ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

সাক্ষাৎকার: মোহাম্মদ আলীম আখতার খান

যেখানেই মধ্যস্বত্বভোগী, সেখান থেকেই উচ্ছেদ করা হবে

যেখানেই মধ্যস্বত্বভোগী, সেখান থেকেই উচ্ছেদ করা হবে

মোহাম্মদ আলীম আখতার খান

মোহাম্মদ আলীম আখতার খান

প্রকাশ: ২১ অক্টোবর ২০২৪ | ২৩:৪০ | আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০২৪ | ১৬:৩৯

জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক হিসেবে সম্প্রতি নিযুক্ত মোহাম্মদ আলীম আখতার খান প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। অধিদপ্তরে যোগ দেওয়ার আগে তিনি মাঠ পর্যায় থেকে প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে কাজ করেছেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গভর্ন্যান্স স্টাডিজে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়েছেন। তাঁর জন্ম চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলায়। সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছেন সমকালের সহকারী সম্পাদক সাইফুর রহমান তপন

সমকাল: জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক হিসেবে আপনি দায়িত্ব নিয়েছেন। আপনার অল্প দিনের  অভিজ্ঞতা বলবেন?

আলীম আখতার খান: আমাকে এ পদে পদায়ন করা হয় গত ৯ অক্টোবর বুধবার। পরদিন বৃহস্পতিবার থেকে ছিল টানা চার দিনের ছুটি– দুর্গাপূজা উপলক্ষে। সোমবার সকালে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে জয়েন করলাম। এর পর যোগাযোগ করলাম বাণিজ্য উপদেষ্টার সঙ্গে। তিনি আমাকে বললেন, একটু কষ্ট হলেও এখনই তোমাকে মাঠে নেমে পড়তে হবে। বাণিজ্য সচিবের সঙ্গে দেখা করলাম। তিনি আমার ব্যাচমেটও বটে। সেখানে একই ব্যাচের আমরা পাঁচজন একত্রিত হলাম। সবাই আমাকে সাহস জোগালেন। ওই দিন বিকেলেই উপদেষ্টা কারওয়ান বাজারে এলেন। তিনি সেখানকার কাঁচাবাজার, ডিমের বাজারে গেলেন। তাঁর সঙ্গে থেকে আমারও দায়িত্ব পালন শুরু হলো। আমি সিদ্ধান্ত নিলাম, আমাকে ডিমের বাজার নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। কারণ এটি জনস্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়। আমি ডিমের উৎপাদক ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের কথা শোনার জন্য বুধবার তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসলাম। সেখানে দীর্ঘ আলোচনার মাধ্যমে উঠে এলো, উৎপাদক ও পাইকারি বিক্রেতার মাঝখানে মধ্যস্বত্বভোগীরা আছে বিধায় ডিমের বাজার এত চড়া। উৎপাদকদের অনুরোধ করলাম, মধ্যস্বত্বভোগীদের বাদ দিয়ে তাদের সরাসরি পাইকারদের কাছে ডিম পৌঁছাতে হবে। বৈঠকে একটাই সিদ্ধান্ত– ডিমের বাজারে কোনো মধ্যস্বত্বভোগী থাকবে না। সিদ্ধান্ত অনুসারে এক দিন পরই তার বাস্তবায়ন শুরু হলো।

সমকাল: অতীতে আমরা দেখেছি, আপনার এই অফিসেই সব পক্ষ বসে বাজার নিয়ন্ত্রণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হতো। কিন্তু বাজারে তার প্রতিফলন ঘটত সামান্যই। আমার প্রশ্ন, এই বড় বড় ডিম উৎপাদক এত সহজে আপনার প্রস্তাবে সায় দিলেন কেন? আবার যে মধ্যস্বত্বভোগীদের কথা বললেন, তারাও বেশ প্রভাবশালী বলে পরিচিত। তাদের এত সহজে বাদ দেওয়া গেল?

