ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫

যেসব অপরাধ বেশি হচ্ছে

ভোক্তা অধিকার লঙ্ঘন

যেসব অপরাধ বেশি হচ্ছে

.

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২২ মার্চ ২০২৪ | ২১:১৮

প্রাপ্ত তথ্য ও অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বাজার, বিপণিকেন্দ্র, দোকানপাট, কারখানাসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে থাকে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। অভিযানে কোনো আইন অনুযায়ী অপরাধ প্রমাণিত হলে অপরাধীকে শাস্তির আওতায় আনা হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে গত ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত ভোক্তা অধিকার লঙ্ঘনের মোট ২ লাখ ৭ হাজার ২৫০টি অপরাধে ১২৬ কোটি ৬২ লাখ ৫৯ হাজার হাজার ৭৫০ টাকা জরিমানা করেছে অধিদপ্তর। 

এ পর্যন্ত জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর সবচেয়ে বেশি জরিমানা করেছে অবৈধ প্রক্রিয়ায় পণ্য উৎপাদন বা প্রক্রিয়াকরণের অপরাধে। এ ধরনের ৩৮ হাজার ৭৫৭টি অপরাধ প্রমাণিত হওয়া মোট ৩২ কোটি ৬০ লাখ ৫৫ হাজার টাকার বেশি জরিমানা করা হয়েছে। 

এ তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে আছে পণ্যের মোড়ক ব্যবহার না করা। পণ্যের মোড়ক ব্যবহার না করার ৩৭ হাজার ৩৫০টি অপরাধে জরিমানা করা হয়েছে ২০ কোটি ৪৬ লাখ ৮৪ হাজার টাকার বেশি। 

তৃতীয় স্থানে রয়েছে মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য বা ওষুধ বিক্রি। এ ধরনের ৩৭ হাজার ৩২৭টি অপরাধে জরিমানার পরিমাণ ১৯ কোটি ৫২ লাখ টাকার বেশি। চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে মূল্যের তালিকা প্রদর্শন না করা। এ ধরনের ৩৫ হাজার ৭১৬টি অপরাধে প্রায় ৮ কোটি ২০ লাখ ১৭ হাজার টাকা জরিমানা হয়েছে। 

এ তালিকায় পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে যে অপরাধটি তা হচ্ছে, নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি মূল্য নেওয়া। অধিদপ্তরের অভিযানে নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দাম রাখার অপরাধ প্রমাণিত হয়েছে ২১ হাজার ৬৩৭টি। জরিমানার পরিমাণ ৯ কোটি ৩৫ লাখ টাকার মতো। 

এ ছাড়া ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর আরও যেসব অপরাধে জরিমানা করেছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে, প্রতিশ্রুত পণ্য বা সেবা না দেওয়া, খাদ্যে নিষিদ্ধ দ্রব্যের মিশ্রণ, ওজনে বা ওজন পরিমাপক যন্ত্রে কারচুপি, সেবাগ্রহীতার জীবন বা নিরাপত্তা বিপন্নকারী কাজ, অবহেলার মাধ্যমে সেবাগ্রহীতার অর্থ বা জীবনহানি, ভেজাল পণ্য ও ওষুধ বিক্রি, পরিমাপে, পরিমাপক ফিতা বা অন্য কিছুতে কারচুপি ইত্যাদি। 

কনজুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, বিভিন্ন ধরনের ভোক্তা অধিকার লঙ্ঘনের দায়ে জেল ও জরিমানা দুটিই হতে পারে। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে আইনে যতটুকু ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, সে অনুসারে জরিমানা করে থাকে তারা। তবে কারাদণ্ডের ক্ষেত্রে মামলা করতে হয় তাদের।

তিনি বলেন, দেশের ভোক্তা স্বার্থ রক্ষায় অধিদপ্তর আরও বেশি ভূমিকা রাখতে পারে। যতটুকু আইনি ক্ষমতা আছে তার যথাযথ প্রয়োগে অধিদপ্তরের সক্ষমতা আরও অনেক বাড়ানো প্রয়োজন। তিনি বলেন, অধিদপ্তরের জনবল সংকট আছে। সব জেলায় অফিসও নেই। আবার কোথাও কোথাও অফিস থাকলেও সেখানে একজন মাত্র কর্মকর্তা আর একজন কর্মচারী দিয়ে চলতে হচ্ছে। এত কম জনবল দিয়ে কীভাবে দায়িত্ব পালন সম্ভব। 

উল্লেখ্য, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ এবং ভোক্তা অধিকারবিরোধী কাজ প্রতিরোধের উদ্দেশ্যে ২০০৯ সালে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন জাতীয় সংসদে পাস হয়। এ আইন বাস্তবায়নের জন্য প্রতিষ্ঠা করা হয় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। আইন প্রণয়ন ও অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠার ফলে দেশে প্রতিদিনই বাজার তদারকি করে অপরাধ দমনের ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। ভোক্তারা তাদের অধিকার লঙ্ঘন হলে আইন অনুযায়ী অভিযোগ দায়েরের সুযোগ পাচ্ছেন। প্রতিকারও পাচ্ছেন খুব স্বল্প সময়ের মধ্যে। 

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনটি যথাযথভাবে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে কার্যকর দিকনির্দেশনা প্রদানের জন্য ২৯ সদস্যবিশিষ্ট উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ রয়েছে। জনসচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যে জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ কমিটি গঠন করা হয়েছে। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ সম্পর্কে যে কোনো তথ্য তাৎক্ষণিকভাবে জানতে বা অভিযোগ করতে ভোক্তা বাতায়ন শীর্ষক হটলাইনও (১৬১২১) স্থাপন করা হয়েছে। 

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯-এ বিভিন্ন ধরনের অপরাধের জন্য বিভিন্ন ধরনের শাস্তির বিধান রয়েছে। যেমন– মানুষের জীবন বা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হয় এমন কোনো প্রক্রিয়ায় কোনো পণ্য উৎপাদন বা প্রক্রিয়াকরণ করিলে দুই বছর কারাদণ্ড বা এক লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড কিংবা উভয় দণ্ডাদেশ প্রদানের বিধান রয়েছে আইনে। 
আইনে বলা হয়েছে, কোনো সেবা প্রদানকারী অবহেলা, দায়িত্বহীনতা বা অসতর্কতা দ্বারা সেবাগ্রহীতার অর্থ, স্বাস্থ্য বা জীবনহানি ঘটালে তিনি অনূর্ধ্ব তিন বছর কারাদণ্ড বা অনধিক ২ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

মূল্যের তালিকা প্রদর্শন না করার বিষয়ে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি কোনো আইন বা বিধি দ্বারা আরোপিত বাধ্যবাধকতা অমান্য করে তার দোকান বা প্রতিষ্ঠানের সহজে দৃশ্যমান কোনো স্থানে পণ্যের মূল্যের তালিকা প্রদর্শন না করলে তিনি অনূর্ধ্ব এক বছর কারাদণ্ড বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। 

একই অপরাধ ফের করলে দ্বিগুণ শাস্তির বিধানও রয়েছে আইনে। এ প্রসঙ্গে আইনে বলা হয়েছে, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনে উল্লিখিত কোনো অপরাধের জন্য দণ্ডিত ব্যক্তি যদি পুনরায় একই অপরাধ করেন, তবে তিনি ওই অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ যে দণ্ড রয়েছে তার দ্বিগুণ দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

আরও পড়ুন

×