ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

রানী ক্লিওপেট্রার সাত-সতেরো

রানী ক্লিওপেট্রার সাত-সতেরো

চিত্রকর্ম:: হেনরি ক্লাইভ

শাহেরীন আরাফাত

প্রকাশ: ০৮ নভেম্বর ২০২৪ | ২৩:৫২ | আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০২৪ | ১২:৪৯

ক্লিওপেট্রা মিসরীয় ছিলেন না

মিসরের রানী ক্লিওপেট্রা মিসরে জন্মগ্রহণ করেছেন। তবে তাঁর বংশগত উৎপত্তি গ্রিসের মেসিডোনিয়া থেকে। আলেকজান্ডার দ্য গ্রেটের এক জেনারেল ছিলেন টলেমি আই সোটার। ৩২৩ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে আলেকজান্ডারের মৃত্যুর পর টলেমি মিসরে সাম্রাজ্য গড়ে তোলেন। তিনি গ্রিকভাষী শাসকদের একটি রাজবংশ চালু করেন, যা প্রায় তিন শতাব্দী ধরে আধিপত্য ধরে রেখেছিল।

বংশীয় শুদ্ধতা ধরে রাখতে এ বংশের শাসকরা নিজ বংশের মধ্যেই বৈবাহিক সম্পর্কে আবদ্ধ হতেন। ক্লিওপেট্রার মা-বাবা ছিলেন আপন ভাইবোন। তবে জাতিগতভাবে মিসরীয় না হওয়া সত্ত্বেও ক্লিওপেট্রা তাঁর দেশের অনেক প্রাচীন রীতিনীতি গ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন টলেমি রাজবংশের প্রথম সদস্য, যিনি মিসরীয় ভাষা শেখেন।

সৌন্দর্যের সঙ্গে বুদ্ধিমত্তা

রোমান প্রোপাগান্ডায় ক্লিওপেট্রাকে প্রলুব্ধকারী হিসেবে দেখানো হয়, যিনি তাঁর যৌন আবেদনকে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেন। অথচ তাঁর বুদ্ধিমত্তাই ছিল ক্ষমতায় আরোহণ ও তা ধরে রাখার মূলমন্ত্র। অন্তত এক ডজন ভাষায় তাঁর দক্ষতা ছিল। গণিত, দর্শন এবং জ্যোতির্বিদ্যায় শিক্ষিত ক্লিওপেট্রার বাগ্মিতাও ছিল অসাধারণ। এসব গুণের সংমিশ্রণেই তিনি সাম্রাজ্য টিকিয়ে রাখতে সক্ষম হন।

ক্লিওপেট্রা ও মার্ক অ্যান্টনি

৪১ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে ক্লিওপেট্রা প্রথম রোমান জেনারেল মার্ক অ্যান্টনির সঙ্গে তাঁর কিংবদন্তি প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন। এ সম্পর্কের একটি রাজনৈতিক দিক ছিল– মুকুট রক্ষা করা এবং মিসরের স্বাধীনতা বজায় রাখার জন্য ক্লিওপেট্রার যেমন অ্যান্টনিকে প্রয়োজন ছিল, তেমনি মিসরের সম্পদ ও সংস্থানগুলো ছিল অ্যান্টনির জন্য জরুরি। এর বাইরেও তারা একে অন্যের সান্নিধ্য ভীষণভাবে চাইতেন। তারা ৪১-৪০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের শীতকাল একসঙ্গে কাটিয়েছিলেন। তারা মদ্যপানের একটি ক্লাবও গড়ে তুলেছিলেন। অ্যান্টনি ও ক্লিওপেট্রার প্রিয় কাজের মধ্যে অন্যতম ছিল ছদ্মবেশে আলেকজান্দ্রিয়ার রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো।

নৌযুদ্ধে নেতৃত্ব

ক্লিওপেট্রা শেষ পর্যন্ত মার্ক অ্যান্টনিকে বিয়ে করেন। তাদের তিনটি সন্তান ছিল। এরই মধ্যে অ্যান্টনিকে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী অক্টাভিয়ান ষড়যন্ত্রকারী, প্রলোভনকারী, বিশ্বাসঘাতক হিসেবে চিত্রিত করে প্রচার করেন এবং ৩২ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে রোমান সিনেট ক্লিওপেট্রার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। পরের বছর অ্যাক্টিয়ামে বিখ্যাত নৌযুদ্ধে সংঘাত চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছায়। ক্লিওপেট্রা ব্যক্তিগতভাবে বেশ কয়েক ডজন মিসরীয় যুদ্ধজাহাজকে অ্যান্টনির বহরের পাশাপাশি ময়দানে নেতৃত্ব দেন; কিন্তু তাদের এ শক্তি অক্টাভিয়ানের নৌবাহিনীর ধারেকাছেও ছিল না। যুদ্ধে পরাজয়ের পর ক্লিওপেট্রা ও অ্যান্টনি মিসরে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন।

সাপের কামড়ে মারা যাননি!

বলা হয়ে থাকে, অক্টাভিয়ানের বাহিনী তাদের আলেকজান্দ্রিয়ায় তাড়া করার পর ক্লিওপেট্রা ও অ্যান্টনি ৩০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে আত্মহত্যা করেছিলেন। অ্যান্টনিকে পেটে ছুরিকাঘাত করার কথা বলা হলেও ক্লিওপেট্রার আত্মহত্যার পদ্ধতি কম নিশ্চিত। কিংবদন্তি আছে যে, একটি বিষাক্ত সাপ হাতে কামড় দেওয়ার পর তিনি মারা যান। তবে অনেক গবেষকের মতে, ক্লিওপেট্রা তাঁর চুলে রাখা চিরুনিতে বিষ লুকিয়ে রাখতেন এবং ইতিহাসবিদ স্ট্র্যাবোর মতে, তিনি একটি বিষাক্ত ‘মলম’ প্রয়োগ করেছিলেন। অনেক বিশেষজ্ঞ ধারণা করেন, তিনি হয়তো সাপের বিষ বা ভয়াবহ বিষাক্ত কিছু শরীরে প্রবেশ করাতে একটি পিন ব্যবহার করেছিলেন।

সৌজন্যে: হিস্টোরি ডটকম

আরও পড়ুন

×