেখানেই চুলা বানিয়ে রান্না করবার সেইসব নির্মম দৃশ্যের ছবি।
ওই নল-বস্তি প্রতিস্থাপনের সামনে একটি বেঞ্চ। এর আগে-পরে আর এমন বেঞ্চ চোখে পড়েনি। হতে পারে এখানে এই বিবেচনা যে, জাদুঘর পথিক এ অবধি এসে বিষণ্ন ও ক্লান্ত হবেন, যখন একটু জিরিয়ে নিতে হবে। আমি সেই বেঞ্চে বসি, আর আমার কুলচ্ছিলও না ওইসব দৃশ্য দেখে যাওয়া। ডানে যুদ্ধের কোনো একটা পর্বের ভিডিও প্রদর্শিত হচ্ছিল, যার সঙ্গে ছিল আবহ রাগ। বিষণ্ন জাদুঘর পথিককে জিরানো সময়ে যেন এই রাগ মুক্তি দিতে পারে, তেমন করেই বিরহ রাগ বেজে যাচ্ছিল, যখন আমি পারলে চোখ বন্ধ করে বসে থাকি। আসলে আমার পক্ষে সম্ভব হচ্ছিল না আর আবেগ অবদমিত করা। আমি বোধ হয় সেই মুকছাইলাম অপরাপর দর্শনার্থীর আড়াল করে পাশের বিরহ রাগ-এর সঙ্গে একাকার হয়ে।
এরপর আমি অন্য অংশে যাই। একটি দোতারার সামনে দাঁড়াই। মুক্তিযোদ্ধা বাউল শিল্পী জ্বালাল দেওয়ানের দোতারা ওটি। তিনি শরণার্থী শিবিরগুলোতে এই দোতারা বাজিয়ে উদ্দীপনার গান শোনাতেন।
শহীদ বুদ্ধিজীবীদের ব্যবহৃত জিনিসপত্রের একটা অধ্যায় ছিল; মুক্তিযোদ্ধাদেরও অমন একটা পরিচ্ছেদ আছে। আমি সবকিছু দেখেছি, সবকিছু সত্য– একদা যদিও মনে হলো এইসব অদৃশ্য বোঝার ভার আমি আর কতটুকু বা কেন আমি নিতে যাব। এর একটা বেদনা আছে, এর একটা ভার আছে তা বয়ে বেড়ানো যে আমার পক্ষে অত সহজ নয়, সেটাই পরিশেষে উপলব্ধি হলো।
আমি অগ্রসর হতে থাকি। কোথাও একটু বেশি দাঁড়াই; মুক্তিযুদ্ধে ব্যবহৃত সেই হাতে বানানো সাইক্লোস্টাইল, যোদ্ধা লিয়াকত আলী নামক ব্যক্তির লুঙ্গি। চট্টগ্রামে ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে লড়াইয়ে শহীদ রণজিৎ কুমার মজুমদারের বিজয়ের দিনে শহীদ হওয়া রক্তমাখা শার্ট। রেডিও ট্রান্সমিটার, যা ব্যবহৃত হয়েছিল বিশ্ব সংবাদ সংগ্রহে কোথায় মুক্তিযুদ্ধের প্রচার হয়েছে। ডক্টর ফজলে রাবির সেই গাড়িটি, যেটি দিয়ে তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা ও অন্যান্য সহায়তা দিতেন।
একটি নৌকা কমান্ডোরা ব্যবহার করতেন তাদের অপারেশন সহযোগী হিসেবে। এরপর প্রামাণ্য জর্জ হ্যারিসনের নিউইয়র্কে বাংলাদেশ কনসার্ট, যোদ্ধাদের মাঠে যুদ্ধের ছবি, নারী নির্যাতন, ধর্ষণ পর্ব, মিত্র বাহিনী এবং সবশেষে আত্মসমর্পণের ছবিসমূহ।
একবারে শেষের দিকে একটা অংশে এসে মনে হলো আমি বোধ হয় এই জাদুঘর কর্তৃপক্ষের একজনের সঙ্গে কথা বলতে পারি একটা কৌতূহল নিয়ে। আমি একজনকে চিনিও, যিনি এই জাদুঘরের জন্মের সঙ্গে জড়িত। কার্যালয়ে গিয়ে জানলাম, তিনি বাইরে গেছেন; আবার ফিরবেন ৪টার দিকে। মনে হলো অতক্ষণ থাকি কিনা। তারপর জাদুঘরে বাইরে এসে মফিদুল হককে ফোন করলাম। তিনি বললেন, আমি যেনও থাকি, একেবারে ওপরের তলার গ্যালারিতে আরেকটি প্রদর্শনী চলছে রোহিঙ্গাদের শিল্পকর্মের ওপর, আমি যেন সেটা দেখি; যা এসএভিই সংগঠিত ‘আর্টস অ্যাগেইনস্ট রোহিঙ্গা’ শিরোনামে। আমি তাই করলাম। এর মধ্যে তিনি এলেন। জানালাম যে আমি মুক্তিযুদ্ধের ওপর কিছু কাজ করতে চাই। তার সঙ্গে আমার এর আগে দুইবার দেখা হয়েছিল সেটাও বললাম– একবার নিউইয়র্কে হাসান ফেরদৌস পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন, আর একবার ২০০৬ অথবা ২০০৭-এর সেগুনবাগিচা থাকাকালে এই জাদুঘরে। মফিদুল ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলে আমি বেরিয়ে এলাম জাদুঘরের ঢালু ধাপগুলো বেয়ে। এ যদি একটা ধরে রাখার দৃশ্য হয়ে থাকত তবে দেখা যাবে– এই মানুষটি সিঁড়ি ধরে নামছে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর হতে। ক্যামেরাটা যথাসম্ভব দূরে সরে যাচ্ছে যদি তা সমান্তরাল হয়; আর যদি তা ড্রোন হয় তবে ক্যামেরা লয়ে সেই ড্রোন আকাশে মিলাবে যতদূর সম্ভব, যতক্ষণ না পর্যন্ত তা দৃষ্টির অগোচর হয়ে থাকে। তারপর দৃশ্যমান পর্দায় হয় সেই শূন্য পর্দায় স্থির হবে বা অন্ধকার হবে যেন এক অজানা ‘নো ম্যান্স ল্যান্ড’ (জনমানবহীন অর্থে)।
লেখক
কথাশিল্পী
চলচ্চিত্রকার
- বিষয় :
- স্বাধীনতা