ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

ভেষজ চা

ভেষজ চা

.

ইতি খন্দকার

প্রকাশ: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ২৩:০৪

অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন, বিভিন্ন রোগ কিংবা জিনগত কারণে অধিকাংশ মানুষের ওজন অতিরিক্ত বেড়ে যাচ্ছে। স্থূলকায় মানুষের সংখ্যাও দিন দিন বাড়ছে। ওজন কমাতে আমরা নানা ধরনের পদ্ধতি, ব্যায়াম এবং বিভিন্ন ধরনের ডায়েট করে থাকি। মূলত সঠিক লাইফস্টাইল, পরিমিত ব্যায়াম এবং একটি ডায়েট প্ল্যান আমাদের ওজন কমাতে সাহায্য করে। তার মধ্যে ডায়েটের একটি অন্যতম উল্লেখযোগ্য উপাদান হচ্ছে ভেষজ চা। সুষম খাবারের পাশাপাশি আমাদের শরীরের অতিরিক্ত চর্বি কমাতে ভেষজ চা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ওজন কমাতে ভেষজ চায়ের ভূমিকা
lভেষজ চা প্রথমত আমাদের শরীরের মেটাবলিজম বাড়িয়ে দেয়; যার ফলে অতিরিক্ত ক্যালরি বার্ন করতে সাহায্য করে।
lভেষজ চা গ্রহণের ফলে ক্ষুধা কমে যায়।
lএই চায়ে উচ্চতর বিপাকীয় হার বৈশিষ্ট্য রয়েছে; যার ফলে আমাদের খাবার সহজেই হজম হয়ে যায়, অর্থাৎ খাবারের হজমশক্তি বহু গুণে বাড়িয়ে দেয়।
l ভেষজ চা শরীরকে প্রতিনিয়ত বিষমুক্ত ও হাইড্রেট রাখে।
lভেষজ চায়ে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি ওজন কমাতেও সাহায্য করে। যেমন সবুজ পাতার চায়ে ক্যাটেচিন রয়েছে, যা ওজন কমায়।
lঅতিরিক্ত স্ট্রেস ওজন বৃদ্ধি হওয়ার অন্যতম কারণ। এই ভেষজ চা আমাদের অতিরিক্ত স্ট্রেসকে দমন করে থাকে।
lরক্তে অতিরিক্ত শর্করা শরীরের অতিরিক্ত ওজন বাড়াতে ভূমিকা রাখে। ভেষজ চা রক্তের শর্করা কমিয়ে তা নিয়ন্ত্রণে রাখে।
যেসব ভেষজ চা ওজন কমায়
দারচিনি চা: অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ফাইবার সমৃদ্ধ এই চা শরীরের মেটাবলিজম বাড়িয়ে দেয়, পাশাপাশি ওজন কমাতে সাহায্য করে। এক চা চামচ দারচিনির গুঁড়ার সঙ্গে দুই টেবিল চামচ লেবুর রস ও আধা চা চামচ মধু মিশিয়ে কুসুম গরম পানির সঙ্গে খেলে শরীরের মেদ কমবে।
মসলা চা: রান্নায় ব্যবহৃত জিরা, ধনিয়া, মৌরি, মেথি ও গোলমরিচ পরিমাণ মতো নিয়ে গুঁড়া করে নিতে হবে। এক টেবিল চামচ গুঁড়া এক গ্লাস পানিতে জ্বাল দিয়ে ছেঁকে কুসুম গরম অবস্থায় খেতে হবে। এটি শরীরের বিপাকীয় অবস্থা ভালো রাখে। পাশাপাশি শরীরের বাড়তি মেদ ঝরাতে ভূমিকা রাখে।
তুলসী চা: এই চায়ে উচ্চতর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে; যা মেদ কমাতে এবং রোগ প্রতিরোধ বাড়াতে সাহায্য করে। তুলসী পাতা রক্তের শর্করা কমাতেও সাহায্য করে থাকে। তুলসী পাতা শুকিয়ে গুঁড়া করেও খাওয়া যায় কিংবা তাজা পাতা চা করেও খাওয়া যায়।
পুদিনা চা: শরীরের অতিরিক্ত ক্লান্তি, হজম শক্তি বৃদ্ধি ও ক্ষুধা কমাতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। পুদিনা পাতা বেটে গরম পানিতে মিশিয়ে চা করে খাওয়া যায়, কিংবা আস্ত তাজা পাতা গরম পানিতে দিয়ে ৫ মিনিট ঢেকে রেখে সেই চাও খাওয়া যায়।
ওলংচা : এটি একটি চায়নিজ ভেষজ চা। এই চা শরীরের অতিরিক্ত কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে এবং মেদ কমাতেও সাহায্য করে থাকে।
হলুদ ও আদা চা: এই চা মেদ কমানোর পাশাপাশি রক্তের শর্করা কমিয়ে দেয় এবং হজম শক্তি বৃদ্ধি করে দেয়। পেটের কোনো সমস্যা হলে সেটিও ভালো হয়ে যায়। হলুদ ও আদা একসঙ্গে কুচি করে কিংবা বেটে জ্বাল দিয়ে খাওয়া যায়।
জবা ফুলের চা: এই চা জবা ফুলে নির্যাস দিয়ে তৈরি করা হয়। এই চা খেলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে, পাশাপাশি ফ্যাট কমে।
গোলাপ ফুলের চা: গোলাপের পাপড়িতে পলিফেনলস ও ফ্ল্যাভনয়েডস থাকে, যা আমাদের শরীরের ফ্রি রেডিকেলের সমতা বজায় রাখে। গোলাপের পাপড়ি ক্যাফেইনমুক্ত। তাই কফির বিকল্প হিসেবে গোলাপ চা খুবই উপযোগী। মেদ কমাতে এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
গ্রিন টি ও ব্ল্যাক কফি: গ্রিন টি ওজন কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এ বিষয়টা আমরা সবাই কমবেশি জানি। তাই ওজন কমানোর কথা এলে প্রথমেই আমরা আমাদের ডায়েটে গ্রিন টি এবং ব্ল্যাক কফি রাখি। কিন্তু এই গ্রিন টি এবং ব্ল্যাক কফি সবার জন্য প্রযোজ্য নয়। যাদের রক্তচাপ খুবই কম তাদের গ্রিন টি গ্রহণ করা যাবে না। যাদের থাইরয়েডের সমস্যা রয়েছে তাদের ব্ল্যাক কফি গ্রহণ করা থেকেও বিরত থাকা উচিত। v

লেখক: পুষ্টিবিদ, আর-রাহা হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার
 

আরও পড়ুন

×