ভোক্তা প্রতারিত হলে যাবে কোথায়

আখতার হোসেন আজাদ
প্রকাশ: ০২ জুলাই ২০২৪ | ০৯:২৪
খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা ও নিরাপত্তা মানুষের মৌলিক অধিকার। একইভাবে ভোক্তা-অধিকারও মানুষের মৌলিক অধিকার হিসেবে বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। দুঃখজনক হলেও সত্য, বাংলাদেশের সিংহভাগ নাগরিক এই গুরুত্বপূর্ণ অধিকার সম্পর্কে জ্ঞাত নন। ফলে তারা প্রতিনিয়ত নানাভাবে প্রতারিত হচ্ছেন।
একজন নাগরিক যখন কোনো পণ্য বা সেবা কেনেন, তার প্রতিশ্রুত ও গুণগত মান বজায় রেখে পণ্য বা সেবা ভোগের অধিকারকেই ভোক্তা-অধিকার বলে।
সহজ ভাষায় বলতে গেলে, ভোক্তা- অধিকার হলো অর্থের বিনিময়ে যথাযথ মানসম্পন্ন, স্বাস্থ্যকর, নিরাপদ ও ভেজালমুক্ত পণ্য ও সেবা লাভের অধিকার। নিরাপদ পণ্য বা সেবা পাওয়া, পণ্যের উৎপাদনের উপাদান, উৎপাদন ও মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ, পণ্যের সঠিক মূল্য জানা, গুণগত মান অক্ষুণ্ন রেখে পণ্য পাওয়ার অধিকার ভোক্তা-অধিকারের অন্তর্গত। অর্থাৎ ন্যায্যমূল্যে গুণগত মানসম্পন্ন পণ্য বা সেবা পাওয়ার অধিকারই হলো ভোক্তা-অধিকার।
বাংলাদেশের নাগরিকরা বিভিন্নভাবে পণ্য বা সেবা কিনে প্রতারিত হচ্ছেন এবং সচেতনতার অভাবে কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না। এসব প্রতারণায় নতুনরূপে যুক্ত হয়েছে অনলাইনে পণ্য বিক্রি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে খুব সহজেই চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করে অসাধু ব্যবসায়ীরা। মূল্য নিয়ে কাঙ্ক্ষিত পণ্য না দিয়ে ক্রেতাদের সঙ্গে প্রতারণা করার ঘটনা ঘটছে নিয়মিত। কখনও বা পণ্য না দিয়েও অর্থ আত্মসাতের ঘটনা ঘটছে।
এ ছাড়া বিক্রয়যোগ্য পণ্যের মূল্য তালিকা প্রকাশ না করা, সেবার মূল্য তালিকা সংরক্ষণ ও প্রদর্শন না করা, ধার্যকৃত মূল্যের চেয়ে বেশি রাখা; ওষুধ, সেবা, পণ্যে ভেজাল, খাদ্যপণ্যে নিষিদ্ধ দ্রব্যের মিশ্রণ, অবৈধ প্রক্রিয়ায় পণ্য উৎপাদন বা প্রক্রিয়াকরণ, মিথ্যা বিজ্ঞাপনে ক্রেতাসাধারণকে প্রতারণা, প্রতিশ্রুত পণ্য বা সেবা যথাযথভাবে বিক্রি বা সরবরাহ না করা, নকল পণ্য উৎপাদন, মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য বা ওষুধ বিক্রয়, সেবাগ্রহীতার জীবন বা নিরাপত্তা বিপন্নকারী কার্যের মাধ্যমে ভোক্তা-অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে।
ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের স্লোগান– ‘লঙ্ঘিত হলে ভোক্তা-অধিকার, অভিযোগ করলে মিলবে প্রতিকার’। আমাদের দেশের অন্যতম সমস্যা দেশের নাগরিকরা প্রতারিত হলে কোথায়, কখন ও কীভাবে অভিযোগ করতে হবে, সে সম্পর্কে কোনো জ্ঞান রাখেন না। অভিযোগ করলে অহেতুক ঝামেলায় জড়িয়ে পড়ার ভয় কিংবা হুমকি বা অন্য কোনো ক্ষতির ভয়েও অনেকে অভিযোগ করতে চান না।
তবে সচেতন নাগরিক হিসেবে ভোক্তা-অধিকার লঙ্ঘিত হলে অবশ্যই ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে অভিযোগ জানানো কর্তব্য। কোনো ব্যক্তি যদি পণ্য কিনে প্রতারিত হন কিংবা প্রতিশ্রুত সেবা পেতে হয়রানির শিকার হন, তবে তিনি খুব সহজেই ভোক্তা- অধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ জানাতে পারেন।
ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সার্বক্ষণিক খোলা হটলাইন নম্বর ১৬১২১ অথবা ই-মেইলের মাধ্যমে অভিযোগ করতে পারেন। ই-মেইল [email protected]।
nআখতার হোসেন আজাদ: প্রাক্তন শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া
- বিষয় :
- ভোক্তা অধিকার