ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

স্বপ্ন এবং আকাঙ্ক্ষা ছাড়া কেবল নিঃশ্বাস নিয়ে বেঁচে থাকা যায় না

স্বপ্ন এবং আকাঙ্ক্ষা ছাড়া কেবল নিঃশ্বাস নিয়ে বেঁচে থাকা যায় না

আবদেল আলজোরগান

মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ

প্রকাশ: ১৭ আগস্ট ২০২৪ | ২২:৩১

আবদেল আলজোরগান। জর্ডানের পরিবেশবাদী ও পৃথিবীর কাছে আদর্শ এক তরুণ। ২৩ বছর বয়সে নিজের জন্ম শহর আত-তাফিলায় প্রকৃতি ও পরিবেশ এবং নিজের দায়বোধ সম্পর্কে সচেতন করে এক বক্তৃতা দেন। সেই বক্তৃতাসহ তাঁর স্বপ্ন ও পথচলা থেকে অনুপ্রেরণার কথা তুলে এনেছেন মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ

জীবন মানে ‘বেঁচে থাকা’। মানুষ একসঙ্গে বেঁচে থাকবে, একই স্থান ভাগাভাগি করবে–এমনটাই তো হওয়ার কথা। কিন্তু আপনি কি কখনও জীবন-মৃত মানুষের কথা শুনেছেন?
যদি আমাকে প্রশ্ন করেন, ‘তুমি কি নিঃশ্বাস নেওয়ার চেষ্টা কর?’ আমি হয়তো বলব, হ্যাঁ; কিন্তু নিঃশ্বাস নেওয়া মানেই বেঁচে থাকা নয়–যতক্ষণ না আপনি ভিন্ন কিছু করছেন। কিন্তু কিশোর-কিশোরীদের অনুপ্রাণিত করার মতো উদ্যোগের বড় অভাব। অনেক উদাহরণ আছে অনুসরণ করার মতো; কিন্তু সমস্যা হলো, কেমন করে অনুসরণ করবে আর কেন করবে–সে ব্যাপারটি স্পষ্ট থাকে না।
ধৈর্য এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা 
ছোটবেলায় বাবার সঙ্গে খামারে কাজ করতাম। তখনই আমি ধৈর্য ধরতে এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করতে শিখেছি। একইসঙ্গে আমি ভাবতাম, আজকে আমরা যে ফসল বুনেছি, সেটিতে কীভাবে সেচ দেওয়া যায়। বাল্যকালে এই ভাবনা সবসময় কাজ করত মাথায়। ভাবতাম, পানি চক্র কীভাবে কাজ করে? আমরা কি পানি বাঁচাতে পারি? এটাকে কি আরও ভালোভাবে ব্যবহার করা যায়? তখন আমরা কেমন করে টাকা বাঁচাতাম? আমরা পানি কিনতে পারতাম না। বছরের ওই সময়টাতে উৎপাদন ততটা ভালো ছিল না যে, সেটা দিয়ে যথাযথভাবে পরিবার চালানো সম্ভব। আমি তখন ক্লাস সিক্সে পড়ি। এক রাতে হঠাৎ ভেবে পেলাম– কী করে বাঁচানো সম্ভব! পদ্ধতিটা আমার কাছে খুব সোজা মনে হলো। তাছাড়া যতটুকু আমার দরকার, ঠিক ততটুকুই ভাবনা ছিল আমার। পর্যাপ্ত পরিমাণ টাকা ও জ্ঞান না থাকায় বুদ্ধিটাকে তখন কাজে লাগাতে পারিনি। 
কোনো কিছু যদি আমরা মনেপ্রাণে চাই...
আমার ভাই মোহাম্মদের বয়স তখন ২১ বছর। আমি বিশ্বাস করেছি, কোনো কিছু যদি আমরা মনেপ্রাণে চাই, তাহলে সেটা অবশ্যই অর্জন করতে পারব। আমরা জর্ডানের স্থানীয় সায়েন্স ফেয়ারে কৃতকার্য হলাম। তারপর সুযোগ পেলাম ইনটেল ইন্টারন্যাশনাল সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ফেয়ারে অংশগ্রহণ করার। জীবনের প্রথমবার আমরা আমেরিকায় গেলাম। এটা ছিল একটা স্বপ্ন সত্যি হওয়া যেন। টিভিতে দেখা অনেক কিছুর বাস্তব