‘বালুখেকো এখনও আছে তবে চেহারা বদল হয়েছে’

লোহাগাড়ার ডলু খাল থেকে শ্যালো মেশিন দিয়ে তোলা হচ্ছে বালু সমকাল
কাইছার হামিদ, লোহাগাড়া (চট্টগ্রাম)
প্রকাশ: ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪ | ২৩:২৪
দিনরাত ড্রেজার মেশিন দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে লোহাগাড়ায় ডলু খাল। ক্ষমতার পালাবদল হলেও বালু লুট থামেনি। আগে আওয়ামী লীগ ঘরানার লোকজন বালু লুটের সঙ্গে জিড়ত থাকলেও এখন আওয়ামী লীগবিরোধী লোকজনই এই কাজ করছেন। স্থানীয়রা বলছেন, ‘বালুখেকোরা আগেও ছিল, এখনও আছে, শুধু চেহারার পরিবর্তন হয়েছে।’
ডলু খাল পার্বত্য বান্দরবানের টংকাবতী ইউনিয়নের পাহাড়ি এলাকা থেকে উৎপত্তি হয়ে লোহাগাড়া উপজেলার বেশ কয়টি ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে সাতকানিয়া উপজেলা প্রবাহিত হয়ে সাঙ্গু নদীতে পতিত হয়েছে। নদীটির দৈর্ঘ্য ৫৩ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ৪৬ মিটার। এ কারণে পাহাড়ি ঢলে ডলুতে প্রচুর বালুর জমে।
দেখা যায়, আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর কিছুদিন বালু উত্তোলন বন্ধ থাকলে ও গত তিন মাস ধরে উপজেলার চুনতি, চরম্বা, পদুয়া, কলাউজান ও পুটিবিলার অন্তত ৩০টি স্থানে বালু লুটের মহোৎসব চলছে। যুক্ত হয়েছে নতুন বালুখেকোর দল। তাদের সঙ্গে নেপথ্যে আওয়ামী লীগের পুরোনো বালুখেকোরাও রয়েছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। ক্ষমতার পটপরিবর্তনে পর নিষ্ক্রিয় থাকা কিছু ব্যক্তিও নতুন করে এ কাজে সক্রিয় হয়েছেন।
স্থানীয়দের ধারণা, গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে এখন পর্যন্ত লোহাগাড়ার বিভিন্ন এলাকা থেকে অন্তত কয়েক কোটি টাকার বালু লুট হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, সবচেয়ে বেশি বালু উত্তোলন করা হচ্ছে পুটিবিলা ও চুনতি ইউনিয়নে। চুনতি ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের উত্তর পানত্রিশা, মনদুলার চর ভাঙ্গা ব্রিজের পাশে, পেইক্কাছড়া, ফারাঙ্গা জামতলে শ্যালোমেশিন বসিয়ে নির্বিচারে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন চলছে। স্থানীয় বোম বজল, লম্বা সাহাবউদ্দীন, ঢুডা কাশেম ও ফরিদের নেতৃত্বে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে বলে জানান নিয়োজিত শ্রমিকরা।
অভিযোগ রয়েছে, পুটিবিলা ইউনিয়নের এমচরহাট বাজারের দক্ষিণ অংশে, সড়াইয়া কবির চৌকিদারের বাড়ির পেছনে, দরগাহ ঘাট, বলিরজুম, বাবুল বাজার, পেইক্কা ছড়া, রামবিলা, পলোখালের মুখ থেকে বালু উত্তোলন করছে নুরুল আলম জিকু, লম্বা সাহাবউদ্দীন, ওসমান সওদাগর, হাসান আলী ও নাজিম উদ্দীন বালু তুলছেন বলে অভিযোগ।
অভিযুক্ত নুরুল আলম জিকু বলেন, ‘আমার কাজ বালু উত্তোলন নয়, বালু উত্তোলন করেন
শ্রমিকরা, এসব বালু উত্তোলনের পর আমি নিলামে নিয়ে থাকি।’
লম্বা সাহাবউদ্দীন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘‘আমি নই, মোটা সাহাবউদ্দীন বালু উত্তোলন করছে, সাহাবউদ্দীন ‘মোটা আর লম্বা’ দুজন হওয়াতে লুকোচুরি হচ্ছে।’ তবে অভিযোগ অস্বীকার করলেও বিগত আওয়ামী লীগ সরকার ও বর্তমান সরকারের আমলে বালু মহলের একাংশ তিনিই নিয়ন্ত্রণ করেন বলে জানা গেছে।
স্থানীয় প্রশাসন মাঝে মধ্যে উত্তোলন করা বালু জব্দ করে নিলামে বিক্রি করছে। তবে এতে বালু উত্তোলন বন্ধ হচ্ছে না। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, বালুখেকোরা উত্তোলিত বালু উপজেলা প্রসাশনের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে গোপনে নিলামের ব্যবস্থা করেন। এ কারণে বালু উত্তোলনের পথ সহজ হয়েছে। বিভিন্ন খাল ও ছড়া রক্ষায় নিলাম নয় বালু উত্তোলন স্থায়ীভাবে বন্ধের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
স্থানীয় নূর হোসেন বলেন, ‘বালুখেকোরা আগেও ছিল, এখনও আছে। শুধু চেহারার পরিবর্তন হয়েছে। ডলুখাল ক্ষত বিক্ষত হচ্ছে যুগ যুগ ধরে। এতে গ্রামীণ সড়কের যেমন ক্ষতি হচ্ছে, তার চেয়ে বেশি ক্ষতি গ্রস্থ হচ্ছে খাল–পাড়ের বাসিন্দারা। বর্ষা এলেই তারা আতঙ্কে থাকেন। বালু তোলার কারণে নদী ভাঙনে হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হয়, অথচ লাভবান হচ্ছে ক্ষমতাধন গুটিকয়েক।
এ ব্যাপারে লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ ইনামুল হাসান বলেন, ‘বালু খেকোদের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত অভিযান চালানো হচ্ছে, তবুও বালু উত্তোলন বন্ধ করা যাচ্ছে না। এসব বন্ধে অচিরেই সেনাবাহিনী, পুলিশ, সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে ইউনিয়নভিত্তিক কমিটি গঠন করে নতুনভাবে উদ্যাোগ নেয়া হবে।’
- বিষয় :
- বালুখেকো