ঢাকা সোমবার, ০৭ জুলাই ২০২৫

মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর মৃত্যু: যা বলছে হাইকমিশন

মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর মৃত্যু: যা বলছে হাইকমিশন

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ১৭:২০ | আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ১৭:৩৬

সম্প্রতি মালয়েশিয়ার সারওয়াক রাজ্যের কুচিংয়ের জালান গম্বিরের ভাসমান মসজিদের পাশের একটি নদী থেকে ইরফান সাদিক নামে এক বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ওই শিক্ষার্থীর পরিবারের সদস্যরা দাবি করছে, র‍্যাগিংয়ের শিকার হয়ে তার মৃত্যু হয়েছে। তবে মালয়েশিয়ায় অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশন বলছে, ওই শিক্ষার্থী বিষণ্ণতায় ভুগছিলেন।

হাইকমিশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, উক্ত শিক্ষার্থীর মৃত্যুর খবর হাইকমিশনের নজরে আসার সঙ্গে সঙ্গে মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. গোলাম সারোয়ার এই অফিসের কাউন্সেলর পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তাকে  দ্রুততম সময়ের মধ্যে ঘটনাস্থলে যাওয়ার নির্দেশনা দেন। উক্ত নির্দেশনা পাওয়ার সাথে সাথে কর্মকর্তা ৩ ঘণ্টা বিমান ভ্রমণ করে পরদিন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন।

ইতোমধ্যে মৃত শিক্ষার্থীর পরিবারের পক্ষ থেকে পুলিশের ডিআইজি পদমর্যাদার এক কর্মকর্তার সহায়তায় লিখিতভাবে লাশ ময়নাতদন্ত এবং পরবর্তী তদন্ত না করার জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ইরফানের বাবার স্বাক্ষরে আবেদন করা হয়। এ ছাড়া তার বোন ইমেইলে সরাসরি হাইকমিশনার বরাবর একই অনুরোধ করেন। এর পাশাপাশি দ্রুত সময়ের মধ্যে লাশ দেশে ফেরত পাঠানোর জন্য দেশ-বিদেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিসহ অনেকের ফোন কল আসতে থাকে।

পরিবারের সদস্যদের আবেগ ও লিখিত আবেদন বিবেচনায় নিয়ে কর্তৃপক্ষ ময়নাতদন্ত না করে লাশ বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর অনুমতি দেয় এবং যথারীতি মরদেহ দেশে পাঠানোর জন্য টিকিট করাসহ সমস্ত আনুষঙ্গিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়। মরদেহ দেশে প্রেরণের নিমিত্তে সকল দাপ্তরিক ও বিভিন্ন আনুষঙ্গিক জটিল প্রক্রিয়াদি সম্পন্ন হওয়ার পর পরিবারের পক্ষ থেকে আরেকটি চিঠি দিয়ে মৃত্যুর ঘটনাকে তদন্ত  করে দেখার কথা বলা হয়। কিন্তু ইতোমধ্যে লাশ প্রেরণের সমস্ত আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হওয়ায় লাশ বিমান থেকে ফেরত আনা ও ময়নাতদন্ত করার মতো কোনো সুযোগ ছিল না।

হাইকমিশন জানায়, মৃত শিক্ষার্থী কয়েক মাস ধরে মানসিক ট্রমা/বিষন্নতায় ভুগছিলেন বলে জানা যায়। সে পরিবারকে এর আগেও তার মানসিক অবস্থা সম্পর্কে অবগত করে। এমনকি আত্মহত্যা করবে বলে তার মাকে জানায়। তার এমন অস্বাভাবিক আচরণ সম্পর্কে পরিবার ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অবগত ছিল বলে জানা গেছে। কিন্তু কেউই তাকে এ মানসিক অবস্থা থেকে উদ্ধারের জন্য যথেষ্ট উদ্যোগ গ্রহণ করেনি, যা খুবই দুঃখজনক।


হাইকমিশন কর্তৃক সংগৃহীত ভিডিওতে দেখা যায় যে, মৃত শিক্ষার্থী ঘটনাস্থলে মসজিদের বেলকনি হতে নদীতে লাফ দেয়। সেখানে অনেক মানুষ, এমনকি সারওয়াক রাজ্যের পুলিশও উপস্থিত ছিল। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, কেউ তাকে বাঁচানোর জন্য দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি।


ওই শিক্ষার্থী মারা যাওয়ার পরে এখন পরিবারের পক্ষ থেকে হাইকমিশনকে দোষারোপ করার অপপ্রয়াস চালানো হচ্ছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।


এর ব্যাখ্যায় বিবৃতিতে বলা হয়, হাইকমিশন মারা যাওয়ার পরে বিষয়টি সম্পর্কে অবগত হয়েছে। এ ছাড়া ঘটনা ঘটেছে মালয়েশিয়ার মূলভূমি হতে হাজার কিলোমিটার দূরের অন্য একটি রাজ্যে। উক্ত শিক্ষার্থীর মানসিক অস্থিরতা জানার পরও পরিবারের পক্ষ থেকে হাইকমিশনের সহায়তা চাওয়া হয়নি। এমনকি দীর্ঘদিন ধরে চলমান মানসিকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা জানার পর, এমনকি মৃত্যুর পরও পরিবারের পক্ষ থেকে কারও ঘটনাস্থলে যাওয়ার কোনো ইচ্ছাও পরিলক্ষিত হয়নি। কেবলমাত্র বিভিন্ন মাধ্যম থেকে শোনা কথার ওপর ও ধারণার ভিত্তিতে শিক্ষার্থীর পরিবার ও স্বজনদের পক্ষ থেকে হাইকমিশনকে দোষারোপ করা হচ্ছে, যা অনভিপ্রেত ও দুঃখজনক।


হাইকমিশন জানায়, ওই শিক্ষার্থীর পরিবার লিখিতভাবে ময়নাতদন্ত ও তদন্ত না করার অনুরোধ করায় মালয়েশিয়ার পুলিশ মামলাটি হাসপাতালের মৃত্যুর প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে বন্ধ করে দেয়। তারপরও পরিবারের পক্ষ থেকে পুনরায় তদন্তের কথা বলায় বিষয়টির গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে কুয়ালালামপুরস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশন ঘটনাটি পুনরায় তদন্তের জন্য মালেশিয়া সরকারকে ইতোমধ্যে লিখিতভাবে অনুরোধ জানিয়েছে।


ইরফান সাদিকের অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর ঘটনাটি  কুয়ালালামপুরস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশন সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখছে বলে বিবৃতিতে জানানো হয়।

আরও পড়ুন

×