পরিণতি দেখে আমরা দুই ভাই যারপরনাই শিহরিত হয়ে উঠি। প্রতিযোগিতায় আমরা চতুর্থ স্থান অর্জন করি। প্রথম কয়েক ঘণ্টা ব্যাপারটা বিশ্বাসই হচ্ছিল না আমার! মনে আছে, পথটা অনেক লম্বা ছিল–আমাদের ফান্ডিংয়ের ব্যবস্থা করতে হয়েছে, টিভি দেখে ইংরেজি শিখতে হয়েছে, প্রয়োজনের তুলনায় কম ঘুমাতে হয়েছে; কিন্তু আমরা যেটার স্বপ্ন দেখেছি, শেষ পর্যন্ত সেটা অর্জন করে ছেড়েছি। 
আত্মবিশ্বাস আরও সামনে এগিয়ে নিয়ে গেল
জর্ডানে ফিরে আসার পর নিজেদের লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য বিভিন্ন পথ অবলম্বন করলাম আমরা। আমি আমাদের সমাজের কিশোর-কিশোরীদের সচেতন করতে চাইলাম। সমাজকে সাহায্য করার পর যে শক্তি আমি অনুভব করলাম নিজের মধ্যে– সেটিকে ভাষায় ব্যক্ত করা সম্ভব নয়। আত্মবিশ্বাস আমাকে আরও সামনে এগিয়ে নিয়ে গেল। আমি আর কয়টা মানুষের মতোই পৃথিবীটাকে বসবাসের জন্য আরও ভালো করতে চাই। এ ক্ষেত্রে শুরু করলাম নিজেকে দিয়ে। আমি সবসময় বিশ্বাস করি, ‘চিন্তা কর বৈশ্বিক, শুরু কর স্থানীয়ভাবে, আর কাজ কর এখনই।’
ভাবনাকে আরও বিস্তৃত করার সুযোগ
টিম মেম্বার হিসেবে আমি সবসময় আগে সবার স্বার্থ দেখতাম; পরে আমার। আমি ‘লিডারস অব টুমরো’র সঙ্গে কাজ করেছি। জর্ডানের সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছি। ইয়েল ইউনিভার্সিটিতে রিসার্চার হিসেবে কাজ করেছি। আরও যোগাযোগ বাড়িয়েছি; তারপর আন্তর্জাতিক সুযোগ খুঁজেছি আমার ভাবনাকে আরও বিস্তৃত করার জন্য। আমি জুরিখে ‘ওয়ান ইয়ং ওয়ার্ল্ড ফ্যামিলি’তে যোগ দিয়েছিলাম। অ্যাম্বাসাডরদের কিছু প্রজেক্ট দেখার একটা সুযোগ হয়েছিল তখন। তা দেখে সিদ্ধান্ত নিলাম, বৈশ্বিক উষ্ণতা নিয়ে একটা প্রচারণামূলক কাজ আমাদের দেশেও করা উচিত। ফলে বন্ধু খালিদকে নিয়ে একটি টিম গঠন করলাম। তাদের বিশ্বাস করালাম, যা আমি বিশ্বাস করি। আমি যা করেছি, সব করেছি এমন একটা সমাজের তাগিদ থেকে–যেখানে সবার জীবন ভালোবাসা, শ্রদ্ধা আর সুখে ভরা থাকবে। কেউ আমাকে স্বপ্নবিলাসী বলতেই পারে; কিন্তু একটা মানুষ স্বপ্ন ছাড়া, আকাঙ্ক্ষা ছাড়া শুধুই নিঃশ্বাস নিয়ে বেঁচে থাকবে, তা হয় না। জীবন হলো অক্সিজেন গ্রহণ ও কার্বন ডাইঅক্সাইড ছাড়ার চেয়েও বেশি কিছু। 
শরীর এবং আত্মার মিশ্রণ
মানুষ হচ্ছে শরীর এবং আত্মার মিশ্রণ। আমরা শুধু একটির দিকে ধ্যান দিয়ে অন্যটিকে অবহেলা করতে পারি না। আমাদের কেউই এমন কোনো গাড়ি ব্যবহার করে না, যেটার শুধু একপাশে দুটো চাকা। মানুষের সেবা করা এবং একে অপরকে সাহায্য করা, সত্যের সন্ধান করা আর দেখা স্বপ্নকে অর্জন করা, একটি সবুজ পৃথিবীর স্বপ্নে বাঁচা–এই তো জীবন। এ পৃথিবী যেন আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য বাসযোগ্য হয়। সে দায়িত্ব তো আমাদেরই পালন করে যেতে হবে। 
 

আরও পড়ুন

×