ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫

মিরসরাইয়ে আট খাল খনন চাষ বাড়বে ৮০০ হেক্টরে

মিরসরাইয়ে আট খাল খনন চাষ বাড়বে ৮০০ হেক্টরে

খইয়াছড়া ছড়াটি মরা ছড়া হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিল। ছড়াটি ভরাট হয়ে যাওয়ায় বর্ষায় জলাবদ্ধতা হতো কয়েকটি গ্রামে। এটি খনন করায় এবার জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পাওয়ার আশা করছেন স্থানীয়রা- সমকাল

 বিপুল দাশ, মিরসরাই (চট্টগ্রাম)

প্রকাশ: ১৪ জুন ২০২৫ | ২২:৫২

বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) উদ্যোগে মিরসরাইয়ে উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ আটটি খাল ও ছড়া খনন করা হয়েছে। এতে বর্ষায় অন্তত দুই লাখ মানুষ জলাবদ্ধতা থেকে রক্ষা পাবেন। শুকনো মৌসুমে এসব খালের পানি ব্যবহার করে ৮০০ হেক্টর জমিতে ফসল চাষ সম্ভব হবে।
বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ সহকারী প্রকৌশলী তমাল দাস বলেন, ‘প্রয়োজন বিবেচনায় উপজেলার আটটি খালের খননকাজ শুরু করেছি। এসব খাল খনন সম্পন্ন হলে উপজেলার অন্তত দুই লাখ মানুষ সরাসরি সুফল পাবেন। জলাবদ্ধতা নিরসন ও নতুন করে কৃষিজমি সেচের আওতায় আনার বিষয়টি মাথায় রেখে কাজ করছি আমরা।’
জানা যায়, চলতি বছর সরকারের উন্নয়ন বরাদ্দ খাত থেকে উপজেলার সাতটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা এলাকায় প্রবাহিত আটটি খাল খননের প্রকল্প শুরু হয়েছে। উপজেলার খইয়াছড়া ইউনিয়নের খইয়াছড়া খালের ৫ কিলোমিটার, ডোমখালি-ওয়াহেদপুর-হাইদকান্দি ও সাহেরখালি ইউনিয়নের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া গজারিয়া খালের ৯ কিলোমিটার, সাহেরখালি ইউনিয়নের ডাকাতিয়া খালের আড়াই কিলোমিটার, সাহেরখালি ইউনিয়নের নূর মোহাম্মদ চৌধুরী খালের দেড় কিলোমিটার, মঘাদিয়া ইউনিয়নের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া খন্দকাটা খালের ৪ কিলোমিটার, করেরহাট ইউনিয়নের সোনাইছড়ি ও তিলকের ছড়ার ৪ কিলোমিটার, মিরসরাই পৌরসভা এলাকার কুমারী খালের (৩ কিলোমিটার, খইয়াছড়া ইউনিয়নের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়া নাপিত্তাছড়া খালের ২ কিলোমিটার খনন করা হচ্ছে। উপযোগিতা বিবেচনায় এই আটটি খালের ৩১ কিলোমিটার খনন করা হবে। গড়ে প্রতি কিলোমিটার ১০ লাখ টাকা হিসেবে এসব খাল খনন করতে ব্যয় হবে ৩ কোটি ১০ লাখ টাকা। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে শুরু হয়ে জুন মাস নাগাদ এসব খাল খননের কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। এরই মধ্যে সোনাইছড়ি-তিলকের খালের খননকাজ সম্পন্ন হয়েছে। অন্য খাল ও ছড়াগুলোর খননকাজ চলমান।
খইয়াছড়া ইউনিয়নের খইয়াছড়া ছড়া ভরাট হয়ে যাওয়ায় বর্ষায় পাহাড় থেকে নেমে আসা পানিতে জলাবদ্ধতা হতো উত্তর আমবাড়িয়া, পূর্ব খইয়াছড়া, পশ্চিম খইয়াছড়া গ্রামে। জলাবদ্ধতার কারণে কৃষিকাজ ব্যাহত হতো। ছড়াটি খনন করার ফলে জলাবদ্ধতার ভোগান্তিতে পড়তে হবে না স্থানীয়দের। স্থানীয় কৃষক রবিউল হোসেন বলেন, ‘ছড়াটি খনন করার ফলে বেশি উপকৃত হবেন কৃষকরা। এবার জলাবদ্ধতায় ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা থাকবে না। আবার শুষ্ক মৌসুমে ছড়ার পানি ব্যবহার করে ফসল উৎপাদন করা যাবে।’
গোভানিয়া খালের খননকাজ শুরু হওয়ায় খুশি এই এলাকার মানুষ। জানতে চাইলে স্থানীয় শিবলু, শংকর শর্মা বলেন, ‘প্রতি বছর বর্ষায় পাহাড় থেকে নেমে আসা বন্যার পানিতে ডুবে যায় আমাদের ঘরবাড়ি। নাব্যতা হারানো ও কিছু স্থানে খাল সরু হয়ে যাওয়ায় বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হতো এখানে। এবার খাল খনন করায় আশা করছি বন্যা থেকে মুক্তি পাব আমরা।’ ডোমখালি-ওয়াহেদপুর-হাইদকান্দি ও সাহেরখালি ইউনিয়নের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া গজারিয়া খাল খনন নিয়ে উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক শাহেদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘চার ইউনিয়নের বর্ষার পানি এ খাল দিয়ে সাগরে নামে। কিন্তু দীর্ঘদিন খনন না হওয়ায় এলাকার মানুষের জন্য খালটি দুঃখের কারণ ছিল। এবার খালটি খননের কারণে স্থানীয় লোকজন ও কৃষকরা এ সুফল পাবেন।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ চন্দ্র রায় বলেন, ‘উপজেলার খালগুলো খনন হওয়ায় শুষ্ক মৌসুমে ৮০০ হেক্টর জমির আবাদ বাড়তে পারে।’

আরও পড়ুন

×