ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

তিন মাসের মধ্যেই হালনাগাদ হচ্ছে উপকারভোগীর তালিকা

তিন মাসের মধ্যেই হালনাগাদ হচ্ছে উপকারভোগীর তালিকা

.

জসিম উদ্দিন বাদল

প্রকাশ: ২৫ অক্টোবর ২০২৪ | ২৩:২৮

খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিকে আরও সুসংহত ও সময়োপযোগী করার জন্য এ-সংক্রান্ত নীতিমালায় পরিবর্তন এনেছে সরকার। এর আওতায় ইউনিয়ন পর্যায়ে দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে ভর্তুকিমূল্যে খাদ্য বিতরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নির্ধারিত কার্ডের মাধ্যমে উপকারভোগী একজন ক্রেতাকে প্রতি মাসে ৩০ কেজি করে চাল দেওয়া হবে। এ জন্য আগামী তিন মাসের মধ্যে যারা বর্তমানে এ সুবিধা পাচ্ছেন তাদের তালিকা যাচাই-বাছাই করে হালনাগাদ তালিকা প্রস্তুত করার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। ২০১৭ সালের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি নীতিমালা সংশোধন করে সম্প্রতি নতুন নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। নীতিমালায় তালিকা হালনাগাদ সম্পর্কিত নির্দেশনা রয়েছে। 
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ওই নীতিমালায় বলা হয়, পল্লি অঞ্চলের দরিদ্রদের স্বল্পমূল্যে খাদ্য সহায়তা দেওয়া ও পুষ্টি নিশ্চিত করতে সরকার খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। তাই সুশৃঙ্খলভাবে প্রকৃত সুবিধাভোগীদের মধ্যে সাশ্রয়ী দামের খাদ্য পৌঁছে দিতে ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা–এ তিন পর্যায়ে খাদ্যবান্ধব কমিটি গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, প্রকৃত উপকারভোগীদের তালিকা ও ডিলার নিয়োগ পাওয়ার পর চাল বিতরণ শুরু হবে। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের পূর্বপ্রস্তুতি রয়েছে।
নীতিমালায় বলা হয়, ইউনিয়ন পর্যায়ে বসবাসরত নিম্ন আয়ের দরিদ্র জনসাধারণের মধ্যে থেকে হতদরিদ্র পরিবারকে বাছাই করতে হবে। হতদরিদ্র পরিবার বাছাইয়ের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য এবং ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের ডিস্ট্রেস প্রাইওরিটি তালিকা বিবেচনায় নিতে হবে। নীতিমালা প্রকাশের তিন মাসের মধ্যে বিদ্যমান উপকারভোগীদের যাচাই-বাছাই করে হালনাগাদ তালিকা তৈরি করতে হবে। এ তালিকা হালানাগাদ করতে হবে প্রতি বছর জুলাই-আগস্টে। সুবিধাভোগীকে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে। পরিবারের প্রধানের জাতীয় পরিচয়পত্র থাকতে হবে। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ভর্তুকিমূল্যের এই চাল কিনতে পারবেন নিম্ন আয়ের মানুষ, ভূমিহীন, কৃষিশ্রমিক, দিনমজুর, উপার্জনে অক্ষম, বিধবা, তালাকপ্রাপ্ত, স্বামী পরিত্যক্ত ও অসচ্ছল বয়স্ক নারী এবং যেসব দুস্থ পরিবারে শিশু বা প্রতিবন্ধী রয়েছে সেসব পরিবার। তবে একই পরিবারে একাধিক ব্যক্তি পাবেন না। যারা ভিজিডি কর্মসূচির সুবিধা পাচ্ছেন তারা এ কর্মসূচির চাল কিনতে পারবেন না। 
পল্লি অঞ্চলে সাধারণত যে সময় কাজকর্ম কম থাকে অর্থাৎ মার্চ, এপ্রিল ও সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নভেম্বর–এই পাঁচ মাস সাশ্রয়ী দামের খাদ্যশস্য বিতরণ করবে সরকার। নতুন নীতিমালায় ডিলার নিয়োগের বিষয়ে বলা হয়েছে, উপজেলা কমিটি প্রতি ইউনিয়নে অন্তত ৫০০ জন উপকারভোগী পরিবারের জন্য একজন ডিলার নিয়োগের সুপারিশ করবে। কোনো ইউনিয়নে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ডিলার পাওয়া না গেলে পার্শ্ববর্তী ইউনিয়নের ডিলারের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করা যাবে; যিনি ডিলারশিপ নেবেন হাট বা বাজারে তাঁর নিজস্ব বা ভাড়া দোকান থাকতে হবে। কোনো ওয়ার্ডে হাট-বাজার না থাকলে উপকারভোগীদের সুবিধা বিবেচনা করে বিক্রয় স্থান নির্ধারণ করা যাবে। খাদ্যশস্য যাতে স্বাস্থ্যসম্মতভাবে রাখা যায় সেজন্য ডিলারের দোকানের মেঝে পাকা হতে হবে। অন্তত ১৫ টন খাদ্যশস্য ধারণক্ষমতা সম্পন্ন দোকান থাকতে হবে। ডিলারশিপ নিতে হলে ট্রেড লাইসেন্স থাকা আবশ্যক। তবে খাদ্য বিভাগ থেকে কালো তালিকাভুক্ত, বাতিল বা সাময়িকভাবে বহিষ্কৃত কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে ডিলার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া যাবে না। 
একই ব্যক্তি খাদ্য বিভাগের একাধিক কর্মসূচির ডিলার হতে পারবেন না। কোনো সরকারি কর্মচারী বা জনপ্রতিনিধিকে ডিলার নিয়োগ দেওয়া যাবে না। জেলা কমিটির অনুমোদন নিয়ে উপজেলা কমিটি ডিলার নিয়োগ দেবেন। ডিলারশিপ পেতে হলে ২৫ হাজার টাকা ফেরতযোগ্য জামানত পে-অর্ডার আকারে দিতে হবে। নির্ধারিত শর্তাবলি সংবলিত ৩০০ টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে অঙ্গীকারনামা নিতে হবে ডিলারের কাছ থেকে। ডিলারের মেয়াদ হবে পাঁচ বছর। লাইসেন্স প্রতি বছর নবায়ন করতে হবে। নীতিমালায় উল্লিখিত কোনো শর্ত ভঙ্গ করলে ডিলারশিপ বাতিল হয়ে যাবে, খাদ্যশস্য আত্মসাৎ করলে এর দ্বিগুণ মূল্য জরিমানা করা হবে এবং ডিলারের বিরুদ্ধে ফৌজদারি বা দেওয়ানি মামলা দায়ের করা যাবে।
ডিলারকে মাসিক মোট চাহিদার অন্তত অর্থেক খাদ্যশস্য মাসের ৭ তারিখের মধ্যে উত্তোলন করতে হবে। ডিলারের বিক্রয়কেন্দ্র খোলা রাখতে হবে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। ডিলারের দোকানে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির সাইনবোর্ড লাগাতে হবে।

আরও পড়ুন

×