ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

উত্তেজনার মধ্যে ফোনালাপ ব্লিংকেন-ল্যাভরভের

উত্তেজনার মধ্যে ফোনালাপ ব্লিংকেন-ল্যাভরভের

ফাইল ছবি

সমকাল ডেস্ক

প্রকাশ: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২২ | ০০:২২

ইউক্রেন সংকট নিয়ে জাতিসংঘে রুশ দূতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিকের উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়ের পর দিন দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ফোনালাপ হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিংকেন।

ইউক্রেন সীমান্তে লক্ষাধিক রুশ সেনা ও সমরাস্ত্র মোতায়েনের পর যুদ্ধের আশঙ্কার মধ্যেই বিশ্বের দুই শক্তিধর দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের ভার্চুয়াল বৈঠক হয়েছে। এ সংকট ঘিরে বর্তমানে পশ্চিমারা রাশিয়ার মুখোমুখি অবস্থান করছে। পরস্পরকে হুমকি দিচ্ছে। এমন প্রেক্ষাপটে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভদ্মাদিমির পুতিনের সহযোগীদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পরিকল্পনা করছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে নিষেধাজ্ঞার হুমকিতে রাশিয়া পিছপা হবে না বলে জানিয়েছেন দেশটির কূটনীতিকরা। কিয়েভের মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, যাই হোক না কেন, আমরা সব রকম পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত আছি। এ প্রেক্ষাপটে গতকাল ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে পূর্ণ সমর্থনের কথা জানিয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ও পোলিশ প্রধানমন্ত্রী। এমন দিনে পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন পশ্চিমাদের সামরিক জোট ন্যাটো ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সদস্য হাঙ্গারির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর ওরবান। সেনা সমাবেশকে কেন্দ্র করে কিয়েভের প্রতি পূর্ণ সমর্থন প্রদর্শন এবং আক্রমণ ঠেকাতে ন্যাটোর মিত্রদের তৎপরতায় সামরিক উত্তেজনা বাড়ছে।

গতকাল ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ও পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মাতিউজস মোরাউয়েস্কি কিয়েভে জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠক করেছেন। পরে ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব সমুন্নত রাখার প্রতিশ্রুতি দেন জনসন। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট বলেছেন, ২০১৪ সালে রাশিয়া ক্রিমিয়া দখলে নেওয়ার পর থেকে বর্তমানেই পশ্চিমাদের সবচেয়ে কূটনৈতিক ও সামরিক সমর্থন পাচ্ছে কিয়েভ। তাদের সেনাবাহিনীর আকার বাড়ছে, তবে এটির মানে সংঘাত আসন্ন নয়।

গত বছরের শেষ দিকে ইউক্রেন সীমান্তে রুশ সেনা মোতায়েনের পর মস্কোর বিরুদ্ধে সামরিক আগ্রাসনের পরিকল্পনার অভিযোগ তুলে আসছে পশ্চিমারা। তবে রাশিয়া শুরু থেকেই এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। তাদের দাবি, সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নভুক্ত ইউক্রেনকে ন্যাটোর সদস্য হওয়ার অনুমতি দেবে না তারা। পাশাপাশি ভবিষ্যতে যাতে কখনও ওই জোটের সদস্য হতে না পারে দেশটি তার জন্য যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাদের লিখিত প্রতিশ্রুতি চায় মস্কো।
সোমবার নিরাপত্তা পরিষদের আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত লিন্ডা টমাস-গ্রিনফিল্ড বলেছেন, রাশিয়া যে পরিমাণ সেনা সমাবেশ করেছে ইউরোপ গত কয়েক দশকে তেমনটা দেখেনি। এর জবাবে রুশ রাষ্ট্রদূত ভাসিলি নিবেনজা বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র আতঙ্ক ছড়াচ্ছে এবং মস্কোর বিষয়ে 'অগ্রহণযোগ্য হস্তক্ষেপ' করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, রাশিয়া যে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে এর কোনো প্রমাণ নেই।

যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত বলেছেন, রাশিয়া বর্তমানে বেলারুশ-ইউক্রেন সীমান্তে আরও ৩০ হাজার সৈন্য সমাবেশের পরিকল্পনা করছে। ওয়াশিংটনের এ অভিযোগকে বায়বীয় বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন রুশ দূত।

উত্তেজনা শুরুর পরই রাশিয়ার ওপর স্মরণকালের বড় নিষেধজ্ঞা দেওয়ার হুমকি দিয়ে আসছে পশ্চিমারা। গত মাসে এমনকি প্রেসিডেন্ট পুতিনের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার হুমকি দেন বাইডেন। এরই মধ্যে সোমবার রুশ প্রেসিডেন্টের ঘনিষ্ঠদের বিশেষ করে প্রভাবশালী ব্যবসায়ীদের ওপর নিষেধাজ্ঞার হুমকি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য।

এর জবাবে যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত রুশ রাষ্ট্রদূত বলেছেন, নিজ দেশের সব স্থানে সেনা সমাবেশের অধিকার রয়েছে মস্কোর। যতই নিষেধাজ্ঞার হুমকি দেওয়া হোক না কেন, রাশিয়া তার অবস্থান থেকে পিছপা হবে না। সংঘাতের আশঙ্কা প্রকাশ করে নতুন করে সামরিক অস্ত্র পাঠাচ্ছে বলে সোমবার জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। এমন প্রেক্ষাপটে বাইডেন বলেছেন, 'আমরা ইউক্রেন সংকটকে কূটনৈতিকভাবে সমাধানে জোর দিচ্ছি। তবে রাশিয়াকে সতর্ক করছি, যাই ঘটুক না কেন, আমরা তা মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত আছি।' ইউক্রেন নিয়ে যখন ন্যাটো, ইইউ, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাগ্‌যুদ্ধ চলছে, সামরিক উত্তেজনা বাড়ছে, তখন মস্কোয় পুতিনের সঙ্গে বৈঠকে বসেছেন এই জোটের মিত্র হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী। ক্রেমলিন বলেছে, ইউরোপের নিরাপত্তা নিশ্চিতের বর্তমান সংকটের পাশাপাশি বাণিজ্য ও জ্বালানি নিয়ে আলোচনা করেছেন তারা। হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর বলেছেন, রাশিয়া থেকে গ্যাস আমদানিতে চুক্তি চান তিনি। খবর এএফপি, রয়টার্স ও এনডিটিভির।

আরও পড়ুন

×