আলীম আখতার খান: আমার মনে হয়, এর পেছনে কাজ করেছে পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতি। অতীতে আমিও দেখেছি, বহু সরকারি সিদ্ধান্ত কতিপয় প্রেশার গ্রুপের কারণে ভেস্তে যেত। আমাদের, সরকারি কর্মচারীদেরও তাদের সঙ্গে সায় দিতে হতো। কিন্তু এবার বাস্তবেই আমাদের এ সিদ্ধান্তের ন্যূনতম কোনো বিরোধিতা কোনো মহল থেকে আসেনি। পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতি ছাড়া এটা সম্ভব ছিল না, এটা আমি মনে করি। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, আগে আমাদের মন্ত্রণালয়েরও শীর্ষে যারা থাকতেন, তাদের নিজস্ব কিছু এজেন্ডা থাকত। যেসব মধ্যস্বত্বভোগীর কথা বলা হলো, তারা হয়তো সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নকারীদের বন্ধুবান্ধব বা খাতিরের লোক ছিলেন। এসব বিষয় এখন একেবারেই নেই। জনস্বার্থ দেখা ছাড়া আমার ঊর্ধ্বতনদের মধ্যে অন্য কোনো এজেন্ডা আমি দেখছি না। ফলে আমার মধ্যেও বিশ্বাস জন্মেছে– আমি পারব। এ ক্ষেত্রে আমি সংশ্লিষ্ট উৎপাদক ও অন্য ব্যবসায়ীদেরও ধন্যবাদ দিই। কারণ তারা আমাকে সহযোগিতা করেছেন। তবে এটাও মনে করি না, ভবিষ্যতে কেউ কোনো ঝামেলা করবে না। আমরা সজাগ আছি এ ব্যাপারে। ডিম বাজারজাত প্রক্রিয়া আরও উন্নত করার সুযোগ আছে বলে আমি মনে করি।

সমকাল: আপনাদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ডিমের দাম কত?

আলীম আখতার খান: প্রতিটি লাল ডিম উৎপাদক পর্যায়ে ১০.৫৮ টাকা, পাইকারি পর্যায়ে ১১.০১ টাকা এবং খুচরা পর্যায়ে ১১.৮৭ টাকা। খুচরা পর্যায়ে এক ডজন ডিম কোনোক্রমেই ১৫০ টাকার বেশি হতে পারবে না।

সমকাল: এটা কি সবাই মানছে?

আলীম আখতার খান: আমাদের জানামতে এবং বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমেরও খবর হলো, সিদ্ধান্তটি প্রায় সবাই মানছে। তবে শনিবার (১৯ অক্টোবর) খবর পেলাম, মোহাম্মদপুরে কিছু দোকানে এক ডজন ডিম ১৬০ টাকা দরে বিক্রি করছে, যদিও অন্যরা তা ১৫০ টাকায়ই বিক্রি করছে। আমাদের পরিদর্শন টিম দ্রুত সেখানে গিয়ে প্রমাণ পেয়ে সংশ্লিষ্ট দোকান মালিককে জরিমানা করে। এটি অন্যদের জন্যও একটি বার্তা পাঠায়।

সমকাল: ঢাকার বাইরেও কি এই দর সবাই মানছে?

আলীম আখতার খান: বলা যায়, অন্তত জেলা পর্যায়ে তা মান্যতা পাচ্ছে। ঢাকার বাইরে প্রতি জেলায় আমাদের অফিস আছে। সেখানে একজন সহকারী পরিচালক দায়িত্ব পালন করেন। পাশাপাশি জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে সরকার গঠিত টাস্কফোর্সের মাধ্যমেও বাজার মনিটরিং চলছে। অস্বীকার করব না, বহু এলাকা আমাদের নাগালের বাইরে। অর্থাৎ আমাদের লোকবল অতদূর পৌঁছতে পারে না। সেখানে কিছু সমস্যা থাকা অস্বাভাবিক নয়। উল্লেখ্য, সারাদেশে যে সংখ্যক ডিম ভোক্তাদের লাগে, তার ২০-২২ শতাংশ বড় উৎপাদকরা সরবরাহ করেন; বাকিটা স্থানীয় পর্যায়ের উৎপাদকদের কাছ থেকে আসে। ঢাকার বাইরে নজরদারির দায়িত্বপ্রাপ্তদের প্রতি নির্দেশনা– স্থানীয় উৎপাদকদের কথা বলে প্রথমত তাদের ডিমগুলোর ৬৫ শতাংশ সেখানকার বাজারেই রাখার ব্যবস্থা করা, বাকি ৩৫ শতাংশ ঢাকায় পাঠানো যাবে। দামের বিষয়টাও খেয়াল রাখতে তাদের বলা হয়েছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা পাচ্ছি, তবে দু-এক জায়গায় কিছু ঝামেলা হয়েছে। যেমন সম্প্রতি দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক বললেন, নর্থ এগ নামে একটি কোম্পানি দিনাজপুরে দিলেও ঠাকুরগাঁওয়ে ডিম দিচ্ছে না। কোম্পানির বক্তব্য, আমি নাকি বলেছি, ঢাকায় বেশির ভাগ ডিম পাঠাতে হবে। বাস্তবে নির্দেশনাটা উল্টো। খোঁজখবর নিয়ে জানলাম, ওই কোম্পানি চালাকি করে অন্যত্র নিজের মতো ডিম বিক্রি করতে চাচ্ছিল। তবে সে সমস্যার সমাধান হয়েছে।

