সরকারের সিদ্ধান্ত ইতিবাচকভাবে দেখছি, বাসায় ফিরে যান: হাসনাত আব্দুল্লাহ

সংবাদ সম্মেলনে হাসনাত আব্দুল্লাহ
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১১ মে ২০২৫ | ০৩:৪৫ | আপডেট: ১১ মে ২০২৫ | ০৫:৩৩
আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেছেন, সরকারের সিদ্ধান্ত ইতিবাচকবাবে দেখছি।
রোববার রাত সাড়ে তিনটায় সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
হাসনাত বলেন, সোমবার প্রজ্ঞাপন হবে এবং সেই প্রজ্ঞাপন নিয়ে আমরা আনন্দ মিছিল করব। আজকে আপনারা বাসায় ফিরে যান। প্রজ্ঞাপন জারি হলে আগামী কর্মসূচি আমরা জানিয়ে দেব।
হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার কর্তৃক আমাদের তিন দফা দাবি আমলে নেওয়ায় আমরা ইতিবাচকভাবে দেখছি। এ সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের সব কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে। একই সঙ্গে এতদিন পর্যন্ত ট্রাইব্যুনালে আওয়ামী লীগের বিচারের বিধান ছিল না। এখন দল হিসেবে বিচার করার বিধান যুক্ত করা হয়েছে। এগুলোকে আমরা ইতিবাচকভাবে দেখছি। তবে এতটুকুট যথেষ্ট নয়।
হাসনাত বলেন, সরকার ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে জুলাই অংশীদারের মতামতের ভিত্তিতে জুলাই ঘোষণাপত্র দেবে। কিন্তু ইতোপূর্বে সরকার টালবাহানা করেছে। এর আগে আমরা দেখেছি, ঘোষণাপত্র নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দ্বিধাদ্বন্দ্ব রয়েছে। সরকারকে আমরা ৩০ কার্যদিবসকে পর্যবেক্ষণে রাখব। আমরা আওয়ামী লীগের প্রশ্নে ঐক্যবদ্ধ। তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের প্রতিফলন আমরা জুলাই ঘোষণাপত্রে দেখতে চাই। একই সঙ্গে অন্তবর্তী সরকারকে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার আগে আবশ্যিকভাবে বিচারের রোডম্যাপ ঘোষণা করতে হবে। উপরোক্ত তিনটি দাবি বাস্তবায়নে সরকারকে আহ্বান জানাই। আওয়ামী লীগ প্রশ্নে আমরা ঐক্যবদ্ধ। যে চ্যাপ্টার পাঁচ আগস্ট ক্লোজ হয়ে গেছে, সেটা আর ওপেন করার সুযোগ নেই।
হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, বিগত সময়ে জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে সরকারের টালবাহানা লক্ষ্য করেছি। এ ছাড়া গণহত্যাকারীদের বিচারে দীর্ঘসূত্রিতা দেখছি। আমরা দেখছি, জুলাইয়ের আহতদের মামলা নেওয়া হচ্ছে না। অন্যদিকে জুলাই যোদ্ধারা আওয়ামী লীগের হামলার শিকার হচ্ছে। এ বিষয়ে সরকারের সুস্পষ্ট অবস্থান জানতে চাই। তিনি আর বলেন, আমরা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কার্যকরী সংস্কার চাই। আসিফ নজরুলের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। জানুয়ারিতে দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনাল গঠন হওয়ার কথা থাকলেও মে মাসেও সেটি বাস্তবায়ন হয়নি। সেজন্য অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সংস্কার চাই। একই সঙ্গে বিগত দেড়যুগ ধরে স্বজনপ্রীতি, দলেরর আনুগত্য দেখে বিচারক নিয়োগ করা হয়েছে। তার কারণে ন্যায্যতা নিশ্চিত হবে কিনা সেটি প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। দেশের প্রতিটি বিভাগে ট্রাইব্যুনালের অফিস স্থাপন করতে হবে।
হাসনাত বলেন, আওয়য়ামী লীগের অর্থনৈতিক যেসব প্রতিষ্ঠান হয়েছে এবং গণহত্যাকারীদের অর্থনৈতিক যোগান এখনও পর্যন্ত অটুট রয়েছে। আমাদের কাছে এখন পর্যন্ত খবর রয়েছে মন্ত্রণালয়গুলোতে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দোসররা রয়েছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের অর্থনৈতিক কাঠামো এখনও অটুট রয়েছে যার কারণে তারা বিদেশে বসে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। আমরা এ বিষয়ে সরকারের সুস্পষ্ট নীতিমালা দেখতে চাই, আওয়ামী লীগের সকল অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান অর্ডিন্যান্স ঘোষণা করে রাষ্ট্রায়ত্ত ঘোষণা করে নাগরিকদের কল্যাণে ব্যবহার করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগের ১৪ দলের অংশীদাররা আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের বিরুদ্ধে বিবৃতি দিয়েছে। যারা বিগত ১৫ বছরে ভোট ডাকাতি করে নাগরিকদের অধিকার হরণ করেছে এবং ফ্যাসিবাদ কায়েমের পক্ষে সমর্থন দিয়েছে তাদের ব্যাপারে সরকারের অবস্থান জানতে চাই।
এ সময় আপ বাংলাদেশের আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ, শিবিরের দপ্তর সম্পাদক সিবগাতুল্লাহ সিবগা, খেলাফত মজলিসের আমীর মামুনুল হক, জুলাই ঐক্যের মুসাদ্দিক আলী মুহাম্মদ, এবি জুবায়েরসহ এনসিপির নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
এ দিকে রাত সাড়ে ১১টার দিকে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের প্রতিক্রিয়া জানিয়ে রাজপথ ছাড়তে নিষেধ করেন হাসনাত আব্দুল্লাহ। তারপর তারা মিটিংয়ে বসেন। প্রায় চারঘণ্টা মিটিংয়ের পর সাড়ে তিনটার দিকে শাহবাগে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে হাসনাত এ সব কথা বলেন।