ঢাকা সোমবার, ০৭ জুলাই ২০২৫

'গুলজার আহমেদ ছিলেন স্বাধীন জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার অন্যতম কুশীলব'

'গুলজার আহমেদ ছিলেন স্বাধীন জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার অন্যতম কুশীলব'

লন্ডন প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১ ডিসেম্বর ২০২০ | ০৫:৫৩ | আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০২০ | ০৬:০৭

মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও রাজনীতিবিদ গুলজার আহমেদ ছিলেন একটি স্বাধীন জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার অন্যতম কারিগর। এজন্য সরকারি সিলমোহরকৃত কোনো কাগুজে সার্টিফিকেট না পেলেও ইতিহাস তার নাম অবশ্যই খুঁজে নেবে নিজের প্রয়োজনে। আর এভাবেই তিনি বেঁচে থাকবেন প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে। 

গুলজার আহমেদের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক ভার্চুয়াল স্মরণসভায় এমন মন্তব্য করেছেন তার এক সময়কার রাজনৈতিক সহযোদ্ধা ও হাতেগড়া কর্মীরা।

বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত এ স্মরণসভায় যুক্ত হয়েছিলেন বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা প্রয়াত এ নেতার রাজনৈতিক অনুসারী ও সুহৃদরা। প্রধান অতিথি হিসেবে গুলজার আহমেদকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন তার রাজনৈতিক সহযোদ্ধা ও ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পংকজ ভট্টাচার্য। গুলজার আহমেদের একসময়ের রাজনৈতিক অনুসারী অ্যাডভোকেট তবারক হোসেইনের সভাপতিত্বে এবং সাবেক ছাত্রনেতা ও সাংবাদিক সৈয়দ আনাস পাশার সঞ্চালনায় স্মরণসভায় সূচনা বক্তব্য রাখেন সৈয়দ রকিব (লন্ডন)। 

এতে আরও সংযুক্ত হয়েছিলেন গণতন্ত্রী পার্টির কেন্দ্রীয় সভাপতি ব্যারিস্টার আরশ আলী (বাংলাদেশ), রফিকুর রহমান লজু (সিলেট), অধ্যাপক সৈয়দ মুজিবুর রহমান (যুক্তরাষ্ট্র), মাহমুদ এ রউফ (লন্ডন), হাবিব রহমান (লন্ডন), আওয়ামী লীগ নেতা দেওয়ান গৌস সুলতান (লন্ডন), সুব্রত বিশ্বাস (নিউইয়র্ক), ঐক্যনাপের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুল মোনায়েম নেহরু (ঢাকা), সাবেক ছাত্র ইউনিয়ন নেত্রী বেগম বিলকিস সর্দার (যুক্তরাষ্ট্র), জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন ঢাকার সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ জগলুল পাশা (ঢাকা), ডা. এনামুল চৌধুরী (যুক্তরাষ্ট্র), আব্দুল ওদুদ চৌধুরী (যুক্তরাষ্ট্র), লেখক ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক তাজুল মোহাম্মদ (কানাডা), ডা. মানস কান্তি দাস (যুক্তরাষ্ট্র), মুক্তিযোদ্ধা ও লন্ডন বাংলাদেশ হাইকমিশনের সাবেক প্রেস মিনিস্টার আবু মুসা হাসান (লন্ডন), কাশেম আলী (যুক্তরাষ্ট্র), যুক্তরাজ্য উদীচীর সভাপতি হারুনুর রশীদ (লন্ডন), যুক্তরাজ্য সিপিবির সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ এনামুল ইসলাম, সাবেক ছাত্রনেতা রুহুল কুদ্দুস বাবুল (সিলেট), রাহেলা বেগম (যুক্তরাষ্ট্র), মুক্তিযোদ্ধা আমান উদ্দিন (লন্ডন), এম এ মান্নান (লন্ডন), প্রয়াত গুলজার আহমেদের দুই মেয়ে ফাহমিদা পপি হক ( যুক্তরাষ্ট্র) ও ফারজানা সুপি (ঢাকা), প্রবীন সাংবাদিক বাহাউদ্দিন আহমদ (যুক্তরাষ্ট্র), দৈনিক প্রথম আলোর উত্তর আমেরিকার ব্যুরো চিফ সাংবাদিক ইব্রাহিম চৌধুরী খোকন, ডা. আবুল খান সামাদ (যুক্তরাষ্ট্র),  সাবেক ছাত্রনেতা ব্যারিস্টার সৈয়দ আবু আকবর ইকবাল (লন্ডন) ও সাবেক ছাত্রনেতা সৈয়দ হাসান। 

