ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

শিক্ষকদের পাঠাগারমুখী করার উপায়

শিক্ষকদের পাঠাগারমুখী করার উপায়

আনিসুল হোসেন

প্রকাশ: ০৮ জুন ২০২৪ | ০০:৩৬

বর্তমানে সরকারি পর্যায়ে বিভিন্নমুখী প্রচেষ্টা চলছে নতুন প্রজন্মকে বই পাঠে উদ্বুদ্ধ ও পাঠাগারমুখী করতে। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠাগার গড়ে তুলতে বই দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সরকারি গণগ্রন্থাগারের আধুনিকায়ন ও ডিজিটালাইজেশনের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত পাঠাগারকেও সহযোগিতা করা হচ্ছে। মূল লক্ষ্য নতুন প্রজন্মকে পাঠাগারমুখী করা। 
কিন্তু পাঠক কি তৈরি হচ্ছে? আমি ব্যক্তিগতভাবে দীর্ঘদিন একটি পাঠাগারের সঙ্গে সম্পৃক্ত। প্রায় ১৪ হাজার বই রয়েছে এখানে। প্রতি মাসে গ্রন্থাগারিকদের বেতন ও অন্যান্য খরচ মিলিয়ে ১ লাখ টাকা ব্যয় হয়। বাস্তবতা হলো, পাঠাগার প্রায়ই পাঠকশূন্য থাকে। পাঠাগারে যারা আসেন অধিকাংশই চাকরির বাজারের জন্য প্রস্তুতি নিতে। তারা গাইড বই মুখস্থ করার একটি সুন্দর নিরিবিলি পরিবেশ হিসেবে বেছে নেন পাঠাগারকে।
আমাদের পাঠাগারে নতুন প্রজন্মের মধ্যে পাঠাভ্যাস গড়ে তুলতে ১২ বছর আগে স্কুলে লাইব্রেরি ক্লাস বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল। কিন্তু অবাক বিষয়, এর মধ্যে হাতেগোনা দু-একজন হয়তো এসে বই পড়ে। সপ্তাহের প্রতি শনিবার পাঠচক্র আয়োজন, বই পাঠ কর্মসূচির মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের কিছু পাঠক তৈরি হলেও তাদের বই পড়ার অভ্যাসটি দীর্ঘস্থায়ী হয় না। 
এ ছাড়া শিক্ষকদের মধ্যে পাঠাভ্যাস না থাকার কারণেও তারা শিক্ষার্থীদের মধ্যে পাঠাভ্যাসে আগ্রহী করে তুলতে পারেন না। শিক্ষকরাও একই শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে এসেছেন এবং প্রতিযোগিতামূলক চাকরিতে নিয়োগপ্রাপ্ত। পরীক্ষায় ভালো ফল এমনকি চাকরি পাওয়ার জন্য জ্ঞানচর্চা নয়, গাইড বই মুখস্থ করতে হয়েছে। সৃজনশীলতার বিষয়টি কখনোই মূল্যায়ন করা হয়নি। প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের একজন শিক্ষককে একাডেমিক ক্লাস নেওয়ার আগে প্রস্তুতি নিতে হয় এবং জ্ঞানচর্চার মধ্যে থাকতে হয়। এই জ্ঞানচর্চার জায়গাটিই হলো একটি গ্রন্থাগার। আমাদের দেশে পাঠাগার বলতে যে বিষয়টি সবার মধ্যে কাজ করে তা হলো– গল্প, উপন্যাস ও কবিতার বই নিদেনপক্ষে প্রবন্ধ নিয়ে পড়াশোনা। এগুলো আমাদের এখানে আউট বই হিসেবে স্বীকৃত। অথচ স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে একাডেমিক শিক্ষায় সহায়ক হিসেবেও যে পাঠাগারের ব্যবহার গুরুত্বপূর্ণ, সেটা গড়ে ওঠেনি। মনে রাখতে হবে, পাঠাগার শুধু সাহিত্য নয়, সব পর্যায়ের জ্ঞানচর্চার উৎকৃষ্ট জায়গা। একটি জাতি সভ্যতার দিকে এগিয়ে যায়, যখন সেই জাতির মধ্যে দার্শনিক সৃষ্টি হয়।  

nসম্পাদক, শহীদ বাকী স্মৃতি পাঠাগার, খিলগাঁও, ঢাকা
[email protected]

আরও পড়ুন

×