ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫

খরা কাটাতে ব্যবহৃত পানির পুনর্ব্যবহার

খরা কাটাতে ব্যবহৃত পানির পুনর্ব্যবহার

বার্সেলোনার পানি বিশুদ্ধকরণ প্লান্ট

হিল্লোল চৌধুরী

প্রকাশ: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ১৭:০৫ | আপডেট: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ১৮:২১

স্পেনের কাতালোনিয়া বিখ্যাত বার্সেলোনা ফুটবল ক্লাবের কারণে। তবে সম্প্রতি আরেকটি কারণে এ অঞ্চল আলোচনায় রয়েছে। গত কয়েক মাস ধরে সেখানে ভয়াবহ খরা চলছে। পানি ক্রমেই দুষ্প্রাপ্য হয়ে উঠছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে হোটেলগুলো পানি পুনর্ব্যবহার এবং সমুদ্রের জল বিশুদ্ধকরণের মতো উদ্যোগ নিচ্ছে।

তবে বৃষ্টি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। পরিশোধন প্লান্টের পানি কি পানের উপযুক্ত? স্পেনের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের টরডেরা এলাকার একটি পানি বিশুদ্ধকরণ প্লান্টের কর্মীরা তা যাচাই করছেন। পানি সমস্যা কাটাতে অঞ্চলটির মানুষ সাগরের পানি থেকে লবণ সরানোকে সমাধান ভাবছেন। পাশাপাশি নোনাজলে থাকা অন্যান্য উপাদানের পরিমাণও যাচাই করা হচ্ছে।

আইটিএএম টরডেরার ডেপুটি প্লান্ট ম্যানেজার মিকেল পুমাওলা গার্সিয়া বলেন, ‘উপাদানের মাত্রার ওপর নির্ভর করে আপনি বুঝতে পারবেন প্রক্রিয়াটির কিছু অংশ ঠিকভাবে কাজ করছে না। তখন ভুল মাত্রা দেখে পদক্ষেপ নিতে পারেন। অন্যভাবে বললে, পরীক্ষাগারের কর্মীরা প্লান্টের কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং তখন তারা সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নেন।’ এটি একটি কষ্টসাধ্য মান নিয়ন্ত্রণের প্রক্রিয়া; কিন্তু প্রয়োজনীয়। প্লান্টটির প্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত অর্ধেকের বেশি নোনাজল আবার সাগরেই ফেলা হয়। বাকিটা আশপাশের মানুষদের সরবরাহ করা হয়। 

২০০২ সালে প্লান্টটি চালুর পর থেকে এখানে কাজ করছেন মিকেল পুমাওলা গার্সিয়া। ইতোমধ্যে এ প্লান্টের ক্ষমতা দ্বিগুণ হয়েছে। তিনি বলেন, ‘এটি আসলে একটি পর্যটন এলাকা এবং একই সঙ্গে কৃষিপ্রধান অঞ্চল। নদী ধরে সামনে গেলে দেখবেন রাসায়নিক কারখানা রয়েছে, সেখানে পানি দরকার।’

খরা কাটাতে চলতি দশকের শেষ নাগাদ পানি পরিশোধনাগারটির কর্মক্ষমতা তিন গুণ করতে চায় কাতালোনিয়ার আঞ্চলিক সরকার। তবে সাগরের পানি নোনামুক্ত করা ব্যয়বহুল। মিকেল পুমাওলা গার্সিয়া বলেন, ‘চ্যালেঞ্জটা হলো, জ্বালানি খরচ কমিয়ে একই পরিমাণ বা বেশি পানি পরিষ্কার করা, যাতে প্লান্টের সক্ষমতা বাড়ে। সর্বাধুনিক প্লান্টগুলোর সক্ষমতা বাড়াতে ইতোমধ্যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে বিষয়টি জটিল।’

টরডেরা নদীর পানি অনেক শুকিয়ে গেছে। কাতালোনিয়ায় গত চার বছর ধরে বৃষ্টিপাত অনেক কম হচ্ছে বলে এ পরিস্থিতি। জলাধারের স্তরও গত কয়েক বছরে বেশ কমেছে। এখানকার বাসিন্দাদের পানির ব্যবহার সীমিত করতে নানাভাবে উৎসাহিত করা হচ্ছে।

কাতালান পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেরিটেল সারেত বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন এবং জলবায়ু সংকটের প্রভাব যে বিশ্বের অন্যান্য অংশের চেয়ে ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে বেশি, তা এক বাস্তবতা। অতীতেও ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে খরা হয়েছে; কিন্তু সেসবের ব্যাপ্তি এবং তাপমাত্রা বৃদ্ধির তীব্রতা অনেক বেড়ে গেছে। এই পরিবর্তন নজিরবিহীন।’

পানি সাশ্রয়ের সম্ভাব্য এক সমাধান দিচ্ছে সাম্বা হোটেল। ২৫ বছর আগে সংস্কারের সময় হোটেলটিতে আলাদা পাইপ বসানো হয়েছিল। যেমন– গোসলে ব্যবহৃত পানি আলাদা পাইপে নিয়ে তা টয়লেটে ব্যবহার করা হয়। বেসমেন্টে সেই পানি পরিশোধন করা হয়। হোটেল কর্তৃপক্ষের হিসাবে তারা এভাবে দেড় কোটি লিটার পানি সাশ্রয় করেছে এবং বেশ কিছু টাকাও বেঁচে গেছে। সাম্বা হোটেলের সাসটেইনেবিলিটি ম্যানেজার লাওরা পেরেজ ফ্লোরেস বলেন, ‘যেসব হোটেল ইতোমধ্যে তৈরি হয়ে গেছে, সেগুলো সংস্কারের সময় এ বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে। আর নির্মাণাধীন নতুন সব হোটেলে এ ব্যবস্থা বসানো বাধ্যতামূলক করা উচিত।’ 

পানি সাশ্রয়ের নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষাও মনোযোগ আকর্ষণ করছে। জানলুইজি বুটলিয়ারি সাম্বা হোটেলে ব্যবহৃত গ্রে-ওয়াটার উদ্ভিদ এবং মাটির মাধ্যমে পরিষ্কার করার এক পদ্ধতি যাচাই করেছেন। তিনি এর প্রক্রিয়ায় এখন পুদিনার মতো খাওয়া যায় এমন উদ্ভিদ ব্যবহার করতে চাচ্ছেন।

কাতালান ইনস্টিটিউট ফর ওয়াটার রিসার্চের বিজ্ঞানী জানলুইজি বুটলিয়ারি বলেন, ‘আমরা বোঝার চেষ্টা করছি, এ উদ্ভিদ মানুষের খাবার হিসেবে নিরাপদ কিনা। আমরা এটা এখনও জানি না। এ জন্য আরও অনুসন্ধান দরকার। এটা ভবিষ্যতে গবেষণার একটি বিষয়। তবে যদি একইসঙ্গে পানি পরিশোধন করে পুনরায় ব্যবহার করা যায় আর সেই প্রক্রিয়ায় মানুষ খেতে পারবে এবং অন্য কাজে লাগবে এমন উদ্ভিদও চাষ করা যায়, তাহলে খুব ভালো হবে।’

সাগরের পানি লবণমুক্ত করার প্লান্ট কাজ করে যাচ্ছে। তবে বেড়ে চলা খরার বিপরীতে বর্তমান এ প্রক্রিয়া কতদিন সংশ্লিষ্ট এলাকাকে সহায়তা করতে পারবে সেই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। 

সৌজন্যে: ডয়চে ভেলে

আরও পড়ুন

×