ট্রাম্পের শুল্ক বহাল রাখার নির্দেশ আপিল আদালতের
বাণিজ্যনীতিতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষতি ৩৪ বিলিয়ন ডলার

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ৩০ মে ২০২৫ | ২২:০৮
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কনীতি বহাল রাখার পক্ষে রায় দিয়েছেন দেশটির আপিল আদালত। ট্রাম্পের আরোপিত ব্যাপক শুল্ক বাণিজ্য আদালতে স্থগিতের সিদ্ধান্ত দেওয়ার পরদিন বৃহস্পতিবার এই পাল্টা রায় দেওয়া হয়।
মার্কিন আপিল আদালতের সিদ্ধান্তে বলা হয়, পুরো আপিল প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার আগ পর্যন্ত নিম্ন আদালতের রায় স্থগিত রাখার আদেশ দেওয়া হলো। নিজ বক্তব্য পেশ করার জন্য বাদী পক্ষকে ৫ জুন এবং সরকার পক্ষকে ৯ জুন সময় দেওয়া হয় বলে রয়টার্স জানায়।
মার্কিন আন্তর্জাতিক বাণিজ্য আদালত বুধবার জানায়, এখতিয়ারবহির্ভূতভাবে শুল্ক আরোপ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। জাতীয় হুমকি মোকাবিলার উদ্দেশ্যে সৃষ্ট আন্তর্জাতিক জরুরি অর্থনৈতিক ক্ষমতা আইন ব্যবহার করে তিনি শুল্ক আরোপ করেছেন। অথচ মার্কিন সংবিধান অনুযায়ী শুল্ক আরোপের অধিকার কংগ্রেসের হাতে বর্তায়।
গত এপ্রিলে ব্যাপক হারে শুল্ক আরোপ করেন ট্রাম্প। ওই নীতিকে তিনি স্বাধীনতা দিবসের শুল্ক (লিবারেশন ডে ট্যারিফ) নামে অভিহিত করেছেন। এগুলোর আওতায় কানাডা, মেক্সিকো, চীনসহ অনেক দেশের ওপর নতুন শুল্ক আরোপ করা হয়। ট্রাম্প দাবি করেন, এসব দেশ যুক্তরাষ্ট্রে ফেন্টানিলসহ মাদকদ্রব্য প্রবাহে ভূমিকা রাখছে, তাই তিনি জরুরি ভিত্তিতে ট্যারিফ আরোপের সিদ্ধান্ত নেন। বাণিজ্য আদালতের গতকালের রায়ে ট্রাম্পের শুল্ক বাতিল বা অন্তত সাময়িকভাবে স্থগিতের সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়।
ওই রায়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান ট্রাম্প। দেশকে হুমকির মুখে ফেলা ভয়াবহ ওই সিদ্ধান্তকে সর্বোচ্চ আদালত পাল্টে দেবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি বলেন, ওই ভয়াবহ সিদ্ধান্তে বলা হলো, শুল্ক আরোপ করতে আমাকে নাকি কংগ্রেসের অনুমতি নিতে হবে। সুপ্রিম কোর্টের উচিত দ্রুত ও দৃঢ়ভাবে এ আদেশ বাতিল করা। এই সিদ্ধান্ত বহাল থাকলে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা পুরোপুরি ধূলিসাত হয়ে যাবে। ‘গোপন চক্রান্তকারীদের আমাদের দেশকে ধ্বংস করার সুযোগ দেওয়া যাবে না।’ তিনি নিজেই ‘পক্ষপাতদুষ্ট’ বিচার ব্যবস্থার শিকার বলেও উল্লেখ করেন।
ট্রাম্পের বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে বিশ্বের বৃহত্তম ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোও চাপের মুখে পড়েছে।
রয়টার্সের এক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বাড়তি শুল্কের কারণে বিক্রি হ্রাস বা ব্যয় বৃদ্ধির কারণে ইতোমধ্যেই প্রায় ৩৪ বিলিয়ন বা তিন হাজার ৪০০ কোটি ডলার হারিয়েছে প্রতিষ্ঠানগুলো। চলমান অনিশ্চয়তার কারণে সামনের দিনগুলোতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
রয়টার্সের বিশ্লেষণ করা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে এস অ্যান্ড পি ৫০০-এর ৩২টি প্রতিষ্ঠান, ইউরোপের এসটিওএক্সএক্স ৬০০-এর তিনটি প্রতিষ্ঠান এবং জাপানের নিক্কেই ২২৫ সূচকের ২১টি প্রতিষ্ঠান।
যুক্তরাষ্ট্র, এশিয়া এবং ইউরোপের একাধিক প্রতিষ্ঠান তাদের মুনাফার পূর্বাভাস আপাতত কমিয়ে রেখেছে, এমনকি অনেকে পুরোপুরি প্রত্যাহারই করে নিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে অ্যাপল, ফোর্ড, পোরশে, সনি ইত্যাদি। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের অভিযোগ, ট্রাম্পের খামখেয়ালি বাণিজ্যনীতির কারণে প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যয় নির্ধারণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে।