ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

লোহিত সাগর ইরানের কাছে গুরুত্বপূর্ণ কেন?

লোহিত সাগর ইরানের কাছে গুরুত্বপূর্ণ কেন?

ছবি: দ্য ক্র্যাডল

গাজী হারুন

প্রকাশ: ১৯ মার্চ ২০২৪ | ১৭:৫৮ | আপডেট: ১৯ মার্চ ২০২৪ | ২২:৪৯

লোহিত সাগর আরব উপদ্বীপ ও আফ্রিকার মধ্যে অবস্থিত। এর একেবারে উত্তরে সুয়েজ খাল, দক্ষিণে বাব আল–মান্দাব প্রণালি; যা সাগরটিতে গালফ অব এডেনের সঙ্গে সংযুক্ত করেছে। সবচেয়ে সহজে ও কম খরচে ভারত মহাসাগর থেকে ইউরোপে যাওয়া যায় লোহিত সাগর পাড়ি দিয়ে। তাই আরব উপদ্বীপ, ইউরোপ ও আফ্রিকার মধ্যে শক্তিশালী বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদারে লোহিত সাগর সহায়ক ভূমিকা পালন করে। খবর: দ্য ক্র্যাডল

এই লোহিত সাগরকে ঘিরে নতুন করে ‘বাঁচার কৌশল’ আটছে ইব্রাহিম রাইসির ইরান। তবে পথটা দেখিয়েছিলেন সাবেক রাষ্ট্রপতি হাসান রুহানি। তিনি নতুন জলপথ প্রসারিত করার কৌশলগত সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। 

সম্প্রতি কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক কৌশল থেকে লোহিত সাগর ইরানের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদেশগুলোর আরোপ করা নিষেধাজ্ঞার ফলে পর্যদুস্ত অর্থনীতি নতুন করে মেরামত করাই দেশটির বর্তমান লক্ষ্য।

লোহিত সাগরের ভূ-রাজনৈতিক এবং ভূ-কৌশলগত গুরুত্ব অপরিসীম। রাশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, চীন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো আঞ্চলিক ও অতিরিক্ত-আঞ্চলিক উভয় পক্ষের দৃষ্টি লোহিত সাগর ঘিরে। লোহিত সাগরকে গুরুত্ব দিয়ে রাশিয়া ২০২৩ সালে বৈদেশিক নীতিতে নতুন ধারা যুক্ত করেছে। মূলত বহুমুখী আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা এবং আফ্রিকার সঙ্গে যোগাযোগ ও বাণিজ্যিক কার্যক্রম আরও শক্তিশালী করতে এ ধারা যুক্ত করা হয়েছে। 

যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞার চাপ সামলে অর্থনৈতিক উত্তরণের মোক্ষম সুযোগ দেখছে ইরান। ইরান এখন ব্রিকস এবং সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার সদস্য। পরিবর্তনশীল বৈশ্বিক গতিশীলতা এবং এ অঞ্চলে ওয়াশিংটনের ভূ-রাজনৈতিক প্রভাব প্রতিহত করে মস্কো, তেহরান ও বেইজিংয়ের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় সহযোগিতার সম্ভাবনা সৃষ্টি করছে লোহিত সাগর। লোহিত সাগরের উপকূলে শক্তিশালী প্রতিপক্ষ ইসরায়েলের নানামুখী হুমকি মোকাবিলা করে এ অঞ্চলে ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব বাড়তে মরিয়া ইরান।

লোহিত সাগরে ইরানের বর্ধিত উপস্থিতির আরেকটি কারণ এ অঞ্চলের উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক এবং ভূ-অর্থনৈতিক সম্ভাবনা। ক্রমবর্ধমান ভোক্তা বাজারসহ আফ্রিকার সঙ্গে একটি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ অংশীদারিত্বের সুযোগ রয়েছে ইরানের। আফ্রিকান রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক আগের তুলনায় দশগুণ বৃদ্ধি করতে ইরান নতুন কৌশল প্রণয়ন করছে।

শুধু তাই নয়, চলতি বছরের ৩ জানুয়ারি জাতিসংঘে ইরানের স্থায়ী প্রতিনিধি সামুদ্রিক নিরাপত্তা এবং নৌ চলাচলের গুরুত্ব তুলে ধরে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এবং জাতিসংঘে ফরাসি রাষ্ট্রদূতকে চিঠি পাঠান। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, লোহিত সাগরকে নিজেদের ভূখণ্ড হিসাবে বিবেচনা করে ইরান এবং এই সাগরকে ঘিরে অন্য কেউ কৌশল ঠিক করতে পারে না।

যদিও লোহিত সাগরকে ঘিরে ভবিষ্যৎ নীতি প্রণয়নে ইরানকে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, আন্তর্জাতিক এবং নিরাপত্তা ইস্যুগুলো বিবেচনা করতে হবে। অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা এবং অন্যান্য শক্তির প্রতিক্রিয়ার মতো কারণগুলোও কৌশল প্রণয়নের ক্ষেত্রেও তাৎপর্যপূর্ণ।

তবুও পশ্চিম এশিয়ায় মার্কিন নীতির পরিবর্তন, বৈশ্বিক স্বার্থ হ্রাস, ভূ-রাজনৈতিক পরিবর্তন এবং বাস্তববাদী নীতি লোহিত সাগরে তেহরানের কৌশলগত ফোকাসের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠবে। ইরানের সর্বোচ্চ লক্ষ্য হলো সংঘাতের সমাধান করা, কূটনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিক করা এবং লোহিত সাগরের তীরবর্তী দেশগুলোর সঙ্গে নানামুখী সম্পর্ক জোরদার করা ও বাণিজ্য বৃদ্ধি করা।

তেহরান লোহিত সাগরকে ভূ-রাজনৈতিক সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করে পশ্চিম এশিয়া ও আফ্রিকার দেশগুলোতে বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদার করতে মরিয়া। লোহিত সাগরে ইরানের সক্রিয় উপস্থিতি দুই দিক থেকে সুফল পাবে বিশ্ববাসী। এক দিকে আন্তর্জাতিক নৌপথ এবং সামুদ্রিক ট্র্যাফিক সুরক্ষা, জলদস্যুতা মোকাবিলা করা সম্ভব হবে। অন্যদিকে বাণিজ্যিক জাহাজ বিশেষ করে তেলবাহী ও পণ্যবাহী জাহাজের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।

এ দিকে ইরান লোহিত সাগরের উপকূলীয় দেশগুলোর মধ্যে গোয়েন্দা সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং এ অঞ্চলে বন্ধুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে একটি নৌ-জোট স্থাপনসহ সম্ভাব্য আঞ্চলিক নিরাপত্তা সহযোগিতার জন্য প্রস্তুত রয়েছে। লোহিত সাগরকে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য এবং আফ্রিকার প্রবেশদ্বার হিসেবে বিবেচনা করে ইরান পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা এড়ানোর একটি বিকল্প পথ বেছে নিতে চায়। এমনকি ইরান লোহিত সাগরের মুক্ত অঞ্চলে জ্বালানি তেল, বিদ্যুৎ, অবকাঠামো এবং বন্দর উন্নয়নে বিনিয়োগ করতেও প্রস্তুত।

উপরন্তু ব্রিকসের সদস্য হিসেবে তেহরান উত্তর-দক্ষিণ আন্তর্জাতিক করিডোরকে শক্তিশালী, ব্যাংকিং সহযোগিতা বৃদ্ধি, জাতীয় মুদ্রার ব্যবহারকে উন্নীত এবং রপ্তানি বৃদ্ধির মাধ্যমে ইরান ভঙ্গুর অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করার সর্বোচ্চ চেষ্টা অব্যাহত রাখতে চায়।

আরও পড়ুন

×