ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫

চন্দ্রঘোনা ফেরিঘাট সেতু নির্মাণ নিয়ে আবার শঙ্কা

চন্দ্রঘোনা ফেরিঘাট সেতু নির্মাণ নিয়ে আবার শঙ্কা

চন্দ্রঘোনা ফেরি পার হয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙামাটি, বান্দরবানসহ বিভিন্ন গন্তব্যে যেতে হয় যাত্রীদের। এতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয় তাদের সমকাল

 রাঙ্গুনিয়া প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২১ ডিসেম্বর ২০২৪ | ২৩:৪০

চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া ও তিন পার্বত্য জেলার মানুষ  পুরো পথ অনায়াসে আসা-যাওয়া করতে পারলেও তাদের থমকে যেতে হয় চন্দ্রঘোনা ফেরিঘাটে এসে। কারণ এখানে কর্ণফুলী নদীর ওপর কোনো সেতু নেই, ফেরিযোগে পারাপার করতে হয়। আর এতে দুর্ভোগের শেষ নেই তাদের।
জানা গেছে, ১৯৮৯ সালে ফেরি সার্ভিস চালু হয়। এই দীর্ঘ সময়ে অনেক এমপি-মন্ত্রী সেতু নির্মাণ প্রকল্প একনেকে পাস হওয়ার আশ্বাস দিলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। তবে এবার সত্যি সত্যি শুরু হয়েছে চন্দ্রঘোনা ফেরিঘাট সেতু নির্মাণের প্রাথমিক কাজ। কিন্তু সেতু নির্মাণকাজ কবে শুরু হবে সে আশ্বাস দিতে পারছেন না প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। ফলে সেতু নির্মাণ নিয়ে আবার শঙ্কা জেগেছে যাত্রীদের মনে।
রাঙ্গুনিয়া-কাপ্তাইয়ের কর্ণফুলী নদী তীরের দু’পাড়ের লোকজনের দীর্ঘ সময়ের দাবি, চন্দ্রঘোনা ঘাটে সেতু নির্মাণ। ১৯৮৯ সালে কর্ণফুলী নদী পারাপারের জন্য চালু হওয়া ফেরি সার্ভিস বর্তমানে রাঙামাটি সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের অধীনে পরিচালিত হচ্ছে। ১৯৯৩ সালে তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রী অলি আহমদ লিচুবাগান ফেরিঘাটে সেতু নির্মাণ করার জন্য তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনসহ ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। পরবর্তীতে লিচু বাগান ফেরিঘাটে সেতু নির্মিত না হয়ে গোডাউন দিয়ে কর্ণফুলী নদীর ওপর সেতু নির্মাণ করা হয়। এরপর থেকে লিচু বাগান ফেরিঘাটে সেতু নির্মাণ করার জন্য আর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
সংশ্লিষ্টরা জানান, সেতু নির্মাণের জন্য সম্ভাব্যতা যাচাই ও নকশা প্রণয়নের কাজ শুরু হয়েছে। নকশা প্রণয়নসহ সম্ভাব্যতার প্রতিবেদন সওজের সেতু বিভাগে দেওয়ার পর তা পরিকল্পনা কমিশন হয়ে তারপর একনেকে উঠবে। এর যে কোনো ধাপে এই প্রকল্প বাতিল করা হলে সে ক্ষেত্রে সেতুর স্বপ্ন অধরাই থেকে যাবে। তাই এখনও অনিশ্চিত বলা যেতে পারে চন্দ্রঘোনা ফেরিঘাট সেতুর কাজ। তবে সম্ভাব্যতা যাচাই ও নকশা প্রণয়নের কাজ যেহেতু শুরু হয়েছে তাই ‘আশার বেলুনে বাতাস ফুলিয়ে’ চন্দ্রঘোনাবাসীদের বোকা বানানো যাবে না বলে মন্তব্য করেন স্থানীয়রা।
স্থানীয়রা জানান, রাঙামাটি হয়ে বান্দরবানে যাতায়াতের জন্য একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে রাঙ্গুনিয়ার চন্দ্রঘোনা কর্ণফুলী নদীর এই ফেরি। কাপ্তাই অংশেও চন্দ্রঘোনার যানবাহন পারাপারের মাধ্যম সওজের ফেরি। কিন্তু নদীতে বালুচর ওঠা, পাহাড়ি ঢলসহ নানা কারণে প্রায়ই আটকে যায় ফেরিটা। এ সময় চরম বেকায়দায় আটকে থাকতে দেখা যায় শত শত যানবাহনকে। এই সেতু স্বাভাবিক নিয়মে পার হতে গেলেও প্রায় এক ঘণ্টা সময় লাগে। তাই   এখানে সেতু নির্মাণ খুবই প্রয়োজন বলে মনে করছেন স্থানীয়সহ তিন পার্বত্য এলাকার যানবাহন চালক, যাত্রীসহ সবাই।
সম্প্রতি এশিয়ান ইনফু স্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের অর্থায়নে প্রকল্প পরামর্শদাতা এসিই কনসালট্যান্ট লিমিটেডের উদ্যোগে সেতু নির্মাণে বিস্তারিত সম্ভাব্যতা যাচাই ও নকশা প্রণয়ন প্রকল্পের আর্থসামাজিক ও পরিবেশ সম্পর্কিত ‘মতবিনিময় সভা’ অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সেতু নির্মাণ করলে যাদের জমি অধিগ্রহণ করা হবে এবং যারা ঘরসহ ক্ষতির মুখে পড়বেন তারাসহ স্থানীয়রা মত প্রকাশ করেন। তবে এতে সবাই ক্ষতিপূরণ সাপেক্ষে সেতু নির্মাণের ব্যাপারে জোর সুপারিশ করেন। এমনকি এই প্রকল্প না হোক এমন কথা কেউই বলেননি এবং এটি হলে সবার লাভ হবে বলে মত প্রকাশ করেন। সভায় বক্তব্য দেন প্রকল্পের সোশ্যাল অ্যান্ড রিসেটেইলমেন্ট বিশেষজ্ঞ মো. ওয়ালিদ আক্তার এবং রাহাত খান মজলিশ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মো. ওয়ালিদ আক্তার বলেন, ‘ফেরিঘাট সেতু নির্মাণের জন্য নকশা প্রণয়ন ও সম্ভাব্য ক্ষতিসহ অন্যান্য আর্থ


সামাজিক বিষয় যাচাই করার কাজ করছেন তারা। ৪৭০৮০ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি সেতু হতে পারে। এজন্য তারা নকশা প্রণয়নসহ প্রাথমিক কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে এই সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন তারা সওজ’র সেতু বিভাগে দেবেন এবং সেখান থেকে পরিকল্পনা কমিশন হয়ে একনেকে উঠে চূড়ান্ত অনুমোদন পাবে। এরপর টেন্ডার প্রক্রিয়ার সাহায্যে মূল সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হবে বলে তিনি জানান। তবে বিষয়টি সময়সাপেক্ষ।
 

আরও পড়ুন

×