ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫

ট্রমা কাটিয়ে উঠুন

ট্রমা কাটিয়ে উঠুন

ফাইল ছবি

নাঈমা ইসলাম অন্তরা

প্রকাশ: ২১ আগস্ট ২০২৪ | ০১:২৬

সামাজিক, রাজনৈতিক, পারিবারিক কিংবা ব্যক্তিগত নানা কারণে একজন মানুষ ট্রমার মধ্য দিয়ে যায়। ট্রমার অভিজ্ঞতা একজন মানুষের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে গভীর মানসিক ক্ষত তৈরি করে। ট্রমার কারণে দীর্ঘমেয়াদি মানসিক চাপ হতে পারে। অনেকে ব্যক্তিগত বিভিন্ন ঝামেলার মধ্য দিয়ে গেলেও বুঝে উঠতে পারেন না তিনি ট্রমায় আছেন। এজন্য ট্রমা কী এবং এর লক্ষণগুলো আগে থেকে জানতে হবে। 
ট্রমা বা মানসিক আঘাত হলো একটি মানসিক প্রতিক্রিয়া, যা কোনো কষ্টদায়ক ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় ঘটে। এ ধরনের অবস্থা একজন ব্যক্তি মোকাবিলা করার মতো মানসিক অবস্থায় থাকেন না। 
ট্রমা বা মানসিক আঘাত মোকাবিলার কৌশল
প্রফেশনাল সাহায্য গ্রহণ: আঘাত মোকাবিলার সবচেয়ে কার্যকর উপায়ের মধ্যে একটি হলো, প্রফেশনাল সহায়তা নেওয়া। কগনিটিভ বিহেভিয়ারাল থেরাপি (সিবিটি) এবং আই মুভমেন্ট ডিজেনসিটাইজেশন অ্যান্ড রিপ্রসেসিং হলো প্রমাণভিত্তিক চিকিৎসা, যা আঘাত মোকাবিলায় উল্লেখযোগ্য সাফল্য দেখিয়েছে। আই মুভমেন্ট ডিজেনসিটাইজেশন অ্যান্ড রিপ্রসেসিংয়ের উন্নয়নকারী ড. ফ্রান্সিন শাপিরোর মতে, এই থেরাপি আঘাতজনিত স্মৃতিগুলোকে পুনরায় প্রক্রিয়াকরণে সহায়তা করে, তাদের মানসিক প্রভাব কমায়।
সাপোর্ট নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা: মানসিক বিপর্যস্ততা কাটাতে আশপাশের মানুষ, বিশেষ করে বন্ধু, পরিবার ও কাছের মানুষদের সাহায্য নিন। তারা আপনাকে আপনার মতো করে সান্ত্বনা দিতে পারবেন। কেননা, তাদের সঙ্গে আপনার বোঝাপড়া ভালো। যারা একই ধরনের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছেন, তাদের সঙ্গে অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেওয়া যেতে পারে। 
মানসিক চাপ কমাবে ব্যায়াম: মনের দুরবস্থা কাটাতে মেডিটেশন, শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম, যোগব্যায়াম করার বিকল্প নেই। মানসিক আঘাত কাটিয়ে উঠতে, চাপ সামলাতে এ ধরনের চর্চা বাড়ান। মেডিটেশন, ব্যায়াম উদ্বেগ মোকাবিলা করতে সহায়তা করতে পারে। 
রুটিন তৈরি করুন: মানসিক আঘাত দৈনন্দিন জীবনের নানাবিধ কাজের রুটিনকে ব্যাহত করে। তাই যখন আপনি মনে করবেন এই দুরবস্থা থেকে বের হওয়া প্রয়োজন, তখন নির্দিষ্ট রুটিন তৈরি করুন। দিনের কোন বেলায় কোন কাজ করবেন, কখন পরিবারকে সময় দেবেন, কখন ঘুমাবেন, কতক্ষণ ঘুমাবেন, কোন সময়টুকু নিজের জন্য রাখবেন, তা ঠিক করুন। খাবারের মেনুতে কোন কোন পুষ্টিকর খাবার রাখবেন, তাও ঠিক করুন। এর পর সে রুটিন মেনে চলুন। 
সৃজনশীল কাজের সঙ্গে জড়িত থাকা: মানসিকভাবে নিজেকে ভালো রাখতে, আঘাত সামলে নিতে সৃজনশীল কাজ করার বিকল্প নেই। গান, ছবি আঁকা, লেখালেখি, নাচ ইত্যাদি শখের যে কোনো একটি করতে পারেন। এ ধরনের সৃজনশীল কার্যকলাপের মাধ্যমে আবেগ প্রকাশ করা থেরাপিউটিক অ্যাপ্রোচ হতে পারে। নিজের মনের অনুভূতিগুলো ডায়েরিতে লিখে ফেললে মনের যাতনা অনেকটাই কমে যাবে। 
নেতিবাচকতা এড়িয়ে চলুন: মানসিকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হলে অনেকেই নেতিবাচকভাবে নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করেন। যেমন–মাদকাসক্ত হওয়া, নিজের ক্ষতি করা, যেমন হাত-পা কাটা, নিজেকে কষ্ট দেওয়া ইত্যাদি। এ আচরণগুলো ট্রমা বা মানসিক আঘাতের উপসর্গকে বাড়িয়ে দিতে পারে এবং সুস্থতার প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করতে পারে। নেতিবাচক কথা ও কার্যকলাপের পরিবর্তে স্বাস্থ্যকর ও ইতিবাচক কার্যকলাপে মনোনিবেশ করতে হবে।  
স্ব-সহানুভূতি চর্চা: অনেকেই নিজের প্রতি দয়ালু ও সহানুভূতিশীল হন না। মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে হলে নিজের প্রতি সহানুভূতিশীল হন। আঘাত থেকে সেরে ওঠা সহজ নয়। স্ব-সহানুভূতি মানে হলো ট্রমাকে স্বীকার করা এবং সুস্থ হওয়ার প্রচেষ্টাগুলোকে স্বীকৃতি দেওয়া।
দীর্ঘমেয়াদি সুস্থতার কৌশল: ট্রমা বা মানসিক আঘাত কাটিয়ে ওঠা একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া বা চলমান প্রচেষ্টা। এ জন্য স্ব-যত্নের প্রয়োজন। প্রফেশনাল রিসোর্স ব্যবহার, সহায়ক সম্পর্ক তৈরি করে ধাপে ধাপে এগিয়ে যেতে হবে। কারও কাছে সাহায্য চাইতে এবং বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী নিরাময় প্রক্রিয়া শুরু করতে কখনোই দেরি করা যাবে না। v
লেখক: সাইকোলজিস্ট ও ট্রেইনার

আরও পড়ুন

×