আন্তর্জাতিক শান্তি দিবস ২০২৪
শান্তির সংস্কৃতি গড়ে তোলা

.
হিল্লোল চৌধুরী
প্রকাশ: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ২২:৪১
আন্তর্জাতিক শান্তি দিবস হলো জাতিসংঘ ঘোষিত একটি আন্তর্জাতিক দিবস, যা প্রতি বছর ২১ সেপ্টেম্বর উদযাপিত হয়। বিশ্বব্যাপী শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ঘোষিত দিবসটির উদ্দেশ্য হলো পৃথিবী থেকে যুদ্ধ ও সংঘাত চিরতরে নিরসন এবং সেই লক্ষ্যে পৃথিবীর যুদ্ধরত অঞ্চলগুলোয় যুদ্ধবিরতি কার্যকরের মাধ্যমে সেসব অঞ্চলে মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়া। দিবসটি ১৯৮১ সালে সর্বপ্রথম উদযাপিত হয়। বর্তমানে জাতিসংঘের সব সদস্য রাষ্ট্র, বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামরিক দলের সদস্য এবং বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি উদযাপন করে থাকে।
দিবসটি ১৯৮২ সাল থেকে উদযাপিত হয়ে আসছে। তবে সে সময় প্রতি বছর সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় মঙ্গলবার দিবসটি উদযাপন করা হতো। এভাবে ২০০২ সাল পর্যন্ত শান্তি দিবস উদযাপিত হয়। তবে এরপর থেকে পাকাপাকিভাবে ২১ সেপ্টেম্বর দিনটিকে বিশ্ব শান্তি দিবস হিসেবে ঘোষণা করে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ।
আজকের বিশ্বে যেখানে দ্বন্দ্ব এবং অর্থনৈতিক বৈষম্য জটিল উপায়ে আচ্ছাদিত করে আছে, সেখানে শান্তির অন্বেষণ কেবল একটি নৈতিক বাধ্যতামূলক নয় বরং টেকসই উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য শর্ত। শান্তি ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন শুধু পারস্পরিক সম্পর্কিতই নয়, এ দুটি একে-অপরকে শক্তিশালী করে। শান্তি স্থিতিশীল অর্থনীতি গড়ে তোলে, যেখানে অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা সামাজিক অস্থিরতাকে উস্কে দেয়।
এ বছর আন্তর্জাতিক শান্তি দিবসের প্রতিপাদ্য ‘শান্তির সংস্কৃতি গড়ে তোলা’। এটি বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা সহিংসতা ও যুদ্ধের বিপরীতে বৈশ্বিক সম্প্রীতির চিন্তাকে প্রতিফলিত করে।
শান্তি–এ ধারণাটি ততক্ষণ পর্যন্ত বিমূর্তই থেকে যাবে, যতক্ষণ না এটি একটি সাংস্কৃতিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে অনুশীলনে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে, যেখানে সমাজের প্রতিটি স্তর এতে যুক্ত থাকবে। শান্তির ধারণাটি প্রতিষ্ঠিত করতে ছোটবেলা থেকেই এ নিয়ে নৈতিক আলোচনা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধার মূল্যবোধ জাগিয়ে তুলতে হবে। এসব আদর্শ প্রজন্ম ও ভৌগোলিক সীমানা জুড়ে বিস্তৃত হতে হবে। শান্তির এ সাংস্কৃতিক বিস্তৃতির মাধ্যমে আমরা এমন একটি বিশ্ব গড়ে তোলার আশা করতে পারি, যেখানে সংঘাত সহিংসতার মাধ্যমে নয়, আলোচনা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধার মাধ্যমে সব সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হবে।
কীভাবে আমরা একটি জটিল বিশ্বে শান্তির কথা ভাবতে পারি? আমরা জটিল ভূ-রাজনৈতিক গতিবিধি এবং মানবিক সংকট মোকাবিলা করছি। আন্তর্জাতিক শান্তি দিবস আমাদের সংঘাত ও সহযোগিতার পদ্ধতির পুনর্মূল্যায়ন করতে উৎসাহিত করে। এটি আমাদের শান্তি ও সংঘাতের জন্য প্রচলিত পদ্ধতির পুনর্বিবেচনা করতে চ্যালেঞ্জ করে। চলতি বছরের চলমান দ্বন্দ্ব এবং অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, শান্তি ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। শান্তির অনুপস্থিতি যেমন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে বাধা দেয়, তেমনি অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা সামাজিক অস্থিরতা ও সহিংসতাকে উস্কে দিতে পারে। শান্তির অন্বেষণ শুধু একটি নৈতিক বাধ্যবাধকতা নয়, একটি অর্থনৈতিক প্রয়োজনীয়তাও বটে।
এই দিনটি আমাদের স্মরণ করায় এ পৃথিবীটাই আমাদের বাসভূমি, এখানে থাকতে হলে শান্তিতে, বন্ধুত্বপূর্ণভাবে, সবার সঙ্গে সবার সদ্ভাব বজায় রেখেই চলতে হবে। আর যে বিশ্বে শান্তি নেই, সেখানে থাকা যায় না। ফলে ভালো করে থাকতে চাইলে পৃথিবীতে শান্তি বজায় রাখা খুবই জরুরি। তাই এ দিনটি উদযাপন করা হয়ে থাকে। যারা বিশ্বে শান্তি বজায় রাখার জন্য নানা কাজ করেছেন বা করে চলেছেন এ দিনটিতে তাদের স্মরণ করা হয়ে থাকে। ঝগড়া, ঝামেলা, মারধর, যুদ্ধ ইত্যাদির মাধ্যমে কোনো সমস্যাই সমাধান করা যায় না। দুটো বিশ্বযুদ্ধ দেখিয়ে দিয়েছে, এতে শুধু প্রাণহানি, সম্পত্তি ক্ষয়ক্ষতির সংখ্যা এবং পরিমাণ বাড়ে, কাজের কাজ কিছুই হয় না।
আন্তর্জাতিক শান্তি দিবস উদযাপন আমাদের শান্তির সংস্কৃতি গড়ে তোলার জন্য সম্মিলিত দায়িত্বের এক মর্মস্পর্শী স্মারক হিসেবে কাজ করে। তবে শুধু বছরের একটি দিনে নয়, প্রতিটি দিনই কাটুক সেই শান্তির ধারণাকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরে।
শান্তির সংস্কৃতি গড়ে তোলার মানে শুধু যুদ্ধের অনুপস্থিতি নয়; বরং এটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, স্থিতিস্থাপক সমাজ গঠনের এক সক্রিয় প্রক্রিয়া। আমাদের সহানুভূতি এবং সহযোগিতার ধারণাগুলোকে প্রসারিত করা, ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত উভয় স্তরই এ প্রক্রিয়াটির জন্য মৌলিক।
আন্তর্জাতিক শান্তি দিবস আমাদের শুধু অস্ত্র ধারণ করার বিরুদ্ধে নয়; একে অপরের প্রতি মানবিক হতে এবং সামাজিক একীকরণের শর্ত তৈরি করার আহ্বান জানায়। এর মধ্য দিয়ে আমরা একটি টেকসই, শান্তিপূর্ণ ভবিষ্যতের দিকে অগ্রসর হতে পারি। v
- বিষয় :
- শান্তি সমাবেশ