ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

ফটিকছড়িতে দল বেঁধে জমির টপসয়েল সাবাড়

ফটিকছড়িতে দল বেঁধে জমির টপসয়েল সাবাড়

.

 ইকবাল হোসেন মনজু, ফটিকছড়ি 

প্রকাশ: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ | ০০:১৪

রীতিমতো দল বেঁধে ফটিকছড়িতে টপসয়েল (জমির উপরিভাগ) কাটা হচ্ছে। মাটিখেকোরা ফসলি জমির উপরিভাগের উর্বর মাটি কেটে বিক্রি করছে ইটভাটায়। কয়েকটি ইউনিয়নে মাটি ব্যবসায় জড়িতদের একটি অংশ রাজনৈতিক দলের পরিচয় ব্যবহার করেন। সাবেক ও বর্তমান জনপ্রতিনিধিরাও এর সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছেন।
পাইন্দংয়ে বশর-দিদার-সরোয়ার গ্রুপ, কাঞ্চননগরে মোবারক রাজামিয়া নজরুর গ্রুপ, দাঁতমারায় রানা গ্রুপ, হাসনাবাদে ইব্রাহীম-জসিম গ্রুপ, বাগানবাজারে আলমঙ্গীর-ফারুক-সুমন গ্রুপ, নারায়ণহাটে বেলাল-রমজান-বোরহান সওদাগর-আলতাব মেম্বার গ্রুপ মির্জারহাটে আলম গ্রুপ রাতে টিলা, পাহাড় ও ধানিজমির টপসয়েল কাটছে বলে অভিযোগ রয়েছে। 
অনুসন্ধানে জানা গেছে, সন্ধ্যা নামতেই মাটি কাটার তৎপরতা শুরু হয়। রাত গভীর হলেই খননযন্ত্র দিয়ে শুরু হয় মাটি কাটা। নির্বিচারে মাটি কাটার ফলে জমি ক্রমশ চাষাবাদের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। স্থানীয়রা জানায়, মাটিখেকোরা প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের ভয়ে কেউ মুখ খুলছেন না। মাঝেমধ্যে উপজেলা প্রশাসন অভিযান চালিয়ে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলেও তাতে কাজ হচ্ছে না। 
সূত্র জানিয়েছে, উপজেলা পরিষদ, ভূমি অফিস, নাজিরহাট পৌরসভার পুরোনো হালদা সেতুর পাশে, ফটিকছড়ি ও ভূজপুর থানায় যাতায়াতের বিভিন্ন সড়কের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে মাটিখেকোরা সোর্স লাগিয়ে রাখে। তাদের কাজ হচ্ছে প্রশাসনের গতিবিধির ওপর নজরদারির মাধ্যমে অভিযানের আগাম তথ্য জানিয়ে মাটি কাটার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের জানিয়ে দেওয়া।
সরেজিমন দেখা যায়, নাজিরহাট পৌরসভার মন্দাকিনি বিল, পাইন্দংয়ের ফটিকছড়ি বিল ও যুগীনিঘাটা, পাট্টিলাকুল, শ্বেতকুয়া, দাঁতমারার শাদীনগর, রত্নপুর কাট্টাইল্যে টিলা, ভূজপুরের রাবার ড্যাম ও পুকিয়া বিল, সুয়াবিলের হাজিরখিল, হারুয়ালছড়ির লম্বাবিল ও মহানগর, শান্তিরহাট, কাঞ্চননগরের চমুরহাট, চেঙ্গেরকুল এলাকায় ভেকু (মাটি কাটার যন্ত্র) দিয়ে মাটি কেটে ড্রাম্প ট্রাক, মাহেন্দ্র গাড়িতে করে ইটভাটাসহ জমি ভরাটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। নাজিরহাট মন্দাকিনি বিলটি এখন আর বিল নেই, বিরান ভূমিতে পরিণত হয়েছে। এখানে মোর্শেদ ও রুবেল নামে দু’জনের সিন্ডিকেট রাত-দিন মাটি কাটছে বলে অভিযোগ রয়েছে। 
কয়েকজন কৃষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, পাশের জমিতে গভীরভাবে মাটি কাটায় তাদের জমিতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ফলে বাধ্য হয়ে তাদের জমির মাটি বিক্রি করতে হচ্ছে। জমির ওপর দিয়ে মাটি বহনকারী গাড়ি নিতে বাধ্য করেন। 
জানতে চাইলে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবদুল্লাহ আল আমিন বলেন, ‘ফসলি জমির মাটি কাটা দণ্ডনীয় অপরাধ। এসব অপতৎপরতার বিরুদ্ধে প্রায়ই অভিযান চালানো হয়। কয়েকদিন আগে সমন্বিতভাবে অভিযান চালানো হয়েছে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি খননযন্ত্র আটক করা হয়েছে। জরিমানা করা হয়েছে। জড়িত কয়েক জনকে দণ্ড দেওয়া হয়েছে। যেহেতু ফটিকছড়ি বিশাল এলাকা তাই মাটিখেকোদের বিরুদ্ধে এলাকার জনগণকে সচেতন হতে হবে।’

আরও পড়ুন

×