ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

মার্কিন নির্বাচন

অনিশ্চয়তার ভোটে দ্বিধায় ভোটার

অনিশ্চয়তার ভোটে দ্বিধায় ভোটার

ফাইল ছবি

তুহিন তৌহিদ

প্রকাশ: ২৯ অক্টোবর ২০২৪ | ২৩:৪৭

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট গ্রহণের মাত্র কয়েক দিন বাকি। শেষ মুহূর্তে এসে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিস ও রিপাবলিকান ডোনাল্ড ট্রাম্প পরস্পর আরও আক্রমণাত্মক হয়ে উঠছেন। রাজনৈতিক লড়াই প্রায়ই পাচ্ছে ব্যক্তিগত মাত্রা। গুরুত্বপূর্ণ নানা জরিপের ফলে দুই প্রার্থীর ভাগ্য পেন্ডুলামের মতো দুলছে। মনে হচ্ছে, মার্কিন ভোটাররাই প্রার্থী বাছাইয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে। 
এবারের মার্কিন নির্বাচন নানা কারণেই যে কোনো সময়ের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ভোট গ্রহণ এমন সময়ে হচ্ছে, যখন ইউক্রেনে যুদ্ধ চলছে; গাজা ও লেবাননে হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। প্রতিদিন শত শত মানুষ হতাহত হচ্ছেন। তেহরান ও তেল আবিবের মধ্যেও পাল্টাপাল্টি হামলার মধ্য দিয়ে বহু বছর ধরে চলা ছায়াযুদ্ধ সরাসরি লড়াইয়ের দিকে যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে মার্কিন প্রশাসনের প্রধান কে হচ্ছেন, তার গুরুত্ব বলার অপেক্ষা রাখে না।

বাইডেন প্রশাসন ইসরায়েলকে অস্ত্র সরবরাহ করে গেলেও গাজা বা লেবাননের নানা ইস্যুতে দ্বিমত ও উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে। যদিও তা আমলে নিচ্ছে না ইসরায়েল। ডেমোক্র্যাট প্রার্থী ও ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসও বাইডেনের পথে হাঁটবেন বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে। অপরদিকে ডোনাল্ড ট্রাম্প বাধাহীন সমর্থন দিয়ে ইসরায়েলকে গাজায় এগিয়ে নেওয়ার পক্ষে। যুক্তরাষ্ট্রের ইহুদিরা প্রথাগতভাবে ডেমোক্রেটিক পার্টির সমর্থক হলেও এবার ভিন্ন চিত্র দেখা যেতে পারে।
আরব-মার্কিনিরা প্রথাগতভাবে ডেমোক্রেটিক পার্টির ভোটার হলেও গাজা ইস্যুতে বাইডেন প্রশাসনের অবস্থান নিয়ে তাদের ক্ষোভ রয়েছে। গাজায় ৪০ হাজারের বেশি মানুষকে হত্যা করা হলেও যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা অনেক দেশ এটিকে এখনও ‘গণহত্যা’ বলছে না। 

শেষ মুহূর্তের প্রচারণায় দুই পক্ষের মধ্যে কাদা ছোড়াছুড়িও লাগামহীন পর্যায়ে পৌঁছেছে। গত ২৩ অক্টোবর সিএনএনের প্রশ্নোত্তর অনুষ্ঠানে ট্রাম্পকে ‘ফ্যাসিবাদী’ বলে মন্তব্য করেন কমলা। ট্রাম্পের আমলে হোয়াইট হাউসের চিফ অব স্টাফ জন কেলিও সম্প্রতি নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেন, সাবেক প্রেসিডেন্ট মার্কিন সেনাবাহিনীতে নাৎসি নেতা হিটলারের জেনারেলদের মতো অনুগত সেনানায়ক চান। উত্তর ক্যারোলাইনায় খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীদের নির্বাচনী সমাবেশে অংশ নিয়ে ট্রাম্প বলেন, কমলা হ্যারিস প্রেসিডেন্ট হলে ধর্মীয় স্বাধীনতা সীমিত করবেন। 

