১৩ হাজার একর বন রক্ষায় মাত্র ৩০ কর্মী

ফাঁসিয়াখালীর ডুলাহাজারায় সংরক্ষিত বনের ভেতর গড়ে উঠেছে ঘরবাড়ি সমকাল
চকরিয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০১ জুন ২০২৫ | ০০:০২
কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জের ৫টি বনবিটে রয়েছে সংরক্ষিত ও রক্ষিত ১৩ হাজার ৬০১ একর বনভূমি। বিস্তীর্ণ এই বন রক্ষায় দায়িত্ব পালন করছেন ৩০ জন বনকর্মী। অথচ বনকর্মী থাকার কথা ৫১ জন। পাশাপাশি ৬ জন ডেপুটি রেঞ্জার পদের সবগুলোই খালি। প্রায় অর্ধেক জনবল দিয়ে মূল্যবান বনজ সম্পদ রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
এদিকে, বনভূমি দখল করে কাঁচা-পাকা স্থাপনা তৈরিতে বাধা দিতে গিয়ে বনকর্মীরা শ্লীলতাহানি ও নারী নির্যাতনসহ নানা ‘মিথ্যা মামলা’র আসামি হচ্ছেন। রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয়ে অবৈধ দখলদাররা এসবে উৎসাহিত হচ্ছেন বলে বনকর্মীরা জানান।
বনবিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জের ৫টি বনবিটের অধীনে সংরক্ষিত বনভূমি রয়েছে ১১ হাজার ৯২.৩৪ একর। এ ছাড়া রক্ষিত বনভূমির পরিমাণ ২ হাজার ৫০৯.১১ একর। সব মিলিয়ে সংরক্ষিত ও রক্ষিত বন ভূমির পরিমাণ ১৩ হাজার ৬০১ একর। এই পরিমাণ বনভূমি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ডুলাহাজারা, ফাঁসিয়াখালী, মানিকপুর, কাকারা, নলবিলা ৫টি বনবিট রয়েছে। এসব বনবিটের বিপরীতে বর্তমানে জনবল রয়েছেন ৩০ জন।
ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা মেহেরাজ উদ্দিন বলেন, ‘সংরক্ষিত বনভূমি পুরোটাই বনবিভাগের নিয়ন্ত্রণাধীন আর রক্ষিত বনভূমি জেলা প্রশাসনের মালিকানাধীন হলেও রক্ষণাবেক্ষণ করতে হয় বনবিভাগকে। রক্ষিত বনভূমির বেশির ভাগই ১৯৬৫ সালের পর থেকে বিভিন্নভাবে দখল বেদখল হয়ে গেছে। অবশিষ্ট রক্ষিত বনভূমিও দখলবাজদের হাত থেকে রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘অতীতে দখল হওয়া বেশির ভাগ রক্ষিত বনভূমিতে বাড়িঘর ছিল কাঁচা। বর্তমানে এসব কাঁচা স্থাপনা পাকা করা হচ্ছে। এ নিয়ে দখলদারদের সঙ্গে বনবিভাগের সংঘাত লেগেই রয়েছে। এতে বনকর্মীরা আক্রান্ত হচ্ছেন দখলকারদের হাতে। অন্যদিকে, বনকর্মীরা শক্তভাবে দখল মোকাবিলা করতে গিয়ে বিচারিক আদালতে ধর্ষণসহ মারপিট, বাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগে নালিশি মামলায় আসামি হচ্ছেন।
একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, ‘রেঞ্জের বনজসম্পদ, বনভূমি ও বন্যপ্রাণী রক্ষার্থে প্রয়োজনীয় জনবল না থাকাটা উদ্বেগজনক। স্বল্পসংখক বনকর্মী দিয়ে বিশাল বন এলাকা রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়ছে। অতীতে বন্যা, জলোচ্ছ্বাস ও নদী ভাঙনে ভিটে-মাটি হারা অসংখ্য পরিবার রক্ষিত ও সংরক্ষিত বনভূমিতে কাঁচা বসতবাড়ি নির্মাণ করে বসবাস করে আসছে। বর্তমানে অবৈধ দখলদাররা নিজেদের কাঁচা বাড়ি পাকা ও সেমিপাকা করে বনভূমি দখল স্থায়ী করতে চাইলে বনবিভাগ বাধা দিচ্ছে। এতে বনভূমিতে অবৈধভাবে বসবাসকারী লোকজন বনকর্মীদের ওপর আক্রমণ করছেন।’ বনকর্মীরা জানান, বনবিভাগের লোকজন অবৈধ দখল ও দখলদারদের আক্রমণ প্রতিহত করতে গিয়ে শ্লীলতাহানি, মারধরসহ নারী নির্যাতনের অভিযোগে মামলার আসামি হচ্ছেন।
ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জ কর্মকর্তা মেহেরাজ উদ্দিন দাবি করেন, ‘বন রক্ষা করতে গিয়ে বনকর্মীরা প্রতিনিয়ত লাঞ্ছিত অথবা মামলার শিকার হচ্ছেন। সংরক্ষিত ও রক্ষিত বনে অবৈধ বসবাসকারীদের জন্য স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর সড়ক, কালভার্ট ও সেতু নির্মাণ করে দিচ্ছে। পল্লী বিদ্যুৎ ও পিডিবি নিয়মিত বিদ্যুৎ সংযোগ দিচ্ছে। এতে বনভূমিতে পাকা বাড়ি করতে বিত্তবানরাও উৎসাহিত হচ্ছে। অনেক অবৈধ দখলদার রীতিমতো দখলীয় বনভূমি নন রেজিস্টার্ড দলিলে বেচা-বিক্রিও করছে, যা সম্পূর্ণ বেআইনি।’ সংরক্ষিত বনে অনধিকার প্রবেশ করলে বনবিভাগ যে কারও বিরুদ্ধে বন আইনে মামলা দায়ের করতে পারে। বনবিভাগের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, ‘রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ের কারণে বনবিভাগ অনেক সময় সরকারি সম্পত্তি রক্ষায় যথাযথ আইন প্রয়োগে ব্যর্থ হচ্ছে।’
- বিষয় :
- কর্মী নিয়োগ