ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫

ওষুধের দোকানের পেছনে ক্লিনিক; ডিগ্রি নেই, দেন সব রোগের চিকিৎসা

ওষুধের দোকানের পেছনে ক্লিনিক; ডিগ্রি নেই, দেন সব রোগের চিকিৎসা

লোহাগাড়ায় অবৈধ ক্লিনিকে অভিযান চালান নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাজমুন লায়েল সমকাল

 লোহাগাড়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৯ এপ্রিল ২০২৫ | ২৩:৫৬

জিয়াউর রহমান ও জিল্লুর রহমান সম্পর্কে তারা ভাই। এলাকার লোকজন তাদের ডাক্তার হিসেবে চেনেন। রয়েছে তাদের চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার এম চর হাট বাজারে ওষুধের দোকান। ওষুধের দোকানা নয়, যেন একটি ক্লিনিক। ফার্মেসির পেছনে রয়েছে ৫ শয্যার একটি ছোট্ট ক্লিনিক। ডাক্তার না হয়েও নিয়মিত দেখেন তারা, দেন ব্যবস্থাপত্রও। রোগীদের  ভর্তি করেও চিকিৎসা দেন। এভাবেই চলছে দুই দশক ধরে।
স্থানীয়দের অভিযোগের সূত্র ধরে, গত বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলার পুটিবিলা ইউনিয়নের এম চর হাট বাজারের ওই ওষুধের দোকানে অভিযান পরিচালনা করেন লোহাগাড়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাজমুন লায়েল।
জিয়াউর রহমানের মালিকানাধীন ওষুধের দোকানে রোগী ভর্তি রেখে অবৈধভাবে চিকিৎসা প্রদান এবং মেয়াদোত্তীর্ণ ও বিক্রয়-নিষিদ্ধ ওষুধ সংরক্ষণের দায়ে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ ছাড়া ওষুধের দোকানের ভেতরে কথিত রোগী দেখার চেম্বারটি সিলগালা করে দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। জিল্লুর রহমানের ওষুধের দোকানের ভেতরেও রয়েছে শয্যা। তিনিও নিয়মিত রোগী দেখেন, রোগী ভর্তি দেন।
ভ্রাম্যমাণ আদালত সূত্রে জানা গেছে, এম চর হাট বাজারের মা ওষুধের দোকানের মালিক জিয়াউর রহমান তার ওষুধের দোকানে চিকিৎসকের সনদ ছাড়াই নিয়মিত রোগী ভর্তি রেখে বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা দিয়ে আসছিলেন। এ ছাড়া তার ওষুধের দোকানে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ ও বিক্রয়ের জন্য নিষিদ্ধ ফিজিশিয়ান স্যাম্পল মজুদ রয়েছে– এমন তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করা হয়।
অভিযানকালে তথ্যের সত্যতা পাওয়া যায়। ফার্মেসিতে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ, ফিজিশিয়ান স্যাম্পল ও ব্যবস্থাপত্র ছাড়া বিক্রয়-নিষিদ্ধ (ওটিসি বহির্ভূত) ওষুধ পাওয়া যায়। ওষুধের দোকানের ভেতরে রোগী ভর্তি রেখে ভুয়া চিকিৎসকের দ্বারা চিকিৎসা দেওয়ার প্রমাণও মেলে। এসব অপরাধে ভ্রাম্যমাণ আদালত ওষুধের দোকানের মালিক জিয়াউর রহমানকে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ও সংশ্লিষ্ট বিধিমালা অনুযায়ী ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেন এবং তাৎক্ষণিকভাবে তা আদায় করেন। একই সঙ্গে ওষুধের দোকানের ভেতরের চেম্বারটি সিলগালা করে দেওয়া হয়।


অভিযান পরিচালনাকালে লোহাগাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. ইশতিয়াকুর রহমান, পুটিবিলা ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইকবাল এবং লোহাগাড়া থানা পুলিশের একটি দল উপস্থিত ছিলেন।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাজমুন লায়েল বলেন, অবৈধভাবে চিকিৎসা সেবা প্রদান বা মেয়াদোত্তীর্ণ ও নিষিদ্ধ ওষুধ বিক্রির কোনো সুযোগ নেই। জনস্বার্থে এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জিল্লুর রহমান প্রগতি মেডিকো নাম দিয়ে ফার্মেসি পরিচালনা করছেন দীর্ঘ দিন ধরে। ফার্মেসির পেছনে বেড বসিয়ে চিকিৎসাও করেন তিনি। ব্যবস্থাপত্রও দেন। জিল্লুর রহমানের কাছেই ফার্মেসি ব্যবসা শেখেন ছোটভাই জিয়াউর রহমান। বেশ ক'বছর পর একইভাবে জিয়াউর রহমানও খুলে বসেন মা ফার্মেসি নামে আরেক প্রতিষ্টান। তারা রোগী দেখেন, ব্যবস্থাপত্র দেন, ভর্তি দেন, আবার কমিশনের ভিত্তিতে উপজেলা সদরে অপ্রয়োজনীয়ভাবে বিভিন্ন পরীক্ষার জন্য ল্যাবেও পাঠান রোগীদের। এমন অভিযোগ অহরহ। তাদের নেই কোন ডিগ্রি। নেই কোন ফার্মাসিস্ট কোর্সও। 

এ বিষয়ে জিল্লুর রহমানকে একাধিকবার কল দিলেও রিসিভ করেননি। জিয়াউর রহমান বেড থাকা ও চিকিৎসা করার কথা স্বীকার করে বলেন, আমাদের ৬ মাস মেয়াদি এলএমএফ ডিগ্রি রয়েছে। কোন প্রতিষ্টান থেকে করেছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি আমতা আমতা করতে করতে বলেন দোহাজারী পটিয়া শাখা থেকে করেছেন। সার্টিফিকেট দেখে নাম জানাবো বলে সংযোগ কেটে দেন। পরে আর জানাননি।

স্থানীয় ইউপি সদস্য নাছির উদ্দিন বলেন, তারা পল্লী চিকিৎসক। ফার্মেসিও করেন, রোগীও দেখেন।

চিকিৎসা নিতে আসা রাবেয়া বেগম (৪৫) নামে একজন রোগী বলেন, আমার জ্বর আর প্রচণ্ড গলা ব্যথা। তাই ডাক্তার জিল্লুর স্যারের কাছে আসছি। তিনি প্রথমে রক্ত পরীক্ষা করতে দিলেন। তারপর পরীক্ষার রিপোর্ট দেখে প্রেসক্রিপশন করে দিয়েছেন। ওষুধও কিনেছি।

এ সময় নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ব্যক্তি জানান, তারা সকাল থেকে রাত পর্যন্ত নিয়মিত রোগী দেখেন। বেশিরভাগ রোগী অশিক্ষিত-অসহায় মানুষগুলো। ওই মানুষগুলোর অজ্ঞতাকে পুঁজি করে ডাক্তার সেজেছেন। উপজেলা সদরের হাসপাতালের ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সঙ্গে সিন্ডিকেট তৈরি করে পরীক্ষা-নিরীক্ষার নামে তাদের থেকে হাতিয়ে নিচ্ছেন হাজার হাজার টাকা। তাছাড়া, সহজেই যে কোন রোগীকে এন্টিবায়োটিক দিয়ে দিচ্ছেন। 

বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেন লোহাগাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প কর্মকর্তা ডা: মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন।


 

আরও পড়ুন

×