বসনিয়াকে ৩.৫ মিলিয়ন ইউরো সহায়তা দেবে ইউরোপীয় কমিশন

বসনিয়ার একটি শরণার্থী শিবির
স্লোভেনিয়া সংবাদদাতা
প্রকাশ: ০৪ জানুয়ারি ২০২১ | ২৩:৫৮
উদ্বাস্তু সঙ্কট সমাধানে বসনিয়াকে ৩ দশমিক ৫ মিলিয়ন ইউরোর আর্থিক সহায়তা প্রদানের ঘোষণা দিয়েছে ইউরোপীয় কমিশন।
মূলত বসনিয়াতে আশ্রয় নেওয়া শরণার্থীদের মাঝে খাদ্য ও পানীয় জলসহ প্রয়োজনীয় কম্বল ও শীত বস্ত্র সরবরাহ এবং জরুরি স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে দেশটির সরকারকে এ আর্থিক তহবিল প্রদানের ঘোষণা দিয়েছে ইউরোপীয় কমিশন।
এর আগে, কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে গত ২৩ ডিসেম্বর দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় উনা সানা ক্যান্টনের লিপা শরণার্থী শিবিরটি আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধের ঘোষণা দেয় জাতিসংঘের অভিবাসন বিষয়ক সংস্থা আইওএম। মার্চের দিকে বসনিয়াতে করোনা সংক্রমণের সূত্রপাত ঘটলে জরুরিভিত্তিতে এ ক্যাম্পটি চালু করা হয়। তবে শীত নিবারণের জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা সেখানে ছিলো না বললেই চলে।
ক্রোয়েশিয়ার সীমান্তবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত এ শরণার্থী শিবিরে যাতায়াত ব্যবস্থা ছিল খুবই দুর্গম। কেবলমাত্র একটি কাঁচা রাস্তা ব্যবহার করে সেখানে পৌঁছানো যেত এবং আশেপাশের পরিবেশ তেমনও একটা পরিচ্ছন্ন ছিল না। জেনারেটরের মাধ্যমে লিপার এ শরণার্থী শিবিরে প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ সরবারহ করা হতো, আর পানি সরবরাহের জন্য ছিল কয়েকটি লরি।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি প্রতিনিধি দল গত মাসে লিপার এ শরণার্থী শিবির পরিদর্শনে আসেন এবং তারা ক্যাম্পটিকে সাময়িকভাবে কয়েকদিনের জন্য বিরাতে স্থানান্তরের প্রস্তাবনা দেন। কিন্তু স্থানীয় প্রশাসনের বিরোধিতার কারণে তাদের বিরাতে স্থানান্তর সম্ভব হয়নি।
লিপার এ শরণার্থী শিবিরে প্রায় ১৪০০ এর মতো অভিবাসনপ্রত্যাশী আশ্রয় নিয়েছিলেন, গত সপ্তাহে এদের মধ্যে থেকে প্রায় ৯০০ শরণার্থীকে দেশটির মধ্যাঞ্চলীয় শহর ব্রাডিনার একটি পরিত্যক্ত সেনা ছাউনিতে সাময়িক সময়ের জন্য স্থানান্তরের জন্য সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে সরকারের একাংশের বিরোধিতার কারণে সে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি।
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের জরিপ অনুযায়ী, বসনিয়াতে আশ্রয় নেওয়া শরণার্থীর সংখ্যা ৯ হাজারের কাছাকছি। তবে স্থানীয় বিভিন্ন গণমাধ্যমের দাবি, বাস্তবে দেশটিতে এরও তিনগুণ বেশি শরণার্থী বাস করছে। অনেকে রিফিউজি ক্যাম্পগুলোতে জায়গা না পেয়ে আশপাশের বিভিন্ন খোলা জায়গায় কিংবা পরিত্যক্ত ভবনে আশ্রয় নিয়েছেন। গত কয়েকদিনের তীব্র শীত ও ভারী তুষারপাতের ফলে এদের অনেকের জীবন দুঃসহ হয়ে উঠেছে।
বৃহস্পতিবার বসনিয়ার সরকার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর বিহাচে নতুন করে শরণার্থী শিবির স্থাপনের ঘোষণা দেয় তবে স্থানীয় অধিবাসীরা সরকারের এ সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা জানিয়েছে। তাই নতুন এ শরণার্থী শিবিরের স্থায়ীত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
সামগ্রিকভাবে বসনিয়ার সার্ব অধ্যুষিত অঞ্চলগুলোকে সমন্বিতভাবে রিপাবলিক অব সার্পসকা নামে ডাকা হয়। বানাইয়া লুকা রিপাবলিক অব সার্পসকার বৃহত্তম নগরী। এ অঞ্চলের এক বাসিন্দা মিহায়েলা ভুচকোভাচ সমকালকে বলেন, অর্থনৈতিকভাবে আমরা ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক পিছিয়ে। আমাদের সরকার যেখানে ঠিকভাবে আমাদের দায়িত্ব নিতে পারে না, সেখানে এসব শরণার্থী আমাদের অর্থনীতির ওপর আরও একটি বড় চাপ।
মিহায়েলা আরও বলেন, এসব শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার কারণে আমাদের স্বাভাবিক নিরাপত্তা বাড়তি আতঙ্ক যোগ হয়েছে।তাই আমরা চাই না বানাইয়া লুকা কিংবা বিহাচসহ রিপাবলিক অব সর্পসকায় কোনও শরণার্থীকে আশ্রয় দেওয়া হোক। যদি বসনিয়াকরা কিংবা ক্রোয়েটরা তাদের গ্রহণ করতে চায় এটা তাদের ব্যাপার এবং তাদের নিজস্ব টেরিটোরি রয়েছে যেখানে তারা এসব শরণার্থীদের আশ্রয় দিতে পারে।
- বিষয় :
- বসনিয়া
- শরণার্থী
- ইউরোপীয় কমিশন
- আর্থিক সহায়তা