‘হতাশা তাড়িয়ে নতুন গতির সঞ্চার’

জ্যাক মা
জ্যাক মা
প্রকাশ: ১৬ মার্চ ২০২৫ | ০০:৫৯
জ্যাক মা। চীনা ধনকুবের। তিনি তাঁর প্রতিষ্ঠিত বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান আলিবাবা থেকে অবসরে যান চীনের শিক্ষক দিবসে। ইংরেজি শিক্ষক হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করা জ্যাক নিজেই এই দিনটিকে বিদায়ের জন্য বেছে নিয়েছিলেন। বিদায়বেলা ৬০ হাজার কর্মীর সামনে দেওয়া জ্যাক মার বক্তৃতা থেকে অনুপ্রেরণার কথা তুলে এনেছেন ইমাম হোসেন মানিক
আজকের এই দিন, এই মঞ্চ আমার চেয়ে আলিবাবার সাফল্য এবং প্রতিষ্ঠানটির নিয়ম-শৃঙ্খলার কথা বেশি মনে করিয়ে দিচ্ছে। বদলাচ্ছে পৃথিবী। এই বদলের প্রভাবও পড়ছে আমাদের ওপর। ফলে সামনে আসছে নতুন চ্যালেঞ্জ। প্রকৃতিও যাচ্ছে খারাপের দিকে। বাড়ছে আমাদের দুশ্চিন্তা। দরজায় দাঁড়িয়ে যেন টোকা দিচ্ছে নতুন দিন। নতুন হাওয়া। নতুন দিনের চ্যালেঞ্জ হচ্ছে টেকসই উন্নয়ন ও তার ব্যাপকতা এবং মানবিকতা। এই তিনটি লক্ষ্য যদি প্রযুক্তির হাত ধরে আমরা অর্জন করতে না পারি, তবে পৃথিবীর আলো-বাতাস আরও ভয়াবহ হয়ে উঠবে আমাদের জন্য।
উদারতাই বড় শক্তি
এই সময়ে দাঁড়িয়ে আপনি নিজেকে বড় প্রতিষ্ঠান বা সেরা প্রতিষ্ঠানে দেখতে না পেলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই। যে প্রতিষ্ঠানেই থাকুন না কেন, আপনার উদারতা এখন বড় শক্তি। এই শক্তি বলে আপনি ছোট প্রতিষ্ঠানে থেকেও দুনিয়া জয় করতে পারবেন। কেউ কেউ মনে করে বড় প্রতিষ্ঠানে তেমন ভুল হয় না। এটি ভুল ধারণা ছাড়া কিছুই নয়। আশপাশের অন্য দশটি প্রতিষ্ঠানের মতোই আলিবাবার ভুলের স্তূপ অনেক বড়। তবে আমরা এই ভুল থেকে ফুল ফুটিয়েছি। সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার চেষ্টা করেছি। এই ক্ষেত্রে সব সিদ্ধান্ত অর্থকেন্দ্রিক ছিল না। প্রতিষ্ঠান এবং মানবিকতাও ছিল আমাদের সিদ্ধান্তের শরীরজুড়ে।
প্রযুক্তি শুধুই ভালোর জন্য
ভালো এবং খারাপ সব কিছুতেই থাকে। আমি বিশ্বাস করি প্রযুক্তি শুধু ভালোর জন্য। এটি মানুষের হতাশা তাড়িয়ে নতুন গতির সঞ্চার করে। স্বপ্ন দেখায় নতুন করে। ভাবতে শেখায় তুমুল গতিতে। আলিবাবার ২০ বছরের যে জার্নি তাতে চোখ রাখলে বলতেই পারি যে, আগামীর দিনগুলোতে এ প্রতিষ্ঠান প্রযুক্তিতে ভর করে তুমুল গতিতে ছুটে চলবে। গতির এই ট্র্যাকে আলিবাবা তুলে আনবে বিশ্বের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠান ও তাদের কর্মীদের।
কেন করি এত অহংকার!
কত জায়গায় ঘুরেছি ব্যবসার কাজে। একবার গ্রিনিচ মানমন্দির ঘোরার সুযোগ পেয়েছিলাম। সেখানে চোখ বড় করে ছায়াপথ ধরে ঘুরছি তো ঘুরছি! একসময় গোটা ছায়াপথ শেষও করে ফেলি। খুঁজে পাইনি সূর্য এবং প্রিয় পৃথিবীটাকে। তখন নিজেকে নিয়ে ভাবনায় পড়ে যাই। এত বড় ছায়াপথে পৃথিবীর অস্তিত্ব খুঁজে পেলাম না অথচ আমি এই পৃথিবীর কোনো এক কোণে পড়ে থাকা কোনো নচ্ছাড়! তবু এই পৃথিবীতে অনেক কিছুই আছে উপভোগ্য। অনেক কিছুই এখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে, যা নিয়ে কাজ করা যায় অনায়াসে। আমি আগ্রহ নিয়ে এসবে পড়ে থাকতে চাই।
মানবিকতা জাগিয়ে তোলার কাজে...
প্রত্যেকের একটা নিজস্ব জগৎ থাকে। সেই জগৎজুড়ে ছড়িয়ে থাকে রাজ্যের স্বপ্ন। আলিবাবা আমার তেমনি অসংখ্য স্বপ্নের একটি।
মানুষ সেই স্বপ্নের পেছনে ছোটে। আমিও ছুটব। চেয়ারম্যান পদ ছেড়ে দেওয়া মানে হাত-পা গুটিয়ে অবসরে চলে যাওয়া নয়। নতুন করে ব্যস্ততায় ডুব দেওয়া। শিক্ষা, পরিবেশ রক্ষা এবং মানুষের মধ্যে মানবিকতা জাগিয়ে তোলার কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখতে চাই। এ কাজগুলোর অপেক্ষাই যেন করেছি এতদিন ধরে।
প্রিয় সবুজের কাছে
অপেক্ষার প্রহর গোনা হয়তো শেষ। কাল থেকে জীবন বইয়ের নতুন পৃষ্ঠা উল্টাব। চলে যাব প্রিয় সবুজের কাছে। সবুজই আমার প্রাণ! এই প্রকৃতি আর মানবিকতার কাছ থেকে আমি অবসর চাই না। তাদের জন্য মাঠে নামব কাল থেকে। তাদের সঙ্গে পথচলার নতুন অধ্যায় শুরু করব জীবনের। সেই জীবন পাহাড় ধরে কখনও আকাশপানে ছুটবে, কখনও ঝরনা থেকে গড়িয়ে নদী-সাগর হয়ে বয়ে চলবে অনন্ত পথের দিকে। এই পথে দেখা হবে আমাদের!
- বিষয় :
- জ্যাক মা