ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

শরৎ আলোর কমল বনে

শরৎ আলোর কমল বনে

ছবি :: আনোয়ারুল হক

 হাসান মাহমুদ রিপন

প্রকাশ: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ২৩:২০

বাংলাদেশের মাঠ-ঘাট, নদী-নালা ও বিলের পাড় প্রকৃতির রূপ-লাবণ্য কাশবনে ভরে উঠেছে। ভাদ্র ও আশ্বিন মাস মিলে ‘শরৎকাল’। বাংলার ষড়ঋতুর তৃতীয় ঋতু। এই ঋতুতে নীল আকাশে বয়ে চলে ধবধবে পেঁজা তুলোর মতো মেঘ আর মৃদু বাতাস। নদীর বাঁকে ফুটেছে সাদা ধবধবে কাশফুল। নারায়ণগঞ্জের পিরোজপুর ইউনিয়নের ভাটিবন্দর ও কান্দারগাঁওয়ের মধ্যবর্তী এলাকায় মেঘনা নদীর চর এখন দৃষ্টিনন্দন কাশফুলের রাজ্য। প্রায় ২০০ একর চরজুড়ে দেখা মেলে এমন কাশবনের। এ কাশফুলের ছোঁয়া নিতে ও এর সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিদিনই ছুটে যান দর্শনার্থীরা।
নদীর তীর ধরে ভেতরের দিকে যত যাবেন, ততই মুগ্ধ হবেন। দু’পাশে কাশফুলগুলো মাথা নুয়ে আপনাকে স্বাগত জানাবে। বালুর মধ্যে গুচ্ছ গুচ্ছ কাশফুল দেখে মনে হবে, প্রকৃতি আপনার মনের প্রশান্তির জন্য এ রূপে সেজেছে। শেষ প্রান্তের দু’দিকে সাজানো কাশফুল দেখে মনে হবে যেন আপনি দাঁড়িয়ে আছেন কাশফুলের রাজ্যে। যত দূর চোখ যায়, তত দূর কাশের শুভ্রতা।
কাশবনের এ সৌন্দর্য দেখতে নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, নরসিংদীসহ আশপাশের জেলাগুলোর ভ্রমণপ্রেমীও ভিড় করছেন। অনেকে দলবেঁধে নৌকা বা ট্রলার নিয়েও বেড়াতে যান এ কাশফুলের রাজ্যে। কেউ সেলফি তুলছেন আবার কেউবা ভিডিও করছেন। একটু দূরেই মেঘনা নদীর ঢেউয়ের গর্জন। এক কোণে দাঁড়ালেই মেঘনা নদীর বিরামহীন সৌন্দর্য দেখা যায়। সূর্যাস্তের সময় সাগর আর নদীতে গোধূলির লাল একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকার মতো। যে কেউই এর অপার সৌর্ন্দযে নীরব সাক্ষী হতে চাইবেন।
পুরান ঢাকা থেকে এসেছেন সানজিদ আহমেদ তন্ময়, সিনথিয়া আহমেদ, রাজু হাসানসহ একদল তরুণ-তরুণী। তারা জানান, কাশফুলের কাছে এসে আনন্দ পাচ্ছেন। এমন পরিবেশ মনকে যেমন স্বচ্ছ করে, তেমনি প্রকৃতি সান্নিধ্যে টেনে আনে।
নারায়ণগঞ্জ শহর থেকে ঘুরতে আসা একদল শিক্ষার্থী জানায়, তারা কয়েকজন বন্ধু মিলে প্রতি বছরই আসে এখানে। মেঘনা নদীর চরের কাশবন দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায়।
স্থানীয় ভাটিবন্দর গ্রামের রশিদ মিয়া বলেন, ‘কাশফুল যেমন সৌন্দর্য বাড়ায়, তেমনি ফুল ঝরে যাওয়ার পর কাশফুলের ডগা সংগ্রহ করে ঝাড়ু তৈরি করা হয়। অনেকেই এগুলো কেটে নিয়ে যান। তাছাড়া বাণিজ্যিকভাবেও এগুলো বিক্রি হয়।’
স্থানীয় শিক্ষার্থী লামিয়া রহমান বলেন, ‘কাশফুল বালুমিশ্রিত মাটিতে জন্মে।  আমাদের মেঘনার এ চরাঞ্চল এলাকায় প্রচুর জন্মে কাশফুল। প্রকৃতিতে যে শরৎ এসেছে, তা কাশফুল না ফুটলে টের পাওয়া যেত না। শরতের সৌন্দর্যই তো কাশফুল!’
সোনারগাঁয়ের কবি শাহেদ কায়েস জানান, মেঘনা নদীর পাড়ে শরতের কাশবন মাসের পর মাস ধরে দেখা যায়। এ সময় প্রতিদিনই অনেক লোকজন আসেন। এলাকাটি এখন মৌসুমি পর্যটনকেন্দ্র হয়ে উঠেছে। নৌযান ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভালো হলে মেঘনার এ তীর হয়ে উঠতে পারে ব্যতিক্রমী বিনোদন কেন্দ্র।
সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা রহমান বলেন, ‘আমি সোনারগাঁয়ে যোগদানের আগে মিডিয়ার মাধ্যমে জেনেছি, পিরোজপুর ইউনিয়নের ভাটিবন্দর  মেঘনা নদীর পাড় কাশবনের কথা। এলাকাটি একটি সম্ভাবনাময় পর্যটন এলাকা। এলাকায় নিরাপত্তা জোরদারের জন্য পুলিশ প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছে।’
আমাদের ঋতুচক্রে শরতের মতো নির্মল কোমল প্রশান্ত স্বভাবের আর কোনো ঋতু নেই। তার রং রূপ এমন প্রকট নয় যে সহসাই চোখে পড়ে। বরং চোখে দেখার চেয়ে বেশি ধরা পড়ে তার অনুভবে। এই যে যাচ্ছে একেকটি দিন, কতই না বৈচিত্র্যময় তার সকাল, দুপুর, সন্ধ্যা। শিশিরসিক্ত শরৎ প্রভাতের সঙ্গে কোনো মিলই খুঁজে পাওয়া যায় না রোদে ঝলসানো মধ্যাহ্নের। আবার চিকন হয়ে আসা বিকেলের রোদমাখা নিস্তরঙ্গ প্রকৃতির মৌনরূপ যখন মৃদু কুয়াশার আবরণে আত্মসমর্থন করে দিনান্তের ঘোষণা দেয় তার ছবিও সম্পূর্ণ আলাদা। v
 

আরও পড়ুন

×