চাক জালের হাট

চাক জালের হাট
রুবেল নাহিদ
প্রকাশ: ২৩ আগস্ট ২০২৪ | ২৩:৩০
উপকূলীয় জেলা পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলায় বর্ষা মৌসুমে নদীগুলোতে পানি বাড়াতে খাল-বিলসহ ফসলের মাঠ নতুন পানিতে এখন টইটম্বুর। নতুন পানিতে ঘুরছে নানা প্রজাতির মাছ। এ সুযোগে গ্রামের মানুষ বিভিন্ন কৌশলে মাছ ধরার উৎসবে মেতে উঠেছে। তাই জমে উঠেছে গ্রাম অঞ্চলের মাছ ধরার ফাঁদ চাক জালের বাজার। মঠবাড়িয়া সদরের বালুর মাঠে সপ্তাহের প্রতি বুধবার চাক জালের হাট বসে। ধানক্ষেতে মাছের আনাগোনা বেড়ে যাওয়ায় উপকূলীয় এলাকার বিভিন্ন হাট-বাজারে চাক জালের কেনাবেচায় হিড়িক পড়েছে। চিকন সুতা আর বাঁশের কঞ্চি দিয়ে তৈরি চাকার মতো ঘোরানো যায়, তাই এর নাম চাক জাল। দেখতে অনেকটা ‘বুচনা’ চাঁইয়ের মতো। স্থানীয়দের কাছে এটি ‘চাক জাল’ নামে পরিচিত। বর্ষা মৌসুমে জেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে এ জালের বেচাকেনা হয়।
চাক জালের কারিগরদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সাধারণত চিংড়ি মাছ ধরার জন্য কৃষক ও মৌসুমি জেলেদের কাছে চাক জালের চাহিদা বেশি। উপজেলার কয়েকশ পরিবার বর্ষা মৌসুমে চাক জাল তৈরি করে বাড়তি আয় করছে। অবসরে নারী-পুরুষ ঘরে বসে চাক জাল তৈরি করেন। একজন প্রতিদিন দুই-তিনটি জাল তৈরি করতে পারেন। স্থানীয় কৃষকদের নিজস্ব মেধা ও শ্রম দিয়ে উদ্ভাবিত এ জালের উৎপাদন খরচ ও দাম কম হওয়ায় চাক জালের চাহিদা বেড়েছে। এক দশক ধরে উপকূলীয় এলাকায় বাঁশের দাম বেড়ে যাওয়ায় চাঁইয়ের উৎপাদন খরচ কয়েক গুণ বেড়ে গেছে। তা ছাড়া বাঁশের সংকটও রয়েছে। অন্যদিকে চাক জাল তৈরিতে খরচ কম। জাল তৈরির কাঁচামাল সহজে পাওয়া যায়। তাই বাঁশের তৈরি চাঁইয়ের বিকল্প হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে চাক জাল।
উপজেলার উত্তর মিঠাখালী গ্রাম থেকে বিক্রি করতে আসা মামুন হাওলাদার জানান, প্রতিদিন তারা কৃষিকাজের অবসরে চাক জাল তৈরি করেন। বর্ষা মৌসুমে বাড়তি একটা আয়ের সুযোগ তৈরি হয়। ঘরে বসে নারীরাও চাক জাল তৈরি করেন। এ বছর বড় চাক জাল ৪০০-৪৫০ এবং ছোট চাক জাল ৩০০-৩৫০ টাকায় বিক্রি হয়। খরচ বাদে প্রতিটিতে ৮০ থেকে ১০০ টাকা লাভ হয়। আমাদের এই চাক জাল দিয়ে শুধু চিংড়ি ধরা হয়। বাঁশের তৈরি চাঁইয়ের ব্যবহার কমে যাওয়ায় জেলেরা চাক জালের দিকে ঝুঁকছেন।
উপজেলার দক্ষিণ মিঠাখালী থেকে বিক্রি করতে আসা চাক জাল ব্যবসায়ী ইয়াকুব হাওলাদার বলেন, ‘বাজার থেকে চিকন সুতার জাল কিনে কেটে বিশেষ প্রক্রিয়ায় বাঁশের কঞ্চির সঙ্গে বেঁধে জাল তৈরি করি। অনেক আগে থেকেই এ জালের বেচাবিক্রি করি। এ দিয়ে সংসার চলে। গত বছরের তুলনায় এ বছর চাহিদা বেড়েছে।’
চাক জাল কিনতে আসা উলুবাড়িয়া গ্রামের জেলে আব্দুল সাঈদ হাওলাদার বলেন, ‘চাক জাল দিয়ে শুধু চিংড়ি ধরা হয়। বর্ষা মৌসুমে ধানক্ষেতে ও ছোট নালায় প্রচুর চিংড়ি পাওয়া যায়। চিংড়ি ধরার জন্য চাক জালের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। আমি প্রতিবছর চাক জাল কিনতে হাটে আসি।’ v
- বিষয় :
- হাট-বাজার