গুলজার আহমেদকে ইতিহাসের নায়ক আখ্যায়িত করে পংকজ ভট্টাচার্য বলেন, 'তিনি ছিলেন একটি স্বাধীন জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার অন্যতম কুশীলব। ষাটের দশকে প্রগতিশীল রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের মধ্যে জনপ্রিয় এই রাজনীতিককে আমি কাছ থেকে দেখেছি, কাজ করার সুযোগ হয়েছে তার সাথে। কর্মীবান্ধব এই রাজনীতিক ছিলেন আত্মপ্রচারবিমুখ। সংকটে সমাধান বের করতে তিনি ছিলেন পারদর্শী।' 

গণতন্ত্রী পার্টির কেন্দ্রীয় সভাপতি ব্যারিস্টার আরশ আলী বলেন, 'গুলজার আহমদ শুধু ব্যক্তি নন, তিনি ছিলেন একটি প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠান থেকে তৈরি হয়েছে প্রগতিশীল রাজনীতির অনেক নেতাকর্মী।'

প্রয়াত এই নেতার দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সহকর্মী রফিকুর রহমান লজু বলেন, 'গুলজার আহমদ ছিলেন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের বাম রাজনীতির অন্যতম এক গুরুত্বপূর্ণ নেতা। ষাটের দশকে আইয়ুব খানবিরোধী আন্দোলনের সময় গোপন কমিউনিস্ট পার্টির ছাত্র আন্দোলন বিষয়ক তিন সদস্যবিশিষ্ট কমিটির একজন ছিলেন গুলজার আহমেদ। কমিটির বাকি দুই সদস্য ছিলেন কমরেড মোহাম্মদ ফরহাদ ও আহমেদ জামান। সারা দেশের প্রগতিশীল নেতাকর্মীদের মধ্যে তিনি ছিলেন তুমুল জনপ্রিয়।' 

ঐক্য ন্যাপের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুল মোনায়েম নেহরু নিজেকে গুলজার আহমেদের হাতেগড়া কর্মী পরিচয় দিয়ে বলেন, 'মহান মুক্তিযুদ্ধে আমি ও গুলজার ভাই একসাথেই ছিলাম। ওই সময় মেঘালয়ের বালাটের মইলাম ইয়ুথ ক্যাম্পের ইনচার্য ছিলেন তিনি, যে ক্যাম্পে তরুণ মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো।'

মৃত্যুর পর তাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা না দেওয়ায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে নেহরু বলেন, 'কাগুজে সার্টিফিকেটের অজুহাতে বাঙালির অন্যতম শ্রেষ্ঠ সন্তানকে মৃত্যুর পর রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেওয়া হয়নি, এর চেয়ে লজ্জার আর কী হতে পারে?'

গুলজার আহমেদের মেয়ে ফাহমিদা পপি হক বলেন, 'দেশ ও দেশের মানুষের প্রতি বাবার যেমন ছিলো দরদ ও দায়বদ্ধতা, ঠিক তেমনি পরিবারের প্রতিও ছিলো তার দায়িত্বশীলতা।' দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সহকর্মী ও অনুসারীদের মুখে বাবার গৌরবগাথা শুনে আবেগাপ্লুত পপি বলেন, 'এমন বাবার সন্তান হওয়ার সৌভাগ্য কজনের হয়? আমাদের সেই সৌভাগ্য হয়েছে।'

স্মরণসভার একাধিক বক্তা শেষ সময়ে গুলজার আহমেদের বিএনপিতে যোগদানের বিষয়টিও বিভিন্নভাবে মূল্যায়ন করেন। তাদের কেউ কেউ বলেন, 'স্বাধীনতার পর সংসদীয় রাজনীতিতে পার্টি গুলজার আহমেদকে প্রকৃত মূল্যায়ন করেনি। আর এ কারণেই তার মধ্যে একটি অভিমান কাজ করছিল। তবে তিনি যে আদর্শ বিচ্যুত হননি এর প্রমাণ পরবর্তীতে তার স্বেচ্ছানির্বাসন।'

আরও পড়ুন

×