চুল থাকুক খুশকিমুক্ত

.
রোজী আরেফিন
প্রকাশ: ৩০ জুলাই ২০২৪ | ২১:৫৯
বর্ষাকালে এমনিতেই মাথার চুল বেশি ঝরে। যাদের মাথার তালুতে খুশকির সমস্যা আছে, তারা জানেন এ সময়টা চুলের জন্য কতটা দুর্বিষহ।
রূপ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্ষাকালে অতিরিক্ত আর্দ্রতার জন্য মাথাসহ শরীরের সব সেবাসিয়াস গ্রন্থিগুলো অতিরিক্ত সক্রিয় হয়ে ওঠে। যার ফলে মৃত কোষের উৎপাদন অনেক বেড়ে মাথার ত্বকে খুশকির পরিমাণ অন্যান্য সময়ের তুলনায় অনেক বেশি হয়ে যায়। এ ছাড়া বৃষ্টির পানি মাথায় পড়লে চুলের ফাঁকে জমে থাকা ইস্ট এবং অন্যান্য ব্যাকটেরিয়া আরও বেশি কার্যকর হয়ে ওঠে। এর ফলে মাথার ত্বকে অনেক চুলকানি এবং খুশকি হয়।
বর্ষায় মাথার ত্বকে জমে থাকা এসব খুশকি দূর করার কিছু ঘরোয়া উপায় জেনে নিন।
মেথি বাটা ব্যবহার করুন: চুলের যত্নে মেথি বাটা বা মেথির পেস্ট সেই প্রাচীনকাল থেকেই সুপ্রচলিত এক উপাদান। মেথির মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে নিকোটিনিক এসিড; যা বর্ষায় চুলের ঘনত্ব বাড়াতে সাহায্য করে। এর পাশাপাশি চুলের ফাঁকে এবং মাথার তালুতে জমে থাকা খুশকির বিরুদ্ধেও সমানভাবে কার্যকরী ভূমিকা রাখে।
ব্যবহারের নিয়ম: দু’চামচ মেথি সারারাত পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। পরদিন এই ভেজা মেথির পেস্ট করুন এবং মাথার তালু আর চুলে ভালো করে লাগিয়ে নিন। চুলের ঘনত্ব এবং দৈর্ঘ্য অনুযায়ী মেথির পরিমাণ বাড়াতে বা কমাতে পারেন। মেথি লাগানোর ৩০ মিনিট পর চুলে ভালো করে হালকা কোনো শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে নিন। সপ্তাহে এক বা দু’বার এভাবে মেথির পেস্ট মাথায় লাগান খুশকির ভালো সমাধান পাবেন।
লেবুর রস ব্যবহার করুন: লেবুর রস মাথার খুশকি নিরাময়ের আরেকটি অত্যন্ত কার্যকর উপায়। লেবুর রসে রয়েছে সাইট্রিক এসিড, যা মাথার তালুর পিএইচ মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। এ ছাড়া লেবুর রস ম্যালাসেজিয়া নামক ফাঙ্গাসের কারণে উৎপন্ন হওয়া মাথার খুশকি দূর করে এবং খুশকির বিরুদ্ধে মাথার ত্বকের স্বাস্থ্যের ইমিউনিটিও বৃদ্ধি করে।
ব্যবহারের নিয়ম: এক কাপ লেবুর রস পানি মিশিয়ে এক মগ করুন। এবার গোসল শেষ হওয়ার পর এ লেবু মেশানো পানি চুলে ঢেলে দিন।
খুশকি প্রতিরোধী শ্যাম্পু ব্যবহার করুন: বাজারে অনেক ভালো ভালো ব্র্যান্ডের খুশকি প্রতিরোধী শ্যাম্পু পাওয়া যায়। এসব শ্যাম্পুর মধ্যে কিছু মেডিসিনাল, কিছু আবার নন-মেডিসিনাল। মেডিসিনাল শ্যাম্পু ব্যবহার করতে চাইলে আপনাকে অবশ্যই ডার্মাটোলজিস্টের সঙ্গে আলোচনা করে নিতে হবে। কিন্তু যেগুলো নন-মেডিসিনাল শ্যাম্পু কিন্তু খুশকি প্রতিরোধী বলে দাবি করে নির্বিঘ্নে ব্যবহার করতে পারেন।
আপেল সিডার ভিনেগার ব্যবহার করুন: গোসলের ঘণ্টাখানেক আগে চুলে পরিমাণ মতো আপেল সিডার ভিনেগার মাখিয়ে নিন। যদি আপেল সিডার ভিনেগারের গন্ধ বেশি কড়া মনে হয়, সামান্য পানি মিশিয়ে এটাকে হালকা করে নিতে পারেন। আধা ঘণ্টা পর চুল ভালো করে ধুয়ে নিন। আপেল সিডার ভিনেগার ফাঙ্গাল ইনফেকশন (খুশকি) দূর করতে সাহায্য করে।
ভালো ফ্যাট বা চর্বিযুক্ত খাবার খান: ভালো ফ্যাটযুক্ত খাবার যেমন বাদাম এবং এভোকেডো, ওমেগা থ্রিযুক্ত খাবার যেমন সামুদ্রিক মাছ এবং অলিভ অয়েল, ভিটামিন-ই যুক্ত খাবার যেমন ফ্রেশ নারকেল এবং ভিটামিন-ই সাপ্লিমেন্ট ইত্যাদি নিয়মিত খেলে শুধু যে মাথার চুলের খুশকির বিরুদ্ধে মাথার ত্বকের ইমিউনিটি বাড়ে তা নয়, বরং চুলের স্বাভাবিক বৃদ্ধিকে এসব খাবার অনেক ত্বরান্বিত করে। এ ছাড়া প্রোবায়োটিক যেমন টক দই নিয়মিত খেলেও শরীর এবং মাথার ত্বক ভালো থাকে।
বর্ষায় চুলের খুশকির সমস্যা দূর করতে কিছু টিপস মেনে চলুন। যেমন–
মাথার তালু এবং চুল সবসময় পরিষ্কার রাখুন। ভেজা চুল কখনও বেঁধে রাখবেন না অথবা ভেজা চুল নিয়ে কখনও ঘুমাতে যাবেন না।
নিয়মিত পেট পরিষ্কার রাখুন, বেশি করে পানি এবং সবুজ শাকসবজি খাওয়ার অভ্যাস করুন।
শরীরের ক্যালসিয়াম, ভিটামিন-ডি এবং ভিটামিন-ই’র অনুপাত ঠিক রাখুন।
একই চিরুনি এবং টাওয়াল পরিবারের সবাই ব্যবহার করবেন না।
খুশকির পরিমাণ বেশি হয়ে গেলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের
পরামর্শ গ্রহণ করুন।
- বিষয় :
- চুল