মাতৃত্ব ও মানসিক সুস্থতার গল্প বললেন অ্যাড্রিয়েন বায়লন-হাউটন

.
হিল্লোল চৌধুরী
প্রকাশ: ০৬ জুলাই ২০২৫ | ০০:৫৬
এক সময়ের জনপ্রিয় গার্ল গ্রুপ ‘দ্য চিতা গার্লস’ আর তারও আগে ‘থ্রিএলডব্লিউ’ দিয়ে যাত্রা শুরু। তারপর দীর্ঘ পথ পেরিয়ে এখন তিনি একজন মা, ব্যবসায়ী, এমি অ্যাওয়ার্ডজয়ী টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব এবং সবার আগে একজন নারী, যিনি নিজেকে খুঁজে পেয়েছেন ‘না’ বলার সাহসের ভেতর দিয়ে। তিনি অ্যাড্রিয়েন বায়লন-হাউটন। সম্প্রতি রিডার্স ডাইজেস্ট-এর সঙ্গে এক আলাপচারিতায় অ্যাড্রিয়েন কথা বলেছেন মাতৃত্বের বাস্তবতা, মানসিক সুস্থতা নিয়ে। অনুবাদ ও ফিচার রূপে তা তুলে ধরা হলো।
এই দাগগুলোই আমার গল্পের রং
মাতৃত্বের নিখুঁত ছবির পেছনের বাস্তব রূপটা কেমন? অ্যাড্রিয়েন বলেন, ‘এইমাত্র আমি আরেপা রান্না করেছি আমার ছেলের সঙ্গে। দেখুন, আমার জামাকাপড় কেমন দেখাচ্ছে!’ জামায় লেগে থাকা এই দাগই তাঁর কাছে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এগুলো তৈরি হয়েছে রান্নাঘরে, সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করে, হাসিখুশি মুহূর্ত ভাগ করে। তিনি বলেন, ‘আমি নিখুঁত হওয়ার চেষ্টায় ব্যস্ত নই। শুধু মুহূর্তগুলোকে উপভোগ করতে চাই। কারণ সময় দ্রুত চলে যাচ্ছে।’
ছোট তালিকায় বড় জাদু
একজন মা, অভিনেত্রী ও উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিদিনের ব্যস্ততা কীভাবে সামলান অ্যাড্রিয়েন? এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি তালিকা করার রানী। সব কাজের তালিকা বানিয়ে রাখি। জামাকাপড় থেকে শুরু করে সন্তানের দিনটা কেমন যাবে, সব আগে থেকে পরিকল্পনা করি। ফলে হুটহাট কিছু হলে আমি অতটা বিচলিত হই না।’
নিজের ও সন্তানের কাপড় গুছিয়ে রাখা, ছেলের ঘরে ছোট আয়নার পাশে নিজের মেকআপ ব্যাগ রেখে দেওয়া–এই ছোট ছোট প্রস্তুতির মধ্যেই লুকিয়ে আছে তাঁর দৈনন্দিন কাজ।
নোচেবুয়েনা, পারান্দাস আর পারিবারিক আলো
উৎসবের সময় এলেই অ্যাড্রিয়েনের ঘর যেন হয়ে ওঠে এক ছুটির রাজ্য। তিনি বলেন, ‘‘আমি এখন নিজের বাড়িতে বড়দিনের আগের রাত–নোচেবুয়েনা–হোস্ট করি। পরিবার-পরিজন মিলে রাত ১২টায় আমরা শুরু করি ‘পারান্দাস’। ঢোল, তবলা, ক্ল্যাভেস, তাম্বোরিন নিয়ে সবাই নাচে, গায় রান্নাঘরে।’’
এখানেই শেষ নয়, তিনি শুরু করেছেন নিজেদের ‘ক্রিসমাস ট্রি লাইটিং’। ১ নভেম্বরেই আলো লাগানো হয় বাড়ির চারদিকে। পরিবারকে ডাকা হয়, কাউন্টডাউন হয়, আর একসঙ্গে জ্বলে ওঠে ঘরের আলো।
‘আমার মা নিখুঁত ছিলেন না, তবুও তিনি আমার নায়িকা’
মাতৃত্বের যাত্রায় নিজেকে খুঁজে পাওয়ার প্রশ্নে অ্যাড্রিয়েনের তিনটি স্পষ্ট পরামর্শ– ১. নিজেকে ক্ষমা করুন। আপনি যথাসাধ্য করছেন। ২. আপনার মাও নিখুঁত ছিলেন না। তবুও আপনি তাঁকে ভালোবাসেন। তাই নিজেকেও ভালোবাসুন, ভুলগুলোকে অতটা বড় করে দেখবেন না। ৩. সাহায্য চাইতে শিখুন। ভালোবাসার কোনো এক বন্ধু, আত্মীয় বা প্রতিবেশী যখন জিজ্ঞেস করে, ‘কিছু লাগবে?’–তখন বলুন, ‘হ্যাঁ।’ একটি শিশুকে বড় করতে একটি গোটা সমাজ লাগে।
অ্যাড্রিয়েন বায়লন-হাউটনের গল্প কেবল তারকা হওয়ার গল্প নয়–এটি নিজেকে আবিষ্কার ও ভালোবাসার গল্প। তিনি শিখেছেন, সবকিছু সামলাতে গিয়ে নিখুঁত না হয়ে বরং মুহূর্তটিকে সত্যিকারভাবে উপভোগ করাই সবচেয়ে বড় অর্জন।
অ্যাড্রিয়েনের মতে– অতীত নয়, ভবিষ্যৎটাই মুখ্য। যদি কিছু ঠিক করার থাকে, সেটি এখনই জানাটা ভালো। ‘না’ বলতে শেখার ওপর জোর দেন অ্যাড্রিয়েন। তিনি বলেন, ‘আমি অনেকদিন পর্যন্ত না বলতে ভয় পেতাম, নিজের অস্বস্তি মেনে অন্যদের আরাম দিতাম। এটি ছিল নিজের প্রতি অবিচার। এখন বুঝেছি, না বলতে পারার মানে নিজেকে ভালোবাসা, এক দারুণ উপহার।’ v
সৌজন্যে: রিডার্স ডাইজেস্ট
- বিষয় :
- মাতৃভাষা