পর্যটন শহরে করোনা, ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়ার প্রকোপ

পর্যটকে ঠাসা কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত, স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না কেউ। গত শুক্রবার লাবণী পয়েন্ট থেকে তোলা ছবি সমকাল
ইব্রাহিম খলিল মামুন, কক্সবাজার
প্রকাশ: ২৯ জুন ২০২৫ | ০০:৫৪
‘সংক্রমণের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ’ জোন হিসেবে পরিচিত পর্যটন শহর কক্সবাজারে গত ২২ দিনে (৪ থেকে ২৫ জুন) ১৬ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এরপরও স্থানীয়দের পাশাপাশি বেড়াতে আসা পর্যটকরা স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারে অনেকটা উদাসীন। গত শুক্র ও শনিবার সমুদ্র সৈকত ছিল পর্যটকে ঠাসা। তবে সিংহভাগ মানুষ মুখে মাস্ক পরেননি। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার কোনো চেষ্টাও নেই কারও মধ্যে। আবার অধিকাংশ হোটেল-রেস্তোরাঁর কর্মচারীরাও স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। এমনকি মালিকদের পক্ষ থেকেও তাদের মাস্ক সরবরাহ করা হচ্ছে না। তাতে করোনার সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এদিকে কক্সবাজারে ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে বলে জানা গেছে। ডেঙ্গু আক্রান্তের মধ্যে কেউ মারা না গেলেও ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে গত ৬ মাসে ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।
গত রমজানের ঈদের পর কক্সবাজারে বেড়াতে এসেছেন অন্তত ১০ লাখ পর্যটক। বিশেষ করে ছুটির দিনগুলোয় সৈকতের কলাতলী থেকে লাবণী পয়েন্ট পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটারে পর্যটকের ভিড় থাকে সবচেয়ে বেশি। কিন্তু মুখে মাস্ক পরছেন না পর্যটকরা। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাও সম্ভব হচ্ছে না।
জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের দেওয়া তথ্যমতে, গত ৪ থেকে ২৫ জুন– এই ২২ দিনে নমুনা পরীক্ষা করে ১৬ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে পাঁচজন স্থানীয়, ১১ জন আশ্রয়শিবিরের রোহিঙ্গা শরণার্থী।
প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের জুলাই থেকে ২০২২ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত দেড় বছরে কক্সবাজার জেলায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ২৮৯ জন। এর মধ্যে রোহিঙ্গা শরণার্থী ৩৪ জন।
শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে দেখা গেছে, হাজারো পর্যটক বিচরণ করছেন। কারও মুখে মাস্ক নেই। কারণ জানতে চাইলে ঢাকার মোহাম্মদপুরের ব্যবসায়ী কায়সার হামিদ বলেন, ‘দোকানে মাস্ক পাওয়া যাচ্ছে না। সৈকতে জনসমাগম এড়িয়ে চলারও কোনো সুযোগ নেই।’ সৈকতের হকার, আলোকচিত্রী, ঘোড়ার কর্মচারী– কারও মুখে মাস্ক দেখা যায়নি। পথচারী থেকে শুরু করে যাত্রীবাহী বাসে চলাচলকারী লোকজনের মুখেও মাস্ক ছিল না।
কক্সবাজার হোটেল গেস্ট হাউজ মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম শিকদার বলেন, ‘অতিথিদের জন্য মাস্ক বাধ্যতামূলক করা হলেও পর্যাপ্ত মাস্ক কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না। যে কারণে অধিকাংশ হোটেল-রেস্তোরাঁর কর্মচারীদেরও মাস্ক সরবরাহ সম্ভব হচ্ছে না।’
করোনায় আক্রান্ত সবাই নিজ বাড়িতে রয়েছেন জানিয়ে জেলা সিভিল সার্জন মোহাম্মদুল হক বলেন, ‘সংক্রমণের জন্য কক্সবাজার এমনিতে ঝুঁকিপূর্ণ জায়গা। এখানকার সৈকতে লাখ লাখ পর্যটকের সমাগম ঘটে। আবার উখিয়া-টেকনাফের আশ্রয়শিবিরে ১৪ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীর বসবাস। ঘনবসতির কারণে সেখানে করোনার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘করোনা রোগীদের চিকিৎসায় নয়টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিকভাবে তিন শয্যার আইসোলেশন সেন্টার খোলা হয়েছে। অচল যন্ত্রপাতিগুলোও ঠিকঠাক করা হচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ঘোষিত বিধিনিষেধ মেনে চলার পরামর্শ দিয়ে প্রচারণা চালানো হচ্ছে।’
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) ও অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, ‘আশ্রয়শিবিরে কয়েকজন রোহিঙ্গা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। করোনার বিস্তার রোধে স্বাস্থ্য বিভাগের নির্দেশনা কার্যকর করতে প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। আশ্রয়শিবিরে বন্ধ থাকা আইসোলেশন সেন্টারগুলো চালুর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।’
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্যমতে, কক্সবাজার জেলায় রোহিঙ্গাসহ ১ জানুয়ারি থেকে ২৫ জুন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ২ হাজার ৫০৮ জন। এর মধ্যে স্থানীয় আক্রান্তের সংখ্যা ৩০৩ জন। রোহিঙ্গা আক্রান্তের সংখ্যা ২ হাজার ২০৫ জন। চলতি জুনের প্রথম ২৫ দিনে ৮৫৬ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে ১৩০ জন স্থানীয় ও ৭২৬ জন রোহিঙ্গা।
অপরদিকে ছয় মাসে কক্সবাজার জেলায় ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন ৪৩১ জন। জুনের প্রথম ২৫ দিনে আক্রান্তের সংখ্যা ২১৬ জন। এর মধ্যে স্থানীয় ১৪২ জন এবং রোহিঙ্গা ৭৬ জন।
- বিষয় :
- পর্যটক