ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

মিয়ানমার এখন জান্তাপ্রধানের পারিবারিক কোম্পানি

জেনারেল হ্লাইং ও সন্তানদের সম্পদের পাহাড়

মিয়ানমার এখন জান্তাপ্রধানের পারিবারিক কোম্পানি

মিয়ানমারের সেনাশাসক মিন অং হ্লাইং- সংগৃহীত ছবি

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ | ০৩:০৯

মিয়ানমারের সেনাশাসক মিন অং হ্লাইং দেশটিকে পৃথিবীর নরকে পরিণত করেছেন। গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারকে ২০২১ সালে উৎখাতের পর ক্ষমতা দখল করে তিনি দেশটিকে পরিণত করেছেন পারিবারিক ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে। দেশের চরম খারাপ পরিস্থিতিতেও তিনি ও তাঁর পরিবার লাভবান হতে লজ্জা পান না। জান্তাপ্রধানকে সামরিক পোশাকের এক সুবিধাবাদী ব্যবসায়ী বলে মনে করেন অনেকে। খবর ইরাবতীর।

গত তিন বছরের শাসনামলে তিনি গড়েছেন সম্পদের পাহাড়। যেসব এলাকার জমির দাম আকাশচুম্বী, সেসব এলাকায় জমি নিজের নামে নিয়েছেন। ছেলেমেয়েসহ পরিবারের সদস্যরাও তাঁর ক্ষমতাবলে পেয়েছেন আলাদিনের চেরাগ।

দেশের লাখ লাখ মানুষ যখন চরম দুর্ভোগে, তখন সেদিকে দৃষ্টি না দিয়ে মিন অং হ্লাইং ও তাঁর দুই সন্তান সম্পদের পাহাড় গড়ায় ব্যস্ত। তাঁর ছেলে অং পায়ে সোনে ও মেয়ে খিন থিরি থেট মন– দু’জনই চরম লোভী। তাদের লোভের মাত্রা দেশটির আগের যে কোনো স্বৈরশাসকের সন্তানদের চেয়ে বেশি।

সাবেক স্বৈরশাসক থান শোয়ের কুখ্যাত নাতি না শ্বে থওয়ে অং স্কুলে যাওয়ার জন্য সামরিক হেলিকপ্টারে প্রতিদিন সিঙ্গাপুরে যেত। হ্লাইংয়ের দুই সন্তান তার চেয়েও বেশি সুবিধাভোগী।

সামরিক শাসকের পারিবারিক ব্যবসা পরিচালিত হয় ছেলে অং পায়ে সোনের মাধ্যমে। কীভাবে বাবার ক্ষমতাকে ব্যবহার করে লাভবান হওয়া যায়, তা তিনি এক উচ্চাভিলাষী জেনারেলের মাধ্যমে শিখেছিলেন। সেই কর্মকর্তা হলেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল মিন নাইং। সামরিক নিয়ন্ত্রিত মিয়ানমার ইকোনমিক করপোরেশনের বাস্তবায়িত প্রকল্পগুলো দখল করতে তিনি অং পায়ে সোনকে তাঁর বাবার অবস্থান ব্যবহার করতে সহায়তা করেছেন।

সামরিক সূত্র জানিয়েছে, ছেলেমেয়ে এখন ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য সামরিক বিমানসহ রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সম্পত্তি ব্যবহার করছেন।

একজন সেনা কর্মকর্তা বলেন, ‘একদিন আমাকে বলা হয়েছিল জান্তাপ্রধানের পরিবার আসছে, বিমানবন্দরে নিরাপত্তা দিতে হবে। কিন্তু বিমানে শুধু তাঁর ছেলেমেয়ে ছিল। এতে আমি বেশ হতবাক হয়ে গিয়েছিলাম।’

এদিকে, অভ্যুত্থানের পরপরই যুক্তরাষ্ট্র জেনারেল হ্লাইংয়ের ছেলেমেয়ের মালিকানাধীন ছয়টি ব্যবসার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এর মধ্যে চারটি ছিল ছেলের। বাকি দুটি মেয়ের।

এমন কোনো খাত নেই যেখানে বাবার ক্ষমতা ব্যবহার করে এই দু’জন ব্যবসা করছেন না। এর মধ্যে টেলিকম, হোটেল, বাস টার্মিনাল, চলচ্চিত্রসহ আরও কত কী।

এক কর্মকর্তা জানান, তাদের একাধিক সহযোগী প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। বারবার একই প্রতিষ্ঠান কাজ পেলে দুর্নীতি হয়েছে বলে প্রমাণিত হবে। এই ধারণা যাতে পরিষ্কার না হয়, সেজন্য একেকবার একেক কোম্পানিকে কাজ পাইয়ে দেওয়া হয়।   এভাবে গোটা দেশের মানচিত্রের মালিকই এখন এই জান্তাপ্রধান ও তাঁর পরিবার।

এদিকে, এখনও জান্তা বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহীদের লড়াই চলছে। গত বুধবার শুরু হওয়া লড়াইয়ে বাগো অঞ্চলে বৌদ্ধ সন্ন্যাসী, শিশুসহ অন্তত ১৫ জন বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া এক অন্তঃসত্ত্বাসহ তিন বাস্তুচ্যুত নারী এবং ১০ বছরের কম বয়সী তিনজন শিশু চলতি সপ্তাহের শুরুতে কারেননি রাজ্যের শাদাও শহরে সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন। কারেনি আর্মি (কেএ) এ তথ্য জানায়। 
অন্যদিকে, ম্যাগওয়ে অঞ্চলের একটি গ্রামে দুই জান্তাবিরোধী যোদ্ধাকে জনসমক্ষে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে। প্রায় তিন মাস আগের এই ঘটনার ভিডিও গত মঙ্গলবার অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ে। দু’জনকে গাছে ঝুলিয়ে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। এর জন্য জান্তা সেনা ও তাদের সহযোগীদের দায়ী করেছে স্থানীয় বিদ্রোহী গ্রুপ।

আরও পড়ুন

×