সমকাল: এবার ডিম আমদানিও তো বেশ ভালো। আগে এ নিয়েও বাণিজ্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মধ্যে ভিন্নমত দেখা যেত। যে কারণে ডিম আমদানির সিদ্ধান্ত হলেও ঠিকভাবে বাস্তবায়িত হতো না। এবার এ ধরনের কোনো সমস্যা হয়নি?

আলীম আখতার খান: ডিম আমদানির সিদ্ধান্ত হয় আমি ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে যোগ দেওয়ার আগে। ফলে মন্ত্রণালয় পর্যায়ে কোনো ঝামেলা হয়েছে কিনা, জানি না। তবে এটুকু বলতে পারি, আমার বৈঠকে প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিও ছিলেন। সবাই সেখানে মন খুলে কথা বলেছেন; আমরা যুক্তির পিঠে প্রতিযুক্তিও দেওয়ার সুযোগ দিয়েছি। যে কারণে বৈঠকটি নির্ধারিত সময় ছাড়িয়ে অনেকক্ষণ চলে। তবে সিদ্ধান্ত হয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে। যে কোনো জনগুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে এ প্রক্রিয়া অনুসরণ খুব কার্যকর বলে মনে করি।

সমকাল: আমদানি করা ডিমও কি একই দরে বিক্রি হচ্ছে?

আলীম আখতার খান: আমি যতটুকু জেনেছি, আমদানি করা ডিম আমাদের ডিমের চেয়ে একটু ছোট। তাই নিয়ম অনুসারে তার দামও আমাদের নির্ধারিত দামের চেয়ে কম হওয়ার কথা।

সমকাল: আমি জানতে চাচ্ছি, আমদানি করা ডিমও কি আপনাদের নির্ধারিত দামে বিক্রি হয়?

আলীম আখতার খান: অবশ্যই, এর বেশি দরে কোনোক্রমেই সম্ভব না। তবে ওদের বিষয়টা দেখছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়; আমরা নই। আর সেখানে নির্দেশনা হলো, যেহেতু আমদানি করার খরচ কর-শুল্কসহ পরিবর্তনশীল। তাই ‘যৌক্তিক’ দামে তা বিক্রি করতে হবে। এ ডিম কিন্তু জাহাজীকরণকালে এবং ট্রাকে তোলা ও নামানোর সময় ভেঙে যাওয়ার শঙ্কা থাকে, যার প্রভাব খুচরা মূল্যে অবশ্যই পড়ে।
সমকাল: আপনাদের এখতিয়ার অন্যান্য পণ্য ও সেবার বাজারেও আছে। মূল্য তো সব নিত্যপণ্য ও সেবারই বেড়েছে। সেগুলো নিয়ে আপনাদের ভাবনা কী?
আলীম আখতার খান: আপনি ঠিকই বলেছেন। আমরা বসে নেই। ঢাকাসহ সারাদেশে আমাদের যে টিমগুলো আছে তাদের বলা হয়েছে, আমাদের এখতিয়ার চাল, মাংস, শাকসবজিসহ সব পণ্য ও সেবার ওপর আছে। তাই কোনোটাতেই ছাড় দেওয়া যাবে না; অপেক্ষা করা যাবে না। এটা সত্য, বিভিন্ন সেবা খাত এ মুহূর্তে নানা কারণে আমাদের নজরদারির বাইরে। তবে আমরা সেখানেও হাত দেব। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে একটি পথনকশা তৈরির কাজ চলছে। আমাদের উদ্দেশ্য সেই পথনকশা অনুসারে এমন পদক্ষেপ গ্রহণ করা, যেন সারাবছর গুরুত্বপূর্ণ সেবাগুলো জনমানুষের সাধ্যের সীমায় থাকে। সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন অংশে দুর্যোগ দেখেছেন আপনারা। এমন দুর্যোগের সময়ও ভবিষ্যতে যেন পণ্য ও সেবা সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা যায়, আমরা সে ব্যবস্থা করতে যাচ্ছি। আমরা বাস ভাড়া, টেলিযোগাযোগ, চিকিৎসাসেবার দিকেও নজর দিচ্ছি।

