ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

অসহায়দের আশার আলো

অসহায়দের আশার আলো

এভাবেই স্পিচ অ্যান্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপি দিয়ে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ান রাকিব হোসেন

রুবেল মিয়া নাহিদ

প্রকাশ: ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪ | ২৩:১৩

রাকিব হোসেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা অনুষদের অন্তর্ভুক্ত বাংলাদেশ হেলথ প্রফেশনস ইনস্টিটিউটে (বিএইচপিআই) স্পিচ অ্যান্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপিতে ব্যাচেলর অব সায়েন্স কোর্সে চতুর্থ বর্ষে পড়াশোনা করছেন। বিএইচপিআই পক্ষাঘাতগ্রস্তদের পুনর্বাসন কেন্দ্র সিআরপির একটি একাডেমিক প্রতিষ্ঠান। এ কোর্সে ভর্তি হতে হলে একজন শিক্ষার্থীকে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জীববিজ্ঞানসহ মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক মিলিয়ে ন্যূনতম জিপিএ ৮ পেতে হয় এবং ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়।
রাকিব হোসেন বলেন, ‘স্পিচ অ্যান্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপিস্ট হওয়ার যাত্রা যথেষ্ট কঠিন। চার বছরের একাডেমিক পড়াশোনা শেষ করে এক বছর ইন্টার্নশিপ করতে হয় এবং চারটি কম্পিটেন্সি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়। এর পরই একজন ব্যক্তি স্পিচ অ্যান্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপিস্ট হিসেবে প্র্যাকটিস করার যোগ্যতা অর্জন করেন। আমি ও আমার সহপাঠীরা সোসাইটি অব স্পিচ অ্যান্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপিস্টসের শিক্ষার্থী সদস্য; যারা নৈতিকতার সঙ্গে মানুষকে সেবা দেওয়া, পেশার মৌলিকত্ব রক্ষা এবং ম্যালপ্র্যাকটিস রোধের ব্রত নিয়েছি। সবাই এ পেশা ভালোবেসে একই রকম যাত্রার ভেতর দিয়ে যাব।’
স্পিচ অ্যান্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপি একটি গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা পেশা, যা বাংলাদেশে ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। এটি ছোট থেকে বড় সবার কথা বলা, শ্রবণ, ভাষা ব্যবহার এবং গিলতে পারার সমস্যা নিরাময় করে। রাকিবের পড়াশোনায় অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন স্পিচ ও ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপি, অডিওলজি এবং অন্যান্য চিকিৎসাবিষয়ক কোর্স। পাশাপাশি প্রতিবছর দুই থেকে তিন মাসের প্লেসমেন্ট। এমন একটি প্লেসমেন্টের অংশ হিসেবে বর্তমানে রাকিব ও তাঁর সহপাঠীরা মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় এক মাসের জন্য প্রয়োগিক জ্ঞান অর্জন এবং সেবা দেওয়ার জন্য অবস্থান করছেন। যেখানে তারা গ্রামের কমিউনিটিতে এই পেশার সচেতনতা বাড়াতে এবং স্থানীয় ম্যাটেরিয়াল ব্যবহার করে পুনর্বাসন নিশ্চিতে কাজ করছেন।
চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার কার্যক্রম অনুসারে একজন শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে তিনি এ অঞ্চলের মানুষকে চিকিৎসা ও পুনর্বাসন সেবা প্রদান করছেন। রাকিব তাদের সহজ-সরল ভাষায় বুঝিয়ে দিচ্ছেন যে স্পিচ অ্যান্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপি কী এবং এটি কেন প্রয়োজন? স্পিচ অ্যান্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপিস্টরা সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল, বিশেষায়িত স্কুল এবং বিভিন্ন এনজিওতে কাজ 
করতে পারেন। পাশাপাশি স্বাধীনভাবে প্র্যাকটিস করার মাধ্যমেও তারা রোগীদের 
সেবা দিতে সক্ষম।
রাকিব হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশে এই পেশার চাহিদা বেশি হলেও সংখ্যায় এখনও তারা সীমিত। এতে অপচিকিৎসার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে, যা এড়াতে রোগীদের অবশ্যই নিশ্চিত হতে হবে যে তাদের চিকিৎসক স্বীকৃত ব্যাচেলর অব সায়েন্স ইন স্পিচ অ্যান্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপি কোর্স সম্পন্ন করেছেন। বাংলাদেশ রিহ্যাবিলিটেশন কাউন্সিল আইন, ২০১৮ অনুযায়ী লাইসেন্সিং প্রক্রিয়া দ্রুত শুরু হওয়া উচিত, যাতে রোগীরা নিশ্চিতভাবে সঠিক সেবা পান। সচেতনতার অভাব সত্ত্বেও স্পিচ অ্যান্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপির গুরুত্ব ও চাহিদা ক্রমে বাড়ছে। 
কথা বলার, শোনার বা ভাষা বুঝতে সমস্যার সম্মুখীন অনেক মানুষের জন্য স্পিচ থেরাপিস্টরা এক আশার আলো হয়ে উঠছেন। ভবিষ্যতেও এই সেবা দিয়ে যেতে চাই আমি। সেই সঙ্গে তরুণদের বলব, মানবিক দিক বিবেচনা করে আপনারাও এ পেশাকে আপন করে নিতে পারেন। এতে মনে প্রশান্তি আসবে।’u

আরও পড়ুন

×