একজন সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা দেখেন ২২৯ প্রাথমিক বিদ্যালয়

.
ইকবাল হোসেন মনজু, ফটিকছড়ি (চট্টগ্রাম)
প্রকাশ: ১৭ মে ২০২৫ | ২৩:৫৯
ফটিকছড়ি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের অনুমোদিত জনবলের সংখ্যা ১৫ জন, তার মধ্যে বর্তমানে কর্মরত আছেন মাত্র ৩ জন। বাকি ১২টি পদ খালি। দীর্ঘদিন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার পদ খালি। ৮ জন সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তার মধ্যে আছেন মাত্র একজন, তিনিই আবার ভারপ্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করছেন। তার সঙ্গে আছেন হিসাব সহকারী ও পিয়ন।
তিনজন কর্মী দিয়ে উপজেলার ২২৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয় তদারকি ও দাপ্তরিক কাজ করা দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। আবার এসব বিদ্যালয়ে ১ হাজার ৫৫৬ জন শিক্ষকের পদ থাকলেও শূন্য ১৭১টি পদ। এর মধ্যে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য ৬১টি, সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য ১১০টি।
বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকট আর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয়ে রয়েছে জনবল সংকট। দুই সংকটে ব্যাহত হচ্ছে উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা। শিক্ষকরা শিক্ষা কার্যালয়ে নানা কাজে ভোগান্তিতে পড়েন, দীর্ঘসূত্রতা তৈরি হচ্ছে প্রশাসনিক কাজে।
জানা যায়, উপজেলার ২২৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৩৫ হাজার ৭৬ জন শিশু পড়ালেখা করে। এসব বিদ্যালয় পরিচালনার জন্য উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয়ে একজন শিক্ষা কর্মকর্তা (ইউইও), আটজন সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা (এইও), একজন উচ্চমান সহকারী, তিনজন অফিস সহকারী, একজন হিসাব সহকারী এবং একজন পিয়নের পদ রয়েছে। ১৫টি পদের মধ্যে বর্তমানে ১২টিই খালি। ২০১৫ সাল থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত সময়ে বেশির ভাগ কর্মকর্তা-কর্মচারী তদবির করে অন্যত্র বদলি হয়ে গেছেন।
বর্তমানে উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তার (এইও) ৭টি পদ খালি। অফিস সহকারীর ৪টি পদের সবকটিই খালি। এখন একমাত্র হিসাব সহকারী ও পিয়ন কর্মরত আছেন।
বাংলাদেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক কমিটির কেন্দ্রীয় সিনিয়র সহসভাপতি ও ধুরুং জুবিলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এসএম দিদারুল আলম চৌধুরী বলেন, ‘উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীর অভাবে শিক্ষকরা টাইম স্কেল, বকেয়া বেতন, উন্নীত বেতন স্কেল পাওয়াসহ নানা কাজে ভোগান্তিতে পড়েন। পর্যাপ্ত নজরদারি না থাকায় প্রাথমিকের শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হয়। এখানে জরুরি ভিত্তিতে কর্মকর্তা-কর্মচারী পদায়ন করা জরুরি।’
বড় ছিলোনিয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাইফুন নাহার বলেন, ‘উপজেলা শিক্ষা কার্যালয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারী শূন্যতায় প্রশাসনিক নানা কাজ ব্যাহত হচ্ছে। স্বল্প লোকবল নিয়ে বিভিন্ন বিদ্যালয় পরিদর্শন ও ক্লাস্টার পরিচালনা কাজ চালিয়ে নেওয়াও খুব কঠিন। রোসাংগিরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. আজিম উদ্দিন বলেন, ‘শিক্ষা কার্যালয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অভাবে আমরা ক্লাস্টারে যথাযথ সময় দিতে পারি না।’
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. হাসান মুরাদ চৌধুরী বলেন, ‘কার্যালয়ে আমিই একমাত্র ব্যক্তি, যেখানে সব কাজই আমাকে করতে হয়। কর্মকর্তা-কর্মচারী সংকটের কারণে প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নবিষয়ক ক্লাস্টার প্রশিক্ষণ পরিচালনাসহ যাবতীয় কাজকর্ম একা করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছি। ফলে শিক্ষা কার্যালয়ের কার্যক্রম ও বিদ্যালয়ের শিক্ষাব্যবস্থা স্থবির হয়ে পড়েছে। শূন্য পদগুলো পূরণে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে।’ তিনি দাবি করেন, বিশাল উপজেলায় শিক্ষক ও শিক্ষা কর্মকর্তা-কর্মচারীর এতগুলো পদ খালি থাকার পরও চলতি বছরে পাসের হার ছিল সন্তোষজনক।
- বিষয় :
- প্রাথমিক বিদ্যালয়