সমকাল: আপনারা ডিমের ক্ষেত্রে যেভাবে মধ্যস্বত্বভোগীদের ভূমিকা বন্ধ করলেন, সেই সূত্র কি অন্যান্য পণ্য ও সেবার ক্ষেত্রেও কাজ করতে পারে?

আলীম আখতার খান: অবশ্যই। মধ্যস্বত্ব মানেই মধ্যস্বত্ব, যা ভোক্তার ওপর প্রভাব ফেলে; পণ্যের মূল্য বাড়িয়ে দেয়। এরা আমাদের বাজার ব্যবস্থায় অদৃশ্য হাতের মতো কাজ করে। ভালো করে বিশ্লেষণ করলে হয়তো এর কারণগুলোও উদ্ঘাটিত হতে পারে। এগুলোর মধ্যে ১০টি নেতিবাচক হলেও দু-একটা ইতিবাচক কারণ হয়তো থাকতে পারে।

সমকাল: বাজার অর্থনীতির সমর্থকরা তো বলেন, বাজারের নিয়মেই মধ্যস্বত্বভোগীরা এ ব্যবস্থায় ঢুকেছে।

আলীম আখতার খান: বাজারের নিয়ম হয়তো থাকতে পারে, তবে বেকারত্বও এ ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে। এ ব্যবস্থার মাধ্যমে কিছু লোকের এক ধরনের কর্মসংস্থানও হয়। এটা নীতিনির্ধারণী বিষয়। তাদের বিকল্প কর্মসংস্থান কী হবে, সেটার ব্যবস্থা করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। ফলে আমরা এই মধ্যস্বত্বভোগীদের বিষয় মোটেই আমলে নিচ্ছি না। আমাদের মনোযোগের বিষয় ভোক্তাস্বার্থ সংরক্ষণ; মধ্যস্বত্বভোগী বা অন্য কেউ যাতে তা ক্ষুণ্ন করতে না পারে। এ জন্যই যেখানে মধ্যস্বত্বভোগীরা থাকবে, সেখান থেকেই তাদের উচ্ছেদ করা হবে।

সমকাল: আপনি পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থার মাঝখানের যে লোকদের উচ্ছেদ করার পক্ষে, তাদের সঙ্গে কি উৎপাদকদের সম্পর্কটা বাজারের নিয়মেই গড়ে ওঠেনি? কিংবা এদের উচ্ছেদের কারণে উৎপাদকরা কি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না?

আলীম আখতার খান: পণ্য সরবরাহ কাঠামোর মধ্যে যারা নিয়মের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠিত, তাদের আমরা মধ্যস্বত্বভোগী বলছি না। মধ্যস্বত্বভোগী হলো তারা, যারা সরবরাহ ব্যবস্থার জন্য জরুরি নয়, বাইরে থেকে এসে এক প্রকার কমিশন ভোগের মাধ্যমে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়। আমরা ডিম উৎপাদকদের বলেছি, মাঝখানে আপনার এজেন্সি বা অন্য কেউ থাকলেও পাইকারি পর্যায়ে ১১ টাকায়ই ডিম পৌঁছাতে হবে। এর অন্যথা করা যাবে না। মূলত প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের লোকেরাই আমাদের এ সূত্র দেয়, যেখানে স্পষ্ট হয়– এদের কারণে ডিমের দাম বাড়ে। আমরা সভায় উপস্থিত সবাইকে জিজ্ঞেস করেছি। সবাই এর সঙ্গে একমত পোষণ করেছে।

সমকাল: এখানে প্রশ্ন হতে পারে, মাঝখানের দুই হাত বাদ দিলে যদি উৎপাদকদেরও লাভ বেশি হয়; তাহলে তারা আগে এদের রেখেছিল কেন?