কমলার পক্ষে প্রচারণায় দেখা যাচ্ছে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও বিল ক্লিনটনকে। ট্রাম্পের পক্ষে দেখা যাচ্ছে টেসলা বস অ্যালন মাস্ককে। তিনি প্রচারণা কাজে বিপুল অঙ্কের অর্থ অনুদানও দিয়েছেন। তবে সবকিছু ছাপিয়ে আলোচনায় দোদুল্যমান সাত অঙ্গরাজ্য– জর্জিয়া, পেনসিলভানিয়া, অ্যারিজোনা, উইসকনসিন, নেভাডা, নর্থ ক্যারোলাইনা ও মিশিগান। এগুলো ব্যাটল গ্রাউন্ড বা যুদ্ধক্ষেত্র রাজ্য হিসেবেও পরিচিত। ঘনবসতিপূর্ণ এসব রাজ্যে সাধারণত মার্কিন মধ্যবিত্ত, অভিবাসী ও বিভিন্ন ধর্ম-বর্ণের মানুষের বাস। কার্যত ভাগ্যনির্ধারণী এসব রাজ্যেই বেশি প্রচারণা চালানো হচ্ছে। 
গত জুলাইতে জো বাইডেন সরে যাওয়ার পর কমলা হ্যারিস যখন প্রার্থী হন, চারদিকে জয়জয়কার পড়ে যায়। সম্প্রতি পরিস্থিতি বদলাতে থাকে। ২২ অক্টোবর প্রকাশিত রয়টার্স-ইপসোসের জরিপে কমলা ৩ পয়েন্টে এগিয়ে ছিলেন। পরদিন প্রকাশিত ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের জাতীয় জরিপে ট্রাম্প কমলা থেকে ২ শতাংশ এগিয়ে যান। নিউইয়র্ক টাইমস ও সিয়েনা কলেজের চালানো সর্বশেষ জাতীয় জরিপে দেখা যায় জনপ্রিয়তায় দুই প্রার্থীর পয়েন্ট সমান– ৪৮। 

আগামী ৫ নভেম্বর ভোট। এ অবস্থায় জরিপের ফলগুলো দুই প্রার্থীর মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পূর্বাভাস দেয়। তবে জনপ্রিয় ভোট নয়; যথারীতি ইলেক্টোরাল কলেজ নির্ধারণ করে দেবে বিজয়ী। তবে এবারের নির্বাচনের মতো মেরূকরণ কমই দেখা গেছে। নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হবে কিনা, তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন খোদ জো বাইডেন।
দ্য টেলিগ্রাফের যুক্তরাষ্ট্র সম্পাদক টনি ডাইভার বলেন, অত্যন্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ পরিবেশ। তবে জো বাইডেনের সরে যাওয়ার পর তিনি মনে করেন, ট্রাম্প জিততে যাচ্ছেন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমটি একটি অনলাইন জরিপও চালায়। এতে ভোট দিয়েছেন দেড় লাখের বেশি মানুষ, যাদের মধ্যে ৫৫ শতাংশ মনে করেন, ট্রাম্প জয়ী হবেন। ৪৫ শতাংশের বিশ্বাস, কমলা জিতবেন। রাজনৈতিক ইতিহাসবিদ ও কলামিস্ট টিম স্ট্যানলি বলেন, জনপ্রিয় ভোটে ডেমোক্র্যাটরা জয় পেতে পারে। তবে ইলেক্টোরাল কলেজে এগিয়ে থাকবেন ট্রাম্প। ২০১৬ সালের পুনরাবৃত্তি হতে যাচ্ছে। এবারের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের আলোচনা টেবিলে উঠতে পারে। বাইডেন প্রশাসন সরাসরি ইরানের সঙ্গে যুদ্ধে যেতে না চাইলেও ট্রাম্প যেতে পারেন। এ ধরনের একটি যুদ্ধ কোন পরিণতির দিকে যাবে, তা কল্পনাতীত। বিষয়টি মার্কিন বিশেষজ্ঞদেরও মাথাব্যথার কারণ। 

অপরদিকে কমলার প্রশাসন বাইডেনের আদলেই চলতে পারে। বাইডেন ইসরায়েলকে সহযোগিতা দিলেও নেতানিয়াহুর অনেক পদক্ষেপের বিরোধিতা করেছেন। কমলাও একই পথে হাঁটতে পারেন। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এর আগে কোনো নারী প্রেসিডেন্ট পদে জয় পাননি। কমলা নতুন রেকর্ড গড়েন কিনা– সেটাই দেখার বিষয়।

তুহিন তৌহিদ: সহসম্পাদক, সমকাল

আরও পড়ুন

×