ঢাকা সোমবার, ০৭ জুলাই ২০২৫

পাগলার মেলা

পাগলার মেলা

ঐতিহ্যবাহী পাগলার মেলা আজও সমহিমায় টিকে আছে ছবি: লেখক

হাসান মাহমুদ রিপন

প্রকাশ: ০৪ মে ২০২৪ | ০৮:২৬

বিচিত্র এক মেলার নাম ‘পাগলার মেলা’। সোনারগাঁয়ে হামছাদী গ্রামের বটতলায় বসে এ মেলা। এ মেলার উৎপত্তি প্রায় ৫০০ বছর আগে।
কথিত আছে, স্থানীয় ফণী সেন ও সুরেন্দ্র সেন নামে দুই ভাই বসতঘর নির্মাণের জন্য বার্মা (মিয়ানমার) থেকে ২০টি গাছের খুঁটি কিনে আনেন। এর মধ্যে দুটি খুঁটি জ্যৈষ্ঠ মাসের ১ তারিখ রাতে ফণী সেনের বাড়ি থেকে ৫০০ গজ দূরে পুকুরপাড়ে পড়ে থাকতে দেখা যায় এবং ওই রাতেই ফণী সেন ও সুরেন্দ্র সেন স্বপ্নে দেখেন, খুঁটি দুটি প্রাণ ফিরে পেয়ে ‘পাগল’ রূপ ধারণ করেছে। স্বপ্নের মধ্যে পাগল রূপধারী খুঁটি তাদের উদ্দেশে বলছিল, ‘আমাকে ঘরের খুঁটির কাজে লাগিও না। আমি তোমাদের দেবতা, আমার উপাসনা করো, এতে তোমাদের মঙ্গল হবে। পাপ থেকে মুক্তি লাভ করবে, রোগ নিরাময় হবে।’
এ ঘটনার পর প্রায় ৫০০ বছর ধরে সনাতন ধর্মাবলম্বী মানুষ স্বপ্নে পাওয়া খুঁটি পাগলার আদেশ, উপদেশ, সেবা, চিকিৎসা পেতে সেখানে দলে দলে ছুটে যান। সেই খুঁটি পূজামণ্ডপের পার্শ্ববর্তী একটি পুকুরে রয়েছে। একটি খুঁটি নষ্ট হয়ে গেলেও অপরটি এখনও রয়েছে। জ্যৈষ্ঠ মাসের ১ তারিখে ভক্তরা পুকুর থেকে খুঁটিটি উঠিয়ে বটগাছের নিচে রেখে দুধ দিয়ে স্নান করানোর পর ফলফলাদির ভোগ দেন। পরে পাগলার নামে খাসি ও পাঁঠা বলি দিয়ে উৎসর্গ করে নানা আচার অনুষ্ঠান চলে। তিন দিনের পূজা ও মেলা শেষে খুঁটিকে ফের পানিতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়। ৩১ বৈশাখ দুপুরে পাগলার মেলার প্রস্তুতি শুরু হয়। মেলায় প্রদর্শন ও বিক্রির জন্য বসে বারোয়ারি দোকান। দোকানে বাঁশি, চুড়ি, কসমেটিক সামগ্রী, নকশিকাঁথা, বায়োস্কোপ, খেলনা, চেয়ার, পিঁড়ি, জলচৌকি, কাঠের বিভিন্ন হস্তসামগ্রীর পসরা সাজিয়ে বসেন দোকানিরা। খাদ্যদ্রব্যের মধ্যে থাকে জিলাপি, আমিত্তি, চটপটি, পিঠা, ঝালমুড়ি, সন্দেশ, বাতাসা, বিন্নি ধানের খই প্রভৃতি। মেলায় পালাগান, জারি, মুর্শিদি, ভাওয়াইয়া, হাসন রাজার গান, বানর নাচ, গীতা পাঠ, কীর্তন পরিবেশন ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। মেলায় লক্ষণীয়ভাবে সব ধর্মের মানুষের উপস্থিতি থাকে।
হামছাদী গ্রামের আবদুল ওয়াদুদ মিয়া জানান, এ মেলা সনাতন সম্প্রদায়ের হলেও গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে আত্মীয়স্বজনের মিলনমেলায় উৎসবে পরিণত হয়।
পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি কেশব চন্দ্র দাস জানান, প্রতিবছরই মেলায় বিপুলসংখ্যক ভক্তের আগমন ঘটে। সন্ধ্যার পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত মেলায় গীতা পাঠ, কীর্তনসহ সনাতন ধর্মের
বিভিন্ন সংগীত পরিবেশন 
করা হয়। v

আরও পড়ুন

×