আলীম আখতার খান: এ প্রশ্নের উত্তর পেতে একটু গভীরে যেতে হবে। তার শিকড় খুঁজতে হবে ৫ আগস্টের আগে। এখানে যে রাজনৈতিক ব্যবস্থাটি ছিল তার মধ্যে। ওই ব্যবস্থায় মুনাফাগৃধ্নুতাই উৎসাহিত হয়েছে। বড় ব্যবসায়ীরা সর্বোচ্চ মুনাফা তোলার বিষয়ে প্রশ্রয় পেত। ওই পরিস্থিতিতে আমাদের বাজার তদারকির দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ করার সুযোগ পেত না। অনেকাংশেই হাত গুটিয়ে বসে থাকতে বাধ্য হতো। সেই পরিস্থিতি এখন আর নেই, বদলে গেছে। আগের সেই রাজনৈতিক অপসংস্কৃতির পুরো অবসান না ঘটলেও তার অনুকূল একটা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এটাকে আমরা কাজে লাগাতে চাই। এ ক্ষেত্রে ভোক্তাদেরও ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করি। নাগরিক যদি সচেতন থাকেন তাহলে বিদ্যমান পরিবেশ টেকসই করা যাবে। তখন ভোক্তা যেমন ন্যায্যমূল্যে পণ্য পাবেন, তেমনি পাইকার বা উৎপাদকেরও লোকসান হবে না। সব ব্যবসাকে একটি নৈতিক কাঠামোর মধ্যে আসতে হবে।

সমকাল: তাহলে কি বহুল কথিত সিন্ডিকেট বাজার ব্যবস্থার ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারবে না, তেমন আশা করা যায়?

আলীম আখতার খান: আমি তাই মনে করি। আমরা সিন্ডিকেট থাকতে দেব না। এমন এক ব্যবস্থায় যাচ্ছি, যেখানে উৎপাদক একটা যৌক্তিক মুনাফায় পণ্য সরবরাহ করবে; ভোক্তা ন্যায্যমূল্যে তা পাবে।

সমকাল: আপনি টেলিযোগাযোগসহ যেসব সেবা খাতের কথা বললেন, সেগুলো তো নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষের অধীনে; সেসব সংস্থার সহায়তা কি আপনারা পাচ্ছেন বা পাবেন?

আলীম আখতার খান: এটা নিশ্চয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তবে আমার বক্তব্য, এ খাতগুলোতে সুনির্দিষ্ট কাজ করার এখতিয়ার আছে বলেই আমরা সেখানে যাচ্ছি। কে কী সহযোগিতা করল বা করল না, তার জন্য আমরা অপেক্ষা করব না। আমাদের কাজ আমরা করে যাব। হতে পারে, আগে সংশ্লিষ্ট সব সংস্থার মধ্যে সমন্বয় ছিল না। এর পেছনে বিশেষত রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে যুক্তি বা ছুতারও অভাব ছিল না। কিন্তু এখন তো সেই রাজনৈতিক পরিবেশ নেই। ফলে সবারই জনগণকে নির্ধারিত সেবাদানের দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে অজুহাত খাটবে না। এখন এমন এক পরিবেশ বিরাজ করছে, যা আমাদের কাজ করার সুযোগ তৈরি করেছে। এটা কাজে লাগালে আমরা নিশ্চয় এখনকার চেয়ে অনেক ভালো সেবা জনগণকে দিতে পারব।

সমকাল: আপনি বলতে চাইছেন, কতিপয় ব্যবসায়ীর সর্বোচ্চ মুনাফা অর্জনের খায়েশের সামনে ভোক্তারা এতদিন যে অসহায়ত্ব বোধ করেছে, তা আগামী দিনে থাকবে না?

আলীম আখতার খান: আমাদের যাত্রাটা সেদিকে। জনগণ আমাদের সঙ্গে থাকবে– এ বিশ্বাস আছে। এটা জনপ্রতিষ্ঠান। আমাদের সব খরচ জোগায় জনগণ; বিনিময়ে আমরা তাদের সেবাদানে অঙ্গীকারবদ্ধ। এটাতে সুবিচার একশ ভাগ দেখাতে হবে; অন্য কোনো অজুহাত দেখানোর সুযোগ নেই।

আরও পড়ুন

×