ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

নারী অগ্রগতির পথে অন্তরায় বৈষম্য

নারী অগ্রগতির পথে অন্তরায় বৈষম্য

খুশী কবির

প্রকাশ: ১২ অক্টোবর ২০২৩ | ০২:৩৮ | আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০২৩ | ০২:৩৮

একাত্তরে স্বাধীনতার অব্যবহিত পর বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে অত্যন্ত জীর্ণ অবস্থায় ছিল। পাকিস্তানিরা যখন বুঝতে পেরেছিল তাদের পরাজয় নিশ্চিত, তখন তারা যতটা পারে ধ্বংস করে গেছে। ধ্বংসস্তূপ থেকে বাংলাদেশ আজকের অবস্থানে এসেছে। বাংলাদেশ আরেকটি দিকে উদাহরণ তৈরি করেছে, তা হলো নারী-পুরুষের বৈষম্য হ্রাস।

বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ নারী-পুরুষের বৈষম্য হ্রাসে ভালো ভূমিকা পালন করেছে। বাংলাদেশের জিডিপি, জিএনপি বেড়েছে, এটাও ইতিবাচক। নেতিবাচক দিক হলো, ধনী-গরিবের মধ্যে ব্যবধান অনেক বেড়েছে। ধনীর সংখ্যা অনেক বেড়েছে, তাদের ধন-সম্পদের পরিমাণ অনেক বেড়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা।

১৯৭২ সালে ধনী-গরিবের মধ্যে ব্যবধান ততটা ছিল না, যদিও দারিদ্র্য বেশ প্রকট ছিল। 

দরিদ্ররা খুবই নাজুক ও কঠিন জীবন যাপন করত। আজকে যে দরিদ্র, সে কিন্তু অন্তত একবেলা খেতে পারে। কোথাও দরিদ্র মানুষ দু’বেলা এবং তিনবেলাও খেতে পারছে। দেশ স্বাধীনের পর সে অবস্থা ছিল না। তার ওপর বন্যা, দুর্ভিক্ষ, রাজনৈতিক তোলপাড়। সে কারণে সত্তর ও আশির দশকে যারা দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করত, খুব করুণ অবস্থার মধ্যে ছিল তারা। তখন তারা চুলা জ্বালানোর মতো অবস্থায় ছিল না। এখন সে অবস্থা নেই। আমাদের গড় আয়ু বেড়েছে, এটা ইতিবাচক। দেশ স্বাধীনের সময়কালে গড় আয়ু ৫০ বছরের মতো ছিল, এখন সেটি দাঁড়িয়েছে ৭২ দশমিক ৪ বছরে। তখন নারীদের আয় করার সুযোগ প্রায় ছিল না। এখন আয় করার সুযোগ বেড়েছে। এখন নারীরা অনেক জায়গায় কাজ করতে পারছে, যা আগে সম্ভব ছিল না। আরও অনেক বৈষম্য এখন কমেছে। নারীদের জন্য শহর ও গ্রামে কাজের দ্বার খুলেছে। কিন্তু সে সুযোগ পুরুষের তুলনায় অনেক কম। মজুরিও পুরুষের চেয়ে কম। 

বেশ কিছু জায়গায় দুর্বলতা আছে। পুরো বিশ্বে কয়েকটা জায়গায় বেশ সমস্যা রয়ে গেছে। এটি আমাদের বেশ ভাবিয়ে তোলে। এ নিয়ে আমাদের চিন্তা করতে হবে। আমরা যদি আসলেই বাংলাদেশের উন্নতি চাই, বাংলাদেশকে উদাহরণ হিসেবে দেখাতে চাই তাহলে সামনে এগোতে হবে। সব শ্রেণির মানুষের ঐক্যবদ্ধ অংশগ্রহণের কারণে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল। অনেক দেশের স্বাধীন হওয়ার পেছনে আন্দোলন-সংগ্রাম ছিল। তবে সেখানে সব শেষে ‘চুক্তি’ ছিল। বাংলাদেশে এমনটা হয়নি। সব মানুষের অংশগ্রহণের মাধ্যমে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন হয়েছে। এ অর্জন ধরে রাখতে হবে। 

বাংলাদেশ অন্য দেশের চেয়ে ভালো না মন্দ, তা দেখতে চাই না। দেখতে চাই বাংলাদেশকে আদর্শ হিসেবে। তাহলে কোন জায়গায় নজর দিতে হবে? আমি নারীর অগ্রগতির বিষয়টিই বলব। সবচেয়ে বড় যে বিষয়টি দরকার, তা হলো মানসিকতার পরিবর্তন। আমাদের দেশের মানুষের মানসিকতা আগের চেয়ে পরিবর্তন হয়েছে। তবে খুব ইতিবাচক বলা যায় না। নারীর নিরাপত্তাহীনতা এখানে অনেক বেশি। নারী কাজের সুযোগ পাচ্ছে, বাইরের জগতের সঙ্গে মিশছে। তবে তারা অনেকটা নাজুক অবস্থার মধ্যে পড়ে যেতে পারে। কারণ সমাজ তাদের সেভাবে গ্রহণ করছে না। সমাজ পিতৃতান্ত্রিক। সমাজ পুরুষদের মধ্যে এই চিন্তা ঢুকিয়ে দেয়– নারীর প্রধান কাজ ঘর, সংসার, সন্তান সামলানো। বাইরের কাজকে ধরা হয় বাড়তি কাজ হিসেবে। পুরুষকে সহযোগিতা করার জন্য সে কাজ। অন্যদিকে বোঝানো হয়– নারী বস্তু, যে নারী বাইরে যায় সে ভালো না। তখন দ্বান্দ্বিক পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে। একদিকে নারীদের অবাধ সুযোগ দেওয়া হচ্ছে চাকরির জন্য, শিক্ষার জন্য। অন্যদিকে নারীরা যেন নিয়ন্ত্রণের বাইরে না যায়, সেদিকে কড়া দৃষ্টি রাখছে সমাজ। নারীকে যখন বস্তু হিসেবে দেখানো হয় তখন বোঝানো হয়, পুরুষের কর্তৃত্বই বেশি। নারীর ওপর পরিবার, সমাজ সব জায়গায় অনেক ধরনের নির্যাতন হয়। পরিবারে পুরুষ আয় করছে, নারীও আয় করছে। কিন্তু নারীর আয়কে প্রাধান্য দেওয়া হয় না। পুরুষের আয় নারীর চেয়ে কম হলেও তার আয়কেই প্রধান ধরা হয়। পুরুষ মনে করে, সে যদি প্রধান না থাকতে পারে তাহলে তার পুরুষত্ব ঝুঁকিতে পড়ে যাবে। এ জন্য পুরুষ তার কর্তৃত্ব বজায় রাখতে সার্বিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। সামাজিকভাবে আরও বেশি মানসিকতার পরিবর্তন দরকার। কোনো মেয়ে যখন ভালো করছে তখন সমাজ তাকে গ্রহণ করছে না। যে মেয়ে বাসে চড়ছে, দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে, শপিং করছে, অনেকে মনে করে তাকে ধর্ষণ করা যাবে। মনে করে, পুরুষ হিসেবে এটা তার অধিকার। পুরুষ ভাবে সে যেমন চায় তেমনিভাবে নারীকে ব্যবহার করতে পারে। যদিও এ নিয়ে অনেক আইন আছে। কিন্তু আইনের প্রয়োগ তেমন হয় না। মানসিকতায় পরিবর্তন না আসা পর্যন্ত আমরা ঝুঁকির মধ্যে থাকছি। এমন মানসিকতা আমাদের পুরো জাতি, রাষ্ট্র ও দেশকে টেনে নিচে নামাচ্ছে। 

মেয়ে কীভাবে বড় হচ্ছে, কীভাবে লালিত-পালিত হচ্ছে, তার সাংবিধানিক ও নাগরিক অধিকার কি সেভাবে পাচ্ছে? পাচ্ছে না। আমাদের দেশের সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হলো, সংবিধান আমাদের সমতা দিলেও পারিবারিক আইন পরিচালিত হবে ধর্ম দ্বারা। ইসলাম ধর্মে বলা হয়েছে, সুদ হারাম। কিন্তু সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংক সুদ খাচ্ছে। এটা তাদের কাছে বেআইনি নয়। আমাদের যে সিভিল আইনগুলো আছে সেগুলো ধর্মভিত্তিক নয়। ধর্মে আছে চুরি করলে হাত কেটে দেওয়ার কথা। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে কোটি কোটি টাকা লুট করে নিয়ে যাচ্ছে, টাকা পাচার হচ্ছে, সেগুলো নিয়ে কিছু হচ্ছে না। ক্রিমিনাল ও সিভিল আইনগুলো ধর্মভিত্তিক নয়। সেগুলো সবার জন্য সমান। যেটা সারাবিশ্বের সব জায়গায় গ্রহণ করা হয়। ব্যবসা-বাণিজ্য করতে হলে আন্তর্জাতিক আইন অনুসরণ করতে হবে। কিন্তু পরিবারে কেন একটা ধর্মভিত্তিক আইন মানতে হবে? কেন একটা অভিন্ন পারিবারিক আইন পাচ্ছি না?

নারী যে কোনো ধর্মেই জন্মগ্রহণ করুক না কেন, সেখানে দেখা যায় সমান উত্তরাধিকার পায় না। তালাকের ক্ষেত্রে বৈষম্য রয়ে গেছে। হিন্দু মেয়েরা সম্পত্তিও পায় না, তালাকও দিতে পারে না। অভিভাবকত্বের ক্ষেত্রেও বৈষম্য রয়েছে। সন্তানকে লালনপালন করে মা। কিন্তু অভিভাবক হচ্ছে বাবা, যে কোনো খোঁজখবর রাখছে না। যে স্ত্রী তার জীবনের ৪০ বছর দিয়েছে স্বামীকে, সে স্বামী আরেকটা বিয়ে করে স্ত্রীকে তালাক দিয়েছে। সে স্ত্রী আর কিছু পাবে না। সে নিজের ক্যারিয়ার গড়েনি। অর্থনৈতিকভাবে দাঁড়ায়নি। বিভিন্ন দেশের আইনে আছে নারীকে সম্পদের অর্ধেক, ভরণপোষণ দিতে হবে। এগুলো আবার ধর্মীয় আইনে নেই। আমাদের একটি বড় বাধা পারিবারিক ও ধর্মীয় আইন। এটিকে পরিবর্তন না করলে নারী সমজায়গায় যাবে না। পুরুষের মানসিকতার পরিবর্তন হবে না। 

অনেক গবেষণায় পড়েছি, ধর্মের ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ ভিন্ন ভিন্ন হয়। একই ধর্মের অনেক ভাগ আছে। অভিন্ন কোনো ধর্ম পাইনি। সব ধর্মে ভাগ আছে। যে যেই পরিবারে জন্মেছে, যে ধর্ম সে বিশ্বাস করেছে, সেটা সে গ্রহণ করেছে। কিন্তু এটা অন্যদের ওপর চাপিয়ে দিতে পারে না। যেহেতু সংবিধানে আছে বাংলাদেশ ধর্মনিরপেক্ষ– কে কোন ধর্ম পালন করবে, কোনটা করবে না, সেটা তার ব্যাপার। তাতে কারও কিছু বলার নেই। কেউ তার নিজস্ব ধর্ম ও মতামত অন্যের ওপর চাপিয়ে দিতে পারে না। এটি নারীর জন্য বড় বাধা।

আবার ধর্মের অপব্যবহার করে, নারীকে অধীনস্থ করে রাখা হচ্ছে। এটি তো বেআইনি হওয়া উচিত। যদি আমার চিন্তা বেআইনিভাবে অন্যকে আঘাত করে, তা কোনোভাবেই ঠিক নয়। নারী জাতিকে অহরহ বেআইনিভাবে আঘাত করা হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, ওয়াজ মাহফিলের বক্তৃতা, খুতবায় নারীকে আঘাত করা হচ্ছে। এগুলো নিয়ে কেউ উচ্চবাচ্য করে না। এসব নিয়ন্ত্রণ জরুরি। 

ধর্মের অপব্যবহার পুরুষের মানসিকতাকে আরও বেশি নারীবিদ্বেষী করে তুলছে, যার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে পুরুষতন্ত্র। কেউ বলে না, ব্যাংককে সুদ দেবে না। বলে না তোমার প্রতিবেশী যদি না খেয়ে থাকে আর তুমি খাও, তবে তোমার খাওয়া হারাম। ভালো দিকগুলো বলে না। তারা নিয়ে আসে উস্কানিমূলক বিষয়। সবচেয়ে বেশি উস্কানিমূলক বক্তব্য হয় নারীকে নিয়ে। এগুলো গোটা দেশকে পিছিয়ে রাখছে। অনেক নারী বিভিন্ন জায়গায় খুব সাফল্যের সঙ্গে কাজ করছে, কিন্তু এটি গোটা নারী জাতির কৃতিত্ব নয়। নারী জাতিকে পিছিয়ে রাখা হচ্ছে, তার ওপর নির্যাতন চালানো হচ্ছে, তাকে সম্মান করতে দেওয়া হচ্ছে না, তাকে মানুষ হিসেবে গণ্য করছে না। এসব জায়গায় পরিবর্তন জরুরি। পরিবর্তন সব ক্ষেত্রেই আনতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করতে হবে। 

ছোট্ট একটি উদাহরণ দেওয়া যাক। আমাদের মেয়েরা ফুটবল খেলে যখন দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে ভালো করেছে, তখন গ্রামগঞ্জ, প্রত্যন্ত অঞ্চলেও দেখেছি সবাই উৎসাহ দিচ্ছে। সরকার উৎসাহ দিচ্ছে। কিন্তু মেয়েরা শর্টস ও টি-শার্ট পরে খেলছে বলে কিছুসংখ্যক মানুষ তাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। যতক্ষণ পর্যন্ত আক্রান্ত না হয় এবং অন্য সংগঠনগুলো হইচই না করে ততক্ষণ পর্যন্ত পুলিশ এ ক্ষেত্রে তেমন ভূমিকা রাখে না। তার মানে প্রশাসনের মধ্যে ওই একই চিন্তা রয়ে গেছে। আইন হলেও তার প্রয়োগ হয় পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা থেকে। আমাদের আরেকটি নেতিবাচক দিক বাল্যবিয়ে। এটি বেশ প্রকট। আমরা যখন বাল্যবিয়ের শিকার মেয়েদের বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বলেছি তখন তারা জানায়, ‘আমরা ভয় পাই। মেয়েকে ধর্ষণ করলে বা কোনো বদনাম হলে মেয়ের বিয়ে হবে না। পরিবারের ওপর কলঙ্ক আসবে। তাই দ্রুত বিয়ে দিই।’

দোষ করছে আরেকজন অথচ দোষী হচ্ছে যার ওপর নির্যাতন করছে সে ও তার পরিবার। কেন? এখানে সমাজ ও রাষ্ট্র দায় এড়াতে পারে না। বাল্যবিয়ে রোধ করতে গেলে সমাজ বদলাতে হবে। চিন্তা বদলাতে হবে। সুশিক্ষিত মানুষ গড়ে তুলতে হবে। মোট কথা মানুষ হতে হবে। নয়তো কোনো কন্যাশিশু নিরাপদে থাকবে না। আমরা দেখেছি প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক দ্বারা শিশুরা নির্যাতিত। আমার কাছে এরকম এগারোটা মেয়ে এসে বলেছে, তারা একই শিক্ষক দ্বারা নির্যাতিত হয়েছে। কিন্তু বলার সাহস পায়নি। হইচই হওয়ার পর জোর করে টাকা-পয়সা দিয়ে আপসে আনা হচ্ছে। কারণ মামলা পরিচালনা করার প্রক্রিয়া জটিল। দিনমজুর বাবা-মায়ের পক্ষে প্রতিদিন আদালতে যাওয়া, উকিলের ফি জোগাড় করা সম্ভব না। সমাজ বলে আপস করে ফেলো। এগুলো হলো প্রতিবন্ধকতা। 

আরেকটি বড় প্রতিবন্ধকতা মজুরি বৈষম্য। একজন পুরুষ দিনমজুর একদিনে পাচ্ছে ৫০০ টাকা, নারী দিনমজুর পাচ্ছে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা। পুরুষ বুঝতে পারছে না, পুরুষতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনা পুরুষকে অমানুষ হতে শেখাচ্ছে। সময় এসেছে পুরুষকে বলার– তোমরা মানুষ হও। কেউ যদি মনে করে পুরুষের থেকে নারীকে আড়াল করার জন্য নারীকে ঢেকে রাখতে হবে, তাহলে বোঝা যায় পুরুষ জাতি হিসেবে তাদের নিজেদের ওপর কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। আর নারীকে তারা মানুষ হিসেবে দেখে না। তাদের দেখে পণ্য হিসেবে। আমার নিজের দেখা,  গ্রামগঞ্জ ও শহরে অনেক বোরকা পরা নারী নির্যাতিত হয়েছে। পুরুষ নারীর পোশাককেই শুধু হামলা করছে না, নারীকেও হামলা করছে। এটি পুরুষের জন্য খুব অপমানজনক। পুরুষ যখন এমন করে তখন সে মানুষ থাকছে না। তারপরও বলব বাংলাদেশ অনেক দিকেই এগিয়ে আছে। ভারতের কোনো কোনো রাজ্যে ভ্রূণ হত্যা অনেক বেশি ছিল। বিশেষ করে ভ্রূণ যদি মেয়ে হয় তাহলে যেভাবেই হোক গর্ভপাত করাতে বাধ্য করা হতো। কোনো রাজ্যে আবার ভ্রূণহত্যা ছিলই না। এখন কমলেও পাকিস্তান, নেপাল, ভারতে ভ্রূণহত্যা আছে। বাংলাদেশে এমনটা নেই। এটি একদিকে ইতিবাচক। 

আমাদের সমাজে প্রচলিত ধারণাটা এমন– নারী হলেই সে মমতাময়ী হবে আর পুরুষরা হিংস্র হবে। পুরুষকে শেখানো হয় তার খেলনা বন্দুক, সে মারধর করবে। এসব পুরুষতান্ত্রিক চিন্তা শুধু নারীকে নয়, পুরুষকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করছে। এগুলো বড় বাধা। এসব যদি পরিবর্তন করা না যায়, তাহলে কোনো কিছু ঠিক হবে না। চিন্তার জায়গাটা বদলাতে হবে। প্রতিটি মানুষকে নারীবান্ধব নয়, মূলত মানববান্ধব হতে হবে। সব মানুষকে সমানভাবে শ্রদ্ধা করতে শিখতে হবে। এটি শুধু নারী-পুরুষের শ্রদ্ধা না। শ্রেণিগত, জাতিগত, ধর্মগত শ্রদ্ধাবোধ থাকতে হবে। বিভাজন সৃষ্টি করলেই শ্রদ্ধার জায়গা কমে যায়। নারীদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস গড়ে তোলা দরকার– সে সমান পর্যায়ের, সে দেশের নাগরিক। পুরুষদের মধ্যেও এ ব্যাপারে কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। 

লেখক: সমন্বয়ক, নিজেরা করি

আরও পড়ুন

×