অপুষ্টিতে গাজার শিশুদের মৃত্যুমিছিল

ছবি :: এএফপি
তাসমিয়া জাহান সিমরান
প্রকাশ: ০৬ জুলাই ২০২৫ | ০০:৫৮
‘শুধু খাবার পেলে বেঁচে যেত’–এই কথাটি এখন গাজার হাজারো শিশুর গল্প। যুদ্ধ, অবরোধ আর নিষ্ঠুর নিষেধাজ্ঞার জাঁতাকলে পড়ে এক ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের দিকে এগিয়ে চলেছে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা।
জাতিসংঘের শিশু সংস্থা ইউনিসেফের সর্বশেষ তথ্য বলছে, চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসেই ১৬ হাজার ৭০০-এর বেশি শিশু অপুষ্টির কারণে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। তাদের মধ্যে অনেকেই এখন আর জীবিত নেই।
৩ জুলাই এক বিবৃতিতে ইউনিসেফ জানায়, গাজা উপত্যকায় হাজার হাজার শিশু তীব্র অপুষ্টিতে ভুগছে। চলমান ইসরায়েলি অবরোধ, খাদ্য ও ওষুধের ঘাটতি, জ্বালানির সংকট এবং বিশুদ্ধ পানির অভাবে জরুরি সহায়তা পৌঁছানো প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠেছে।
ইউনিসেফ সতর্ক করে বলেছে, গাজার শিশুরা বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম ভয়াবহ খাদ্য সংকটের সম্মুখীন। জরুরি সহায়তা প্রবেশের অনুমতি না দিলে এক ভয়াবহ স্বাস্থ্য বিপর্যয় আসন্ন।
শুধু মে মাসেই ছয় মাস থেকে পাঁচ বছর বয়সী ৫ হাজার ১১৯ জন শিশুকে তীব্র অপুষ্টি নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে–এপ্রিলের তুলনায় যা ৫০ শতাংশ এবং ফেব্রুয়ারির তুলনায় ১৫০ শতাংশ বেশি।
ইউনিসেফের মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক এদুয়ার বেইগবেদার বলেন, মাত্র ১৫০ দিনে প্রতিদিন গড়ে ১১২টি শিশুকে তীব্র অপুষ্টির কারণে হাসপাতালে নিতে হয়েছে। তাদের প্রতিটি মৃত্যুই প্রতিরোধযোগ্য ছিল। জীবনরক্ষাকারী খাবার, পানি ও চিকিৎসা সহায়তা ইচ্ছাকৃতভাবে আটকে রাখা হয়েছে। এটি একটি মানবসৃষ্ট সংকট, যার মূল্য দিচ্ছে শিশুরা–নিজেদের জীবন দিয়ে।
গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, কমপক্ষে ৬৬ জন শিশু ইতোমধ্যে অপুষ্টিতে মারা গেছে।
তারা বলেছে, ইসরায়েল পরিকল্পিতভাবে খাদ্য, দুধ ও ওষুধ আটকে দিয়ে ক্ষুধাকে অস্ত্রে রূপান্তর করেছে। এটি একটি স্পষ্ট যুদ্ধাপরাধ।
গাজায় খাদ্য সরবরাহের একমাত্র পথ হয়ে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন। বিতরণকেন্দ্রগুলোতে বারবার হামলা ও সুবিধাভোগীদের লক্ষ্য করে গুলির ঘটনা পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তুলেছে।
আরব-ব্রিটিশ আন্ডারস্ট্যান্ডিং কাউন্সিলের পরিচালক ক্রিস ডয়েল বলেন, ‘জিএইচএফের এই সহায়তা ব্যবস্থা সম্পূর্ণ অবমাননাকর–এটি মানবিক সহায়তার স্বাধীনতা, নিরপেক্ষতা এবং মানবিকতার মূলনীতিকে উল্টো করে দিয়েছে।’ গাজার এই সংকট আমাদের সামনে একটি গভীর প্রশ্ন তোলে, শুধু একটু খাদ্য, একটু পানি, কিছু ওষুধ– এগুলো কি পৌঁছে দেওয়া খুব কঠিন? যদি উত্তর ‘না’ হয়, তবে এই মৃত্যু ‘মানবসৃষ্ট এবং প্রতিরোধযোগ্য’ আর তখন নীরবতা আর নিরপেক্ষতা দুটিই হয়ে ওঠে যুদ্ধাপরাধে সহযোগিতা। v
- বিষয় :
- গল্প