ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫

বাংলা লোকসাহিত্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণ

বাংলা লোকসাহিত্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণ

অমিত হাসান 

প্রকাশ: ০৪ মে ২০২৪ | ০৮:৩৮

‘ঘুমপাড়ানি মাসি-পিসি মোদের বাড়ি এসো,/ বাটাভরা পান দেবো গাল ভরে খেয়ো’– এ রকম ছড়া অথবা ‘এক যে ছিল রাজা। রাজার সাত রানী– ছোট রানী, মেজো রানী, সেজো রানী ...’ অথবা ‘হাউ মাউ খাউ মানুষের গন্ধ পাও ...’ এ রকম গল্প বা লোককথা শোনেনি; বাংলাদেশে জন্ম নেওয়া এমন মানুষ হয়তো পাওয়া যাবে না। বাংলাদেশের গ্রাম-গঞ্জে, আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে আছে এমন শত শত ছড়া, কবিতা, গল্প, গান। আর বাংলা সাহিত্যেও সৃষ্টি হয়েছে স্বতন্ত্র একটি শাখা– বাংলা লোকসাহিত্য। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ও লোকসাহিত্য সংগ্রহ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ মতামত দিয়েছিলেন তাঁর বিখ্যাত ‘পল্লীসাহিত্য’ প্রবন্ধে। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর মতে, ‘পল্লীর ঘাটে মাঠে, পল্লীর আলোবাতাসে, পল্লীর প্রত্যেক পরতে পরতে সাহিত্য ছড়িয়ে আছে। কিন্তু বাতাসের মধ্যে বাস করে যেমন আমরা ভুলে যাই বায়ু সাগরে ডুবে আছি, তেমনি পাড়াগাঁয়ে থেকে আমাদের মনেই হয় না যে কত বড় সাহিত্য ও সাহিত্যের উপকরণ ছড়িয়ে আছে।’ সাহিত্য সমালোচকেরা বলে থাকেন লোকসাহিত্য বুদ্ধিপ্রসূত কোনো একজনের ভাবনা নয় বরং তা আবেগ অনুভূতিজাত সমষ্টি মনের ফসল। 
ব্রিটিশ শাসনামলে ইংরেজরাই প্রথম এই বাংলা লোকসাহিত্যগুলো সংগ্রহের উদ্যোগ নেন। জেমস লঙ, উইলিয়াম মর্টন কিংবা জর্জ গ্রিয়ারসনদের অবদানের কথা এ ক্ষেত্রে উল্লেখ করা যায়। পরবর্তী সময়ে সাময়িক পত্রগুলোও নিজেদের পুরোনো শিল্প-সংস্কৃতি খুঁজে বের করে সংগ্রহ করার গুরুত্ব অনুধাবন করতে থাকে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ছেলে ভুলানো ছড়া’, যোগেন্দ্রনাথ সরকারের ‘খুকুমণির ছড়া’, উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর ‘টুনটুনির বই’, দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদারের ‘ঠাকুরমার ঝুলি’, ‘ঠাকুরদাদার ঝুলি’, ‘ঠাকুরদিদির ঝুলি’ ইত্যাদি গ্রন্থ বাংলা লোকসাহিত্যের এক অমূল্য সম্পদ। 
আমাদের লোকসাহিত্য যথেষ্ট সমৃদ্ধ। এর জন্মভূমি গ্রামে হলেও শহরে লোকসাহিত্য কোনোভাবেই অপরিচিত কিছু নয়। যে কারণে লোকসাহিত্য প্রাচীন ঐতিহ্যের নিদর্শন হলেও এর আবেদন সর্বজনীন। তাই একবিংশ শতাব্দীর এই সময়েও লোকসাহিত্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা একটুও কমেনি।

nশিক্ষার্থী, ঢাকা কলেজ, ঢাকা

আরও পড়ুন

×