মাদকের বিরুদ্ধে তারুণ্যের শপথ

পঞ্চগড়ে ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার কলেজিয়েট ইনস্টিটউট প্রাঙ্গণে মাদকের বিরুদ্ধে শপথ নেয় শিক্ষার্থীরা
সফিকুল আলম
প্রকাশ: ২৫ নভেম্বর ২০২৪ | ২৩:৩২
পঞ্চগড়ের তিন পাশজুড়ে ২৮৮ কিলোমিটার ভারতীয় সীমান্ত এলাকা অবস্থিত। এখানে নানাভাবেই ছড়িয়ে পড়ছে মরণনেশা মাদক। পুলিশ ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অভিযানে মাঝেমধ্যে ধরা পড়ছে মাদক ব্যবসায়ী ও মাদক সেবনকারীরা। যৌথ বাহিনীর বিশেষ অভিযানেও বিভিন্ন এলাকা থেকে একাধিক মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। রামের ডাঙ্গা ছাড়াও পুরানা ক্যাম্প, রাজনগর, পৌরসভা খালপাড়া, রাজনগর খালপাড়া, ধাক্কামারার মিলগেট এলাকায় একাধিক অভিযান চালায় প্রশাসনসহ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। তবুও থেমে নেই মাদকের বিস্তার। যুবক ও তরুণরা ভারতীয় ফেনসিডিল, ট্যাপেন্টাডল ট্যাবলেট, গাঁজাসহ বিভিন্ন চেতনানাশক ট্যাবলেট ব্যবহার করছে। চেতনানাশক ইনজেকশন ব্যবহারের
ফলে অনেক মাদকাসক্ত মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ছে।
এদিকে দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতির পর উত্তরের এ সীমান্ত জেলার বিভিন্ন এলাকায় মাদকবিরোধী জাগরণ সৃষ্টি হয়েছে। ভয়াবহ মাদকের বিরুদ্ধে তরুণ ও যুবসমাজের উদ্যোগে পাড়া-মহল্লায় লাঠি হাতে রাত জেগে পাহারা দিচ্ছেন স্থানীয়রা। মাদক ব্যবসায়ী বা মাদকসেবীদের হাতেনাতে ধরে আইনের হাতে সোপর্দ করছেন তারা। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও বিভিন্ন এলাকায় একের পর এক মাদকবিরোধী সভা, সমাবেশ, উঠান বৈঠকসহ নানা কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। এতে স্থানীয় তরুণ ও যুবকরাও উৎসাহিত হচ্ছেন। তারা নিজ নিজ এলাকায় কমিটি গঠন করে নানাভাবে মাদকের বিস্তার ঠেকাতে কাজ করছেন। তরুণদের উদ্যোগে মাদকবিরোধী কমিটি করা হয়েছে জেলা শহরের রামের ডাঙা, মসজিদপাড়া, রাজনগরসহ বিভিন্ন এলাকায়।
এরই ধারাবাহিকতায় মাদকের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা সৃষ্টিতে মাদকের বিরুদ্ধে স্কুল ও কলেজ পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের ঐক্যবদ্ধ করে সমাজকে মাদকমুক্ত করতে সুহৃদ সদস্যরাও মাদকবিরোধী প্রচার অভিযান শুরু করেছে। তরুণদের মাদকের কড়াল গ্রাস থেকে রক্ষায় ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার কলেজিয়েট ইনস্টিটিউটে আলোচনা ও শিক্ষার্থীদের শপথ বাক্য পাঠ করানোর মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে মাদকবিরোধী প্রচার অভিযানের প্রথম দফার কাজ।
অনুষ্ঠানে মাদকের কুপ্রভাব সম্পর্কে আলোচনার পাশাপাশি মাদকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে শিক্ষার্থীদের আহ্বান জানান অতিথিরা।
সমকাল প্রতিনিধি সফিকুল আলমের তত্ত্বাবধানে পঞ্চগড় সুহৃদ সভাপতি শহীদুল ইসলামের সভাপতিত্বে প্রচার অভিযানের উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক সাবেদ আলী। সুহৃদ সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান হাবিবের সঞ্চালনায় আলোচনা পর্বে বক্তব্য দেন ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার কলেজিয়েট ইনস্টিটিউটের প্রধান শিক্ষক মো. তাহেরুল ইসলাম, সুহৃদ উপদেষ্টা ও শিক্ষক আজাহারুল ইসলাম জুয়েল, সমকালের পঞ্চগড় প্রতিনিধিসহ অতিথি ও সুহৃদরা।
তরুণ শিক্ষার্থীদের উদ্দশে জেলা প্রশাসক সাবেদ আলী বলেন, ‘আমরা মানুষকে মাদকের বিরুদ্ধে সচেতন করার লক্ষ্যে জনসচেতনতামূলক সভা, উঠান বৈঠক, র্যালি করেছি। মানুষ সচেতন হয়ে এলাকাভিত্তিক কমিটি করে পাহারা দিচ্ছেন। মাদক ব্যবসায়ী ও মাদকসেবীদের বিরুদ্ধে তারা রুখে দাঁড়াচ্ছেন। অপরাধীদের শাস্তির আওতায় আনা হচ্ছে। মাদকের বিরুদ্ধে বিশেষ টাস্কফোর্স পরিচালনা করা হচ্ছে। এতে মাদকের বিস্তার কমে এসেছে। সুহৃদরাও মাদকবিরোধী কর্মসূচির মাধ্যমে এগিয়ে এসেছেন। এ কর্মসূচি সফল হোক– এটিই আমাদের প্রত্যাশা।
মো. তাহেরুল ইসলাম বলেন, যাদের ঘরে মাদকাসক্ত আছে তাদের দুঃখ-কষ্ট তারাই বোঝেন। একজন মাদকাসক্ত পুরো পরিবারকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেয়। মাদককে না বলার প্রত্যয় নিয়ে নিজের অবস্থান থেকে নিজেই যদি পরিবর্তন হই তাহলে পরিবারকে, সমাজকে, দেশকে সঠিক ও সুন্দরভাবে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে পারব।
শহীদুল ইসলাম মাদকের ভয়াবহতা সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের বলেন, ‘যদি মাদক থেকে নিজেকে দূরে রাখি তাহলে আমাদের সফলতার দ্বার উন্মোচিত হবে। আমরা আগামীদিনে নিজেদের সুপ্রতিষ্ঠিত করতে পারব। যারা মাদকাসক্ত তাদের দিকে তাকালেই তোমরা বুঝতে পারবে মাদক কত ভয়াবহ। এই নেশার ফাঁদে একবার পা দিলে ফিরে আসা কঠিন। তাই এর কুফল সম্পর্কে জেনে মাদক থেকে নিজেকে দূরে রাখার পাশাপাশি কাছের মানুষদের কুফল সম্পর্কে জানাতে হবে। তাহলে আমরা মাদকমুক্ত সুস্থ সমাজ গড়তে সক্ষম হবো।’
পঞ্চগড় সুহৃদের পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণার মধ্য দিয়ে শেষ হয় প্রথম পর্বের আনুষ্ঠানিকতা।
সাংগঠনিক আলোচনা
এর আগে ২৩ নভেম্বর সাংগঠনিক আলোচনায় মিলিত হন পঞ্চগরের সুহৃদরা। সব সংকট কাটিয়ে নতুন সময়কে ধারণ করে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তারা। মাদকবিরোধী কর্মসূচির পাশাপাশি শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর বিষয়টি প্রাধান্য পায় আলোচনায়। সবার সম্মতিক্রমে চলমান কর্মসূচি শেষে নতুন কর্মসূচি শুরু সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে শেষ হয় সভা। v
সমন্বয়ক সুহৃদ সমাবেশ, পঞ্চগড়
- বিষয় :
- মাদকের অভিযোগ