ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫

কাজের মধ্যেও বজায় রাখুন জীবনের ছন্দ

কাজের মধ্যেও বজায় রাখুন জীবনের ছন্দ

ফাইল ছবি

রোজী আরেফিন

প্রকাশ: ০৭ মে ২০২৫ | ০০:৪০

‘কাজই জীবন, জীবনই কাজ’– এই মন্ত্রে বিশ্বাসী মানুষগুলো একদিন হঠাৎ করেই আবিষ্কার করে বসেন– জীবন থেকে গায়েব হয়ে গেছে হাসি, পারিবারিক সময়, এমনকি নিজের স্বপ্নের খোরাক। বর্তমান প্রতিযোগিতাময় যুগে ক্যারিয়ার আর ব্যক্তিজীবনের মধ্যে ভারসাম্য রাখা সত্যিই যেন এক মহাযুদ্ধ। এ যুদ্ধে হার মানলেই নাজেহাল। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, ওয়ার্ক-লাইফ দ্বন্দ্ব সরাসরি হৃদরোগ, অনিদ্রা ও মানসিক অস্থিরতা বাড়ায়। অথচ কিছু কৌশল আর সচেতনতা পারে আপনাকে এ যুদ্ধের বিজয়ী বানাতে। চলুন জেনে নেওয়া যাক কীভাবে গুছিয়ে নেবেন পেশাগত আর ব্যক্তিগত জীবন।
স্মার্টলি আপনার সময় ব্যবস্থাপনা করুন: প্রোডাক্টিভিটির মন্ত্র হলো এটি। দিনে ২৪ ঘণ্টাকে কীভাবে জাদুর কাঠি দিয়ে বাড়ানো যায়? উত্তর হলো, সময়টাকে স্মার্টলি ব্যবহার করুন। সকালে উঠে প্রথম ১০ মিনিটে পুরো দিনের পরিকল্পনা তৈরি করুন। যেমন– 
অগ্রাধিকার তালিকা: ‘ইজেনহাওয়ার ম্যাট্রিক্স’ ব্যবহার করে কাজকে চার ভাগে ভাগ করুন (জরুরি-গুরুত্বপূর্ণ, জরুরি-কম গুরুত্বপূর্ণ ইত্যাদি)। 
টাইম ব্লকিং: প্রতিটি কাজের জন্য আলাদা সময় বরাদ্দ করুন। গবেষণায় বলা হয়েছে, টাইম ব্লকিং উৎপাদনশীলতা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়াতে পারে। 
পোমোডোরো টেকনিক: ২৫ মিনিট কাজের সঙ্গে ৫ মিনিট বিরতি। এ পদ্ধতিতে ব্রেন ফ্রেশ থাকে, কাজেও এনার্জি আসে। 
সীমানা নির্ধারণ করুন: ফোনটা বন্ধ করুন, জীবনটা চালু করুন। অফিসের ল্যাপটপ বন্ধ হলেও কি মনের স্ক্রিনে চলে আসে ডেডলাইনের নোটিফিকেশন? ওয়ার্ক-ফ্যামিলি বর্ডার থিওরির মতে, কাজ ও ব্যক্তিজীবনের মধ্যে দৃশ্যমান সীমানা তৈরি করা জরুরি। যেমন– 
ফিজিক্যাল স্পেস: বাড়িতে কাজের জন্য আলাদা কর্নার বানান। কাজ শেষে সেই জায়গা এড়িয়ে চলুন। 
ডিজিটাল ডিসকানেক্ট: রাত ৮টার পর কাজের মেইল চেক নিষিদ্ধ! ছুটির দিনগুলো শুধু নিজের জন্য রাখুন। 
মানসিক সুইচ অফ: অফিসের স্ট্রেস নিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করা মানে পরিবারকে সাইকোলজিক্যাল টক্সিন দেওয়া। অফিসে যেটাই হোক, সেটি অফিসের গেট পর্যন্ত রেখে আসুন। বাড়িতে ফিরুন সম্পূর্ণ ফ্রেশ মাথায়। 
শারীরিক-মানসিক যত্ন নিন: নিজেকে রিচার্জ করার ফর্মুলা নো বডি, নো লাইফ– এই স্লোগান মাথায় রেখে। 
মাইন্ডফুলনেস: দিনে ১০ মিনিট মেডিটেশন করুন। চাইলে অ্যাপ ব্যবহার করতে পারেন (যেমন: হেডস্পেস, কাম)। 
ফিটনেস রুটিন: সপ্তাহে অন্তত ১৫০ মিনিট এক্সারসাইজ করুন। যোগাসন, নাচ, সাঁতার; যা আপনার পছন্দ। 
খাদ্যাভ্যাস: প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে মৌসুমি ফল-শাকসবজি খাবার তালিকায় রাখুন। ডার্ক চকলেট স্ট্রেস কমাতেও সহায়ক। প্রচুর পানি পান করুন, সময়ের খাবার সময়ে খান। অবশ্যই ভিটামিন ও মিনারেলসমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার অভ্যাস করুন। 
প্রযুক্তিকে কীভাবে গ্রহণ করবেন: অভ্যাস নাকি প্রয়োজন হিসেবে? 
স্মার্টফোনসহ অন্যান্য ডিজিটাল ডিভাইস আমাদের সময় কেড়ে নিচ্ছে নিঃশব্দে। কাজেই সমাধান– 
ডিজিটাল মিনিম্যালিজম করুন : অপ্রয়োজনীয় অ্যাপ, সাবস্ক্রিপশন ডিলিট করুন। 
নোটিফিকেশন অফ রাখুন: টানা ২ ঘণ্টা ফোকাস মোড চালু রাখুন। 
নেচার টাইম উপভোগ করুন: সকালে ফোন চেক করার আগে ১৫ মিনিট প্রকৃতির সঙ্গে কাটান। গাছের পাতায় শিশির দেখুন, পাখির ডাক শুনুন। 
সপ্তাহে একদিন ডিজিটাল ডিটক্স ডে হিসেবে রাখুন। ওইদিন পরিবারের সবাই মিলে সব ধরনের ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।  
অফিস থেকে সহায়তা নিন: এটা লজ্জার বিষয় নয়, এটা আপনার জরুরি প্রয়োজন! কাজেই সুপারম্যান সিনড্রোম থেকে বেরিয়ে আসুন। আপনি একাই সব করতে যাবেন না। তার পরিবর্তে বসকে বলুন ফ্লেক্সিবল আওয়ারে কাজ করার কথা। বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করুন স্ট্রেস। প্রফেশনাল কাউন্সেলিং নিন। মনে রাখবেন, থেরাপি নেওয়াটা কোনো দুর্বলতা নয়, এটা একটা বুদ্ধিমত্তার পরিচয়। 
ওয়ার্ক এবং ব্যক্তিগত জীবনের ব্যালান্স শেখাটা একটা শিল্প। মনে রাখবেন, জীবন মানেই হলো এক পাশে কাজ, অন্য পাশে স্বপ্ন সমানতালে মেইনটেইন করা। এ জন্যই জীবনে ওয়ার্ক লাইফের ভারসাম্য না রাখলে ডুবে যাবেন যে কোনো একদিকে। কাজেই আজই শুরু করুন– 
১. প্রতি শুক্রবার পরের সপ্তাহের রুটিন লিখুন।  
২. পরিবারের সঙ্গে ডিনার টেবিলে ফোন নিষিদ্ধ জোন করুন।  
৩. নিজেকে উপহার দিন– একটা বই, এক কাপ কফি বা একান্ত কিছু সময়।  
৪. যে জীবন আপনি চান, তা গড়ে তুলতে সময় নিন। কারণ ওয়ার্ক টু লিভ, ডোন্ট লিভ টু ওয়ার্ক।  v
তথ্যসূত্র: হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাপত্র। 
 

আরও পড়ুন

×