ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫

একজন ফড়িং গবেষক

একজন ফড়িং গবেষক

মুহাম্মদ শফিকুর রহমান

প্রকাশ: ২৫ মে ২০২৪ | ০০:৫৮

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বন্যপ্রাণী জীববিদ্যা বিষয়ে স্নাতকোত্তর করেছেন আশিকুর রহমান সমী। ফড়িংয়ের নতুন কয়েকটি প্রজাতি আবিষ্কারে তাঁর মুখ্য ভূমিকা ছিল। সমী বর্তমানে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসেসে (সিইজিআইএস) বন্যপ্রাণী পরিবেশবিদ হিসেবে কর্মরত।
বরিশালের সন্ধ্যা নদীর তীরে লাকুটিয়া গ্রামে সমীর জন্ম, সেখানেই কেটেছে শৈশব। বাবার চাকরির সূত্রে দেশের বিভিন্ন জেলা ঘুরে ঘুরে বড় হয়েছেন। ১৩টি স্কুল, ২টি কলেজে পড়েছেন। জীববৈচিত্র্য নিয়ে গবেষণার পেছনে রয়েছে ছোটবেলা থেকেই প্রাণ-প্রকৃতি, বন্যপ্রাণীর প্রতি সমীর নিদারুণ আগ্রহ। গবেষণাকে গুরুত্ব দেওয়া প্রসঙ্গে সমী বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে ইচ্ছে ছিল এমন কিছু করা, যা পৃথিবীর কাজে লাগবে। একটা সময় ডাক্তার হওয়ার প্রবল ইচ্ছে থাকলেও বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে উপলব্ধি করি বন্যপ্রাণী নিয়ে গবেষণায় থাকলে আমার পৃথিবীটা অনেক বড় হবে। স্বপ্নটাকে অনেক বড় করে দেখতে শিখেছি। এর জন্য আমি সর্বোচ্চটা দিতে প্রস্তুত। আমার স্বপ্নে যেন হাজারটা ছেলেমেয়ে সাহস পায়। একদিন পৃথিবীকে আমার কাজের গল্প, বাংলাদেশের বন্যপ্রাণীর অজানা তথ্য বলতে হবে। এ জন্যই গবেষণাকে গুরুত্ব দিয়েছি এবং এই পথটা বেছে নিয়েছি।’
হাতের লেখা ভালো নয়– এমন অজুহাতে দ্বিতীয় বর্ষে থাকতে মাঠ পর্যায়ের এক গবেষণা থেকে সমীকে বাদ দেওয়া হয়। তিনি তখন গবেষণায় আরও জোর দেন। ডিপার্টমেন্টের অগ্রজ শাওন চৌধুরীর সঙ্গে ফড়িং নিয়ে গবেষণায় কাপ্তাই যান। গবেষণার কাজে বিভিন্ন সময় সাহায্য নেন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ফিরোজ জামানসহ অনেক শিক্ষক ও অন্যদের থেকে। একপর্যায়ে সাফল্য অর্জন করেন সমী। তাঁর প্রথম গবেষণাপত্র নিবন্ধ প্রকাশিত হয় জার্মানি থেকে, যার বিষয় ছিল দক্ষিণ এশিয়ার কোনো ফড়িংয়ে পাওয়া বিশেষ বৈশিষ্ট্য।  
ফড়িং সমীর খুব পছন্দ। ছোট থেকেই রংবাহারি এই পতঙ্গকে ভালো লাগে তাঁর। সম্প্রতি ফড়িংয়ের তিনটি প্রজাতি আবিষ্কার হয়। এ গবেষণার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন মোহাম্মদ ফিরোজ জামান ও আশিকুর রহমান সমী। তিন প্রজাতির বৈজ্ঞানিক নাম দেওয়া হয়েছে ফাইলোথেমিস এল্টোনি, ইলাটোনেরা ক্যাম্পিওনি ও অ্যানাক্স এফিপিগার। ফড়িংগুলো পাওয়া গেছে টেংরাগিরি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য, কুয়াকাটা জাতীয় উদ্যান, পাথরঘাটা জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এলাকা, চর কুকরি-মুকরি ও সিলেট অঞ্চলের আন্তঃসীমানা এলাকার পাহাড়ি ছড়ায়। মাঠ পর্যায়ে কাজের জন্যই ডিপার্টমেন্টের জুনিয়র-সিনিয়ররা সমীকে চেনেন। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ গবেষকদের তিনি এ কাজে সহযোগিতাও করছেন।
নিজের লেখা প্রসঙ্গে সমী বলেন, ‘আমি যে গবেষণাগুলোর সঙ্গে যুক্ত আমার একটা সময় উপলব্ধি হলো, সাধারণ মানুষ তো এসব কঠিন ইংলিশ পড়বে না কিংবা বুঝবেও না। তাই তাদের কাছে গবেষণার ফলাফল পৌঁছাতে হবে। এটার মাধ্যম হতে পারে খুব সহজ ভাষায় লেখা। এ চিন্তা থেকেই বাংলায় লিখি।’
নতুন যারা গবেষণা করতে চান, তাদের জন্য সমীর পরামর্শ হলো– ‘জীববৈচিত্র্য নিয়ে গবেষণা করতে হলে আপনাকে মন থেকে এ কাজে আসতে হবে। মন থেকে প্রাণ-প্রকৃতিকে ভালোবাসতে হবে। নিজের লক্ষ্যে অবিচল থাকতে হবে। তা না হলে গবেষণা থেকে একসময় সরে যেতে হবে।’ v

আরও পড